সংক্ষিপ্ত
সরাসরি তৃণমূল নেতার ছেলেকে সোনা পাচারের ‘কিংপিন’ হিসেবে উল্লেখ করা প্রসঙ্গে শাসক শিবির কীভাবে ড্যামেজ কনট্রোল করতে পারে, সেই দিকেই নজর বিরোধী পক্ষের।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য, এলাকায় দাপুটে তৃণমূল নেতা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তাঁর। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে সোনা পাচার কাণ্ডে আচমকাই জড়িয়ে গেল তাঁর নাম। রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তরের জালে ধরা পড়লেন শঙ্করের ছেলে শুভ আঢ্য।
গত অক্টোবর মাসে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে দিল্লি থেকে আগত রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর পরিমাণ সোনা। সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করতেই বেরিয়ে পড়ে শুভ আঢ্যর নাম। ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে এই তৃণমূল নেতার ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়েছে ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স। শুধু গ্রেফতার করাই নয়, সোনা পাচারের ‘কিংপিন’ হিসেবে উল্লেখও করা হয়েছে শুভকে। তবে, শুধুমাত্র শুভ আঢ্য নন, তাঁর সঙ্গে থাকা আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে, এই দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম অমিত ঘোষ। বৃহস্পতিবারেই দুই ধৃতকে আদালতে পেশ করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্তের জন্য দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, এই কারণ দেখিয়ে দুই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
২০২২-এর অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে দিল্লি যাওয়ার উদ্দেশ্যে শিয়ালদহ স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল রাজধানী এক্সপ্রেস। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এই ট্রেনেই তল্লাশি শুরু করেন গোয়েন্দারা। তখনই উদ্ধার হয় ২৬টা সোনার বিস্কুট, ঘটনায় ২জনকে গ্রেফতার করেছিল ডিআরআই। সেই ২ ধৃতের নাম ছিল অনুপম মিত্র এবং অলীক মণ্ডল। ২ ধৃতকে তখন থেকেই ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে থাকে। এই জেরার মধ্যেই বেরিয়ে আসে অমিত ঘোষের নাম। তদন্তের স্বার্থে এরপর এই অমিতকে তলব করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার সকালে অমিত ঘোষ ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স-এর অফিসে হাজির হন। এদিন তাঁর সঙ্গেই ছিলেন বনগাঁর তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্যর ছেলে শুভ আঢ্য। অমিতকে জেরা করে এবং বিশেষ কিছু তথ্যে গরমিল বুঝতে পেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই অমিত এবং শুভ, দুজনকেই গ্রেফতার করে নেওয়া হয়।
তবে, শুধুমাত্র অক্টোবর মাসের সোনা উদ্ধারের ঘটনাই নয়, জুলাই মাসেও প্রচুর সোনা উদ্ধার করা হয়েছিল, যে ঘটনার সঙ্গে অমিত ঘোষের নাম জড়িয়েছিল। ওই সময়ে সোনা উদ্ধার হওয়ার কাণ্ডের তদন্তে অমিতকে তলব করা হলেও একাধিকবার তিনি হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। দ্বিতীয় পাচারের মামলায় তিনি হাজিরা দিলেও ট্রেনের ২ ধৃত, অনুপম মিত্র এবং অলীক মণ্ডল, কাউকেই তিনি চেনেন না বলেই দাবি করছিলেন গোয়েন্দাদের কাছে। অথচ, তাঁর মোবাইলের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, তাঁর মোবাইলের মধ্যেই রয়েছে অনুপম আর অলীকের দিল্লি যাওয়ার টিকিট। স্বাভাবিকভাবেই দুই পাচারকারীর সঙ্গে তাঁর স্পষ্ট যোগসূত্র প্রকাশ্যে আসে।
বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর ছেলে শুভ। তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য বর্তমানে বনগাঁ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান। সোনা পাচারকাণ্ডে ধৃত অমিত ঘোষ পারিবারিক সম্পর্কে ওই তৃণমূল নেতার শ্যালক। রাজ্যে বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে যখন তৃণমূল কংগ্রেসের নাম জড়িয়ে গিয়ে অত্যন্ত বিব্রত শাসক শিবির, তখন রাজনীতির ময়দানে সরগরম পরিস্থিতিতে আবার সোনা পাচার কাণ্ডে জড়িয়ে গেল শাসক পক্ষের নাম। এবার সরাসরি তৃণমূল নেতার ছেলেকে ‘কিংপিন’ হিসেবে উল্লেখ করা প্রসঙ্গে শাসক শিবির কীভাবে ড্যামেজ কনট্রোল করতে পারে, সেই দিকেই নজর বিরোধী পক্ষের।
আরও পড়ুন-
বন্যা এবং আর্থিক সংকট, দুই দানবের চাপে পড়েও ভারতীয় বিমানঘাঁটি লাগোয়া বিমানবন্দর তৈরি অব্যাহতই রেখেছে পাকিস্তান
পাহাড়ের রাজনীতিতে দুর্বল হল হামরো পার্টি, দার্জিলিং পুরসভা চলে গেল গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার হাতে
জোকা-তারাতলায় মেট্রো প্রস্তুতি চূড়ান্ত, ডিসেম্বরের কত তারিখে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য খোলা হবে পার্পেল লাইন?