Cybercrime: সাইবার অপরাধীদের নতুন ফাঁদ। গ্যাসের টাকা দেওয়ার নাম করে ফোন আসবে। অনলাইনেই পেমেন্ট করতে বলবে। তাতেই হতে পারেন সর্বশন্ত।
সাইবার অপরাধের ফাঁদ পাতা নেট দুনিয়ায়। কখন কীভাবে মানুষকে ঠকিয়ে বা একটু অসাবধানতায় টাকা পয়সা লুঠ করে নেওয়া যায় তারই ফন্দিফিকির খোঁজে সাইবার অপরাধীরা। যাদের কেউ কেউ পুলিশের ফাঁদে পড়ে, কেউ আবার মানুষ ঠকিয়েই কোটিপতি। সাইবার ক্রাইম নিয়ে একাধিক খবর হয়েছে। দীর্ঘ দিন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সাইবার ক্রাইম নিয়ে একাধিক কাজও করেছি। কিন্তু আজ নিজেই পড়তে চলেছিলাম সাইবার অপরাধীদের পাতা ফাঁদে। গ্যাসের টাকা দেওয়ার নাম করে পাতা হয়েছিল সাইবার ফাঁদ।

শুরুটা হয়েছিল অবশ্য আমার বাবার থেকে। তারপর কল আসে আমার কাছে। গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য টাকা দেওয়া হবে। সেই টাকা নাকি আবার আমাদের 'প্রাপ্য টাকা'। প্রথমে ফোন আসে '+917596915074' নম্বর থেকে। একটি ছেলে ফোন করে। ফোনটি আসে আমার বাবার কাছে। বলা হয়, গ্যাসের টাকা দেওয়া হবে অনলাইনে। বাবা প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি। তারপরই আসে দ্বিতীয় ফোন। তখনও একই কথা বলা হয়। বাবাকে বলা হয় অনলাইনে পেমেন্ট করা হবে। কিন্তু বাবা জানিয়ে দিয়েছিল তার অনলাইন পেমেন্টের কোনও ব্যবস্থা নেই। তারপর উল্টোদিক থেকে বলা হয় পরিবারের যে কোনও সদস্যকেই পেমেন্ট করা হবে। তাদের নম্বর দিলেই হবে। বাবা সেই সময় চিকিৎসকের কাছে ছিলেন আমার অসুস্থ কাকাকে নিয়ে। প্রবল ব্যস্ত থাকায় আমাকে পুরো বিষয়টি দেখতে বলেন। ফোনেই কথাবার্তা হয়েছিল।

তারপর সাইবার অপরাধীদের শিকার আমি। হ্যাঁ, আমি। আমাকে ফোন করে বলা হয় গ্যাসের টাকা দেওয়া হবে। প্রাপ্য টাকা। এমনভাবে কথা বলা হয় শুনে মনে হয় মোদী সরকার আমাদের টাকা দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। যাইহোক, আমাকে প্রথমেই বলা হয়, ওরা হোয়াটঅ্যাপ কল করবে। তারপরই টাকা দেওয়া হবে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, হোয়াটসঅ্য়াপ কল কেন? উত্তরে বলেছিল, 'সরকারি ব্যাপার, তথ্য রাখার জন্যই হোয়াটসঅ্যাপ কল।' তারপরই হোয়াটসঅ্যাপ কল আসে। বলা হয় স্ক্রিন শেয়ার করতে। কিন্তু প্রথমে তাতে রাজি হয়নি। তারপরই ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেল... 'আপনার বাবা তাঁর প্রাপ্য টাকা পেতেন। আপনি একটু সহযোগিতা করুন।' তারপরই অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম শেয়ার করতে বলা হয়। কিছুটা সন্দেহ নিয়েই সেটির স্ক্রিন শেয়ার করি। তারপরই অ্যামাজন পের একটি লিঙ্ক আমার গুগল পে-তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে স্ক্রিন শেয়ার অবস্থাতেই অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের পাসওয়ার্ড দিতে বলা হয়। কিন্তু তাতে আমি রাজি হয়নি।
মরিয়া সাইবার অপরাধীরা! খান্ত দিতে নারাজ। শুরু হয় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল। কীকী বলা হয়েছিল তা কোট আনকোট লিখছি- 'আপনার ভাইয়ের মত। এইটুকু বিশ্বাস করুন। স্ক্রিন শেয়ার করলেও আমরা আপনার অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম দেখতে পারছি না। এটা পুরো সরকারি ব্যবস্থা। আপনার একটি টাকাও মার যাবে না। আপনি একবার পাসওয়ার্ড দিয়েই দেখুন। কোনও সমস্যা হবে না। আপনার বাবা তাঁর প্রাপ্য টাকা পেয়ে যাবেন। আপনি কেন সেটা চাইছেন না।' আমি স্পষ্ট করে জানিয়েছিলাম, 'আমি এইভাবে স্ক্রিন শেয়ার অবস্থায় পাসওয়ার্ড দেব না।' পাল্টা বলা হয়, 'কোনও সমস্য হবে না। সরকার আপনার টাকা নেবে না। টাকা দিচ্ছে।' এই কথা শোনার পরই আমি ফোন কাটতে বলি। কিন্তু নাছোড় সাইবার অপরাধীরা তখনও চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু বাধ্য হয়েই আমি ফোন কেটে দিয়েছিলাম।
বাবা পুরো বিষয়টাই থানায় জানিয়েছে। তারা কী কী ব্যবস্থা নেয় এখন সেটাই দেখার।


