- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- পাহাড়ে বৃষ্টিতে বানভাসি ডুয়ার্স, জলপাইগুড়িতে ঘরবাড়ি চাষের জমি ভাসছে তিস্তার জলে
পাহাড়ে বৃষ্টিতে বানভাসি ডুয়ার্স, জলপাইগুড়িতে ঘরবাড়ি চাষের জমি ভাসছে তিস্তার জলে
দার্জিলিং-সহ পাহাড়ে রাতভর প্রবল বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত ডুয়ার্স। তিস্তার জল বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি জলপাইগুড়িতে। নাগরাকাটা ও গয়েরকাটায় তিস্তার জল ডুবিয়ে দিল ঘরবাড়ি আর চাষের জমি। পুজোর পরই বিষাদের সুর জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায়।

বন্যা পরিস্থিতি নাগরাকাটায়
পাহাড়ে রাতভর লাগাতার বৃষ্টির জেরে মালবাজার মহকুমার নাগরাকাটা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা একাধিক নদীর জলে ভাসছে। অপ্রত্যাশিত জলস্ফীতির কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে চাষের জমি পর্যন্ত জলের তলায় চলে গেছে। তিস্তা, মাল নদী-সহ অন্যান্য পাহাড়ি নদীগুলির জলস্তর বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে বইছে, যার ফলস্বরূপ এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতি
মূলত হিমালয়ের পাদদেশ ও পাহাড় সংলগ্ন অঞ্চলে অতিবৃষ্টির ফলেই নদীর জল হঠাৎ বেড়ে যায়। এই ধরনের আকস্মিক জলস্ফীতি বা হড়পা বান-এর মতো পরিস্থিতিই মালবাজার মহকুমায় বন্যার মূল কারণ। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারাই জানিয়েছে। নাগরাকাটা ব্লকের সুখানি, আংরাভাসা বা মান্তাধারী গ্রামের বহু কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা আংশিক ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষের জমিও। কয়েক হাজার বিঘা চাষের জমি এখন জলের তলায়। মূলত ধান ও সবজি চাষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। পুজোর মুখে এই ক্ষয়ক্ষতি স্থানীয় কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
বন্যার কারণে বেশ কিছু এলাকার রাস্তা ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশ কিছু গ্রামের সঙ্গে মূল সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কোথাও কোথায় জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে বইছে নদীর জল। সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলাশাসকের দফতর থেকে শুরু করে মহকুমা প্রশাসন পর্যন্ত সকলে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।
উদ্ধার অভিযান
বিপর্যয়ের খবর পাওয়া মাত্রই প্রশাসন, পুলিশ, এনডিআরএফ (NDRF)/এসডিআরএফ (SDRF) এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একযোগে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। জলবন্দী পরিবারগুলিকে নিরাপদে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবির-এ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দুর্গতদের মধ্যে শুকনো খাবার, পানীয় জল ও ত্রিপল-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
নদীর উপর নজরদারি
সেচ দপ্তরকে নদীর বাঁধ ও জলস্তরের উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী বর্ষণের পূর্বাভাস থাকলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসেব করে দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। তবে আবহাওয়া দপ্তর থেকে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় মালবাজার মহকুমা-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও চরম সতর্কতা জারি রয়েছে।
বিপর্যস্ত গয়েরকাটা
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়েছে গয়েরকাটা সহ জলপাইগুড়ি জেলার একাধিক এলাকা। শনিবার সকাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টির জেরে বানারহাট ব্লকের সাঁকোয়াঝড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি বাড়ি জলের তলায় চলে গেছে। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে অ্যাংরা ভাষা নদী। জলের তলায় গয়েরকাটা, বানারহাট রেলগেট, বাজার, দুরামারি ও চানাডিপার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে বারবার সতর্কবার্তা দেওয়া হলেও বাস্তবে প্রশাসনের দেখা মেলেনি। গয়েরকাটার বহু মানুষ এখনো জলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

