সংক্ষিপ্ত

২০২১ সালের ৪ মে তাঁর তাপস সাণ্ডিল্যের স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন । স্ত্রীর ইচ্ছে পুরণ করে বাড়িতে মৃত সিলিকন মূর্তি স্থাপন করলেন স্বামী। খরচ হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা

তাঁদের দাম্পত্য প্রেম অনেকটা রূপ কথার গল্পের মত। কারণ স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও স্ত্রীকে কাছে পেতে আস্ত একটা সিলিকন মূর্তি স্থাপন করলেন কৈখালির বাসিন্দা ৬৫ বছরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী তাপস সান্ডিল্য। কোভিড মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গের সঙ্গে তাপসবাবু তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রানীকে হারিয়েছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর ইচ্ছে পুরণের জন্য তিনি সিলিকন মূর্তি প্রতিস্থাপন করেন নিজের বাড়িতে। ৩০ কেজি ওজনের এই মূর্তি তৈরি করতে খরচ হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা।

বাড়ির মধ্যে ইন্দ্রানীর প্রিয় জায়গা ছিল সোফা কাম দোলনা। দিনের অনেকটা সময় সেখানেই কাটাতেন তিনি। আর তাঁর স্বামী সিলিকন মূর্তিটি ইনস্টল করেছেন ঠিক সেই স্থানেই। আর ইন্দ্রানী পছন্দের গয়নাগুলিও রয়েছে মূর্তির সজ্জায়। যা মৃত ইন্দ্রানীকে জীবন্ত করে তুলেছে। আর পরনে রয়েছে একটি অসম সিল্ক। যা তাঁর অত্যান্ত পছন্দের ছিল। ছেলের বিয়ের সময় এই শাড়িটি পরেছিলেন। সেই শাড়ি রয়েছে মূর্তির পরনে। প্রাণবন্ত এই মূর্তিটি তৈরি করেছেন সুবিমল দাস। এই মূর্তি তৈরি করতে ৬ মাসের ও বেশি সময় লেগেছিল। সান্ডিল্য দম্পতি ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিবেদান্তের সজীব মূর্তি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। সেই মতই ইন্দ্রানীর মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।

তাপস দাস একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছিলেন, 'আমরা বছর দশেক আগে মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে গিয়েছিলাম। সেই সময়ি এসি ভক্তিবেদান্তের মূর্তি দেখে অবাক হয়েছিলেন। সেই সময়ই ইন্দ্রানী তাঁর মনের কথা জানিয়েছিল।' তাঁরও এরকম একটি মূর্তি তৈরির ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু সে মারা যাওয়ার পরেই এই মূর্তি তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছন তাপস।

তাপস সান্ডিল্যের এই স্ত্রী-প্রেম দেখার পাশাপাশি ইন্দ্রানীর মূর্তি দেখার জন্য প্রতিবেশীরা ভিড় বাড়াচ্ছেন কৈখালির বাড়িতে। দূরদূরান্ত থেকেই ইন্দ্রানীর মূর্তি দেখার জন্য মানুষ ভিড় বাড়াচ্ছেন।

তাপস আরও জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ৪ মে তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন । তিনি জানিয়েছেন তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। সেই সময় তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই বিচ্ছেদের সময় তিনি কখনই ভুলবেন না বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রীর ইচ্ছে পুরণ করতে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর। আর সেই কারণে স্ত্রীর মৃত্যুর পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনেটে খোঁজ খবর শুরু করেন। সেই সময়ই একজনের সন্ধান পান যিনি তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পকে বাস্তব রূপ দিতে পারবেন। ২০২২ সালে ভাস্কর সুবিমল দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

শিল্পী সুবিমল দাস যাদুঘরের জন্য সিলিকন প্রতিলিপি তৈরি করেন। তাপস সান্ডিল্যের প্রস্তাব তাঁর কাছে ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। সুবিমল জানিয়েছিলেন, মূর্তি তৈরির জন্য প্রথমেই তাঁর প্রয়োজন ছিল ইন্দ্রানীর মুখের একটি ছবি। তারপর তিনি ইন্দ্রানী সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রথমে মাটির মূর্তি স্থাপন করেন। তারপর ফাইবারের ছাঁচ তৈরি করে সিলিকন ঢালাইয়ের ভিত্তি করেন।

অন্যদিকে তাপস জানিয়েছেন ইন্দ্রানীর সঙ্গে তাঁর প্রায় ৩৯ বছরের সম্পর্ক। তাই ইন্দ্রানীর মুখ তৈরির বিষয় তিনি যাবতীয় তথ্য সুবিমলকে দিয়েছিলেন। তিনি আরও জানিয়েন এই মূর্তির মুখই যে শুধু ইন্দ্রানীর মত তা নয়। ইন্দ্রানীর চেয়ারারও মিল হয়েছে। আর সেই কারণে তিনি যে দর্জি ইন্দ্রানীর জামাকাপড় তৈরি করত তাদের কাছ থেকে মাপ নিয়ে তা সুবিমলকে দিয়েছিলেন।

সুবিমল জানিয়েছেন মোমের মূর্তির থেকে সিলিকনের মূর্তি ঠিক রাখা অনেক সোজা। ইন্দ্রানীর সিলিকন মূর্তিটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা। ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে এ জাতীয় মূর্তি তৈরি করা সম্ভব। কালার পিগমেন্টেশন প্রক্রিয়া, চুলের কলম এবং চোখের বসানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বলেও সুবিমল জানিয়েছেন। চুলের গ্রাফটিং সম্পূর্ণ হতে প্রায় ৩০ দিন লেগেছিল এবং তাপস বাবুও মূর্তিটিকে প্রাণবন্ত করার জন্য কয়েকটি বালি রেখা চেয়েছিলেন স্ত্রীর মুখে- তাই তৈরি করা হয়েছে। তাপস সাণ্ডিল্য জানিয়েছে এটি তাঁর স্ত্রীর জীবন্ত রূপ।