সংক্ষিপ্ত
অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে সেলিমপুর কেএমসি স্কুলে। প্রি প্রাইমারি থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ছটি ক্লাসে মোট চল্লিশ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাদের যিনি বাংলা পড়াচ্ছেন একই সঙ্গে তিনিই ইংরেজি পড়াচ্ছেন।
শিক্ষক একজনই। তবে একই সঙ্গে ছটি আলাদা বিষয় আলাদা ক্লাসে পড়াতে পারেন তিনি! শুনে অবাক হচ্ছেন তো! ভাবছেন, সে আবার কী। অবাক হবেন না। এমনই আজব ঘটনা ঘটে চলেছে খোদ কলকাতার একটি স্কুলে। যিনি বাংলা পড়াচ্ছেন ক্লাস টুতে, ধরে নিন তিনিই সেইসময় ক্লাস থ্রিতে অঙ্ক করাচ্ছেন, আবার ক্লাস ফাইভে তিনি সেই সময়ই ভূগোলের ক্লাস নিচ্ছেন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ঘটে চলেছে এই ঘটনা কলকাতার এই স্কুলে।
এরকম অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে সেলিমপুর কেএমসি স্কুলে। প্রি প্রাইমারি থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ছটি ক্লাসে মোট চল্লিশ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাদের যিনি বাংলা পড়াচ্ছেন একই সঙ্গে তিনিই ইংরেজি পড়াচ্ছেন। আবার সেই সময় অঙ্কও কষছেন তিনি। এই রকম ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাস, ভুগোল, ছবি আকা থেকে শুরু করে সবকিছুর তালিম দিচ্ছেন ওই একজন শিক্ষকই।
কিন্তু এভাবে কী সঠিক ভাবে লেখাপড়া করানো সম্ভব? শিক্ষক সুফল কুমার মণ্ডলও তা মনে করেন না। তিনি বলেন, "একই সঙ্গে ৬টি ক্লাসে ৬টি বিষয় পড়ানো কি সম্ভব? কখনওই নয়। পরিস্থিতির চাপে সেটা করতে হচ্ছে। কিন্তু এইভাবে হয় না। কিন্তু কী আর করা যাবে। এভাবেই চালাতে হচ্ছে।" শিক্ষক আরও একজন আছেন। তবে তিনি মাঝেমধ্যে স্কুলে আসেন। রোজ রোজ ক্লাস করান না। কেন? স্কুল সূত্রে খবর, মূলত সরকারি প্রকল্পের কাজেই তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়।
কীভাবে ম্যানেজ করছেন তিনি! শিক্ষক জানান স্কুলে উপস্থিতির হার মেরে কেটে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনেরই থাকে। আলাদা ক্লাস রুমে বসার জায়গা রয়েছে। কিন্তু সবাইকে আলাদা জায়গায় বসালে ক্লাস নিতে অসুবিধা হয়। তাই একই ক্লাসে সবাইকে পাশাপাশি বসিয়ে চলে ক্লাস।
এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, "একটা সময়ে এই স্কুলটা ভালই চলত। ধীরে ধীরে বিভিন্ন কারণে এখানে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা কমেছে। তারপর এখানে তাঁরাই নিজেদের ছেলেমেয়েদের পড়তে পাঠায় যাঁদের অন্যত্র পড়ানোর ক্ষমতা নেই। একমাত্র যে পরিবারে সবাইকে কাজে যেতে হয় কিন্তু ছেলেমেয়েদের দেখার কেউ নেই তাঁরাই ছেলেমেয়েদের স্কুলের হেফাজতে রেখে যায়।"
কলকাতা পুরসভা এই স্কুলের সমস্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) সন্দীপন সাহা জানিয়েছেন, "কাছাকাছি কয়েকটা স্কুলকে একসঙ্গে যুক্ত করিয়ে দেওয়ার চিন্তা চালাচ্ছে পুরসভা। এর ফলে একদিকে যেমন ছাত্রছাত্রী বাড়বে তেমনই শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়ানো সম্ভব হবে। আর যদি এটা করা যায় তাহলে শিক্ষার মানটাও বাড়ানো সম্ভব হবে।" সেলিমপুর এলাকার মূলত দরিদ্র মানুষের ছেলেমেয়াই এই স্কুলে পড়তে আসে। কিন্তু স্কুলে প্রয়োজন মতো শিক্ষক না থাকায় ক্ষুব্ধ অবিভাবক থেকে শুরু করে এলাকার বাসিন্দারা।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।