সংক্ষিপ্ত

শুক্রবার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মনোজের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। বিষয়টি জানতে পেরে খবর দেওয়া হয় পতিরাম থানার পুলিশকে। পরে পতিরাম থানার পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

দু'বছরে কম করে ১৫ টি মেয়ে বিয়ের (Marriage) জন্য দেখেছিলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম দেখাতেই বিয়ে সম্বন্ধ ভেঙে দিয়েছিল পাত্রী পক্ষ (Bride Family)। দুই একটা মেয়ের পরিবার ছেলেকে দেখে পছন্দ করলেও শেষ পর্যন্ত ছেলে বিশেষভাবে সক্ষম (Handicap) হওয়ায় বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে যায়। একাধিক মেয়ের পরিবার বিয়ে না করায় ছেলে মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল যে বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার জন্যই হয়তো তাঁর বিয়ে হচ্ছে না। আর এই অভিমানেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী (Commited Suicide) বিশেষভাবে সক্ষম এক যুবক৷ মৃতের নাম মনোজ ঘোষ (৩০)। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার (South Dinajpur District) কুমারগঞ্জ ব্লকের বটুন গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণগর এলাকায়।

শুক্রবার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মনোজের মৃতদেহ (Dead Body) উদ্ধার হয়। বিষয়টি জানতে পেরে খবর দেওয়া হয় পতিরাম থানার পুলিশকে। পরে পতিরাম থানার পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠায়। পরিবারের প্রাথমিক অনুমান বিয়ে না হওয়ার জন্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ওই যুবক। সেই কারণেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। এদিকে কী কারণে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আরও পড়ুন- 'কয়েক কোটি কর্মসংস্থান তৈরি হবে রাজ্যে', বাজেটে বড় ঘোষণা মমতার

জানা গিয়েছে, ছোট থেকেই ওই যুবক বিশেষভাবে সক্ষম। তাঁর ডান হাতে সমস্যা ছিল। কিন্তু, সেই সমস্যাকে দূর করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করেই মনোজ তাঁর বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে হাত লাগান। ভাই, বাবা ও মাকে নিয়ে মনোজের সংসার ভালোই কাটছিল। গত বছর হঠাৎই ভাই আত্মঘাতী হয়। এদিকে তাঁরও বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, বিয়ে আর কিছুতেই হচ্ছে না। প্রায় বছর দুয়েক আগে থেকেই মনোজ বিয়ে করবে বলে পরিবারকে জানিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে তাঁর জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করেছিল পরিবার। দু'বছরে কম করে ১৫জন মেয়ে দেখেছিলেন তাঁরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়ের পরিবার সম্বন্ধ ভেঙে দিয়েছিল। এক দুজন পছন্দ করলেও ছেলে বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার জন্য সেই বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে দেয়।

আরও পড়ুন- বাজেটে সুখবর, বৈদ্যুতিক ও সিএনজি গাড়ির জন্য বড় ছাড় ঘোষণা রাজ্যের

এদিকে দু'বছর ধরে পাত্রী দেখার পরও কিছুতেই মনোজের বিয়ে হচ্ছিল না। বিয়ে না হওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল তিনি। বাড়িতে সারাক্ষণ শুনতেন যে তাঁর হয়তো আর বিয়ে হবে না। বাবা মা না থাকলে তাঁকে কে দেখবে এটাই শুধু ভাবছিলেন। পরিবারের অনুমান, অবশেষে শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। এদিকে আত্মঘাতী হওয়ার আগে মনোজ ব্যাগে করে তুলসীগাছ, ধূপকাঠি, গীতা সহ মৃতদেহ সৎকারে যা যা প্রয়োজন সব ভরে রেখে গিয়েছিলেন। যাতে বৃদ্ধ বাবা মাকে মৃতদেহ সৎকার করা নিয়ে হয়রানির মধ্যে পড়তে না হয়। 

এমনকী, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে নিজের ঘরে পাশের বালিশের উপর লেপ চাপা দিয়েছিলেন যাতে কেউ বুঝতে না পারেন যে তিনি ঘরে নেই। এরপর সকালে বাবা ডাকাডাকি করলেও সাড়া দিচ্ছিলেন না মনোজ। পড়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার।

আরও পড়ুন- সোমবারই হতে পারে পুরসভার চেয়ারম্যানদের নাম ঘোষণা, 'ক্রসচেক' করছেন মমতা

এবিষয়ে বাবা মণি ঘোষ বলেন, "ছেলে ছোট থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম। আমরা না থাকলে তাকে কে দেখবে এই জন্য বিয়ে করতে চাইছিল। ছেলের বিয়ের জন্য দু'বছরে ১৫ টি পাত্রী দেখেছি। কিন্তু বিয়ের জন্য এগিয়ে আসেনি পাত্রী পক্ষ৷ এত মেয়ে দেখছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না, তাহলে কী আর বিয়ে হবে না, এই ভাবত সারাক্ষণ। যার ফলে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে এবং নিজের জীবন শেষ করে দেয়।" দুই ছেলেই আত্মঘাতী হয়েছেন। বুড়ো বয়সে অবলম্বন বলতে আর কেউই রইল না। এখন কাকে নিয়ে বাঁচবেন, এই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মণি ঘোষ। 

অন্যদিকে বিষয়টি জানতে পেরেই ঘটনাস্থলে যায় পতিরাম থানার পুলিশ। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তা পাঠানো হয় বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।