সংক্ষিপ্ত

কোনও RPF কর্মী নিরাপত্তা দিচ্ছিলেন না বলে জানা গেছে। উপস্থিত সহযাত্রীরাও বৃহন্নলাদের আচরণে ভয় পেয়ে কোনও প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এই গোটা বিষয়টি টুইট করে ভারতীয় রেলমন্ত্রক এবং স্বয়ং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে অবগত করেছেন নিগৃহীত যুবক। 

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মধ্যে থাকা সেই অন্যতম উন্নত রাজ্য, যে রাজ্যে কর্ণাটক মহারাষ্ট্রের মতোই সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারেন রূপান্তরকামী বা বৃহন্নলারা। এই রাজ্যেই রূপান্তরকামীদের মধ্যে থেকে অধ্যাপনার মতো সম্মাননীয় পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী অধ্যক্ষ মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার দ্বারা আয়োজিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও এবছর সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন হুগলি জেলার রূপান্তরকামী পরীক্ষার্থী স্মরণ্যা ঘোষ। রূপান্তরকামীদের দাবি বা প্রতিবাদে প্রায়শই মুখরিত হয়ে থাকে শহর কলকাতা। কিন্তু, এই রাজ্যেই টাকা চেয়ে বিভিন্ন যানবাহনে বৃহন্নলাদের জুলমবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজ্যের মানুষ। সেই রকমই একটি ঘটনায় এবার স্বয়ং রেলমন্ত্রীকে টুইট করলেন এক যাত্রী।

শনিবার সকালে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে দিঘাগামী ০২৮৪৭ স্পেশাল ট্রেনে ওঠেন কলকাতার ৩ জন যুবক। ট্রেন ছাড়ার মাত্র ৪০ মিনিট পর তাঁদের কামরায় আসেন দু’জন বৃহন্নলা। তাঁরা ওই ভিড় কামরায় থাকা সমস্ত যাত্রীদের কাছ থেকেই টাকা চাইছিলেন এবং তখনই অভিযোগকারী যুবকের বন্ধুর থেকে একজন টাকা দাবি করেন। অভিযোগ, খুচরো টাকা না থাকায় যুবকের বন্ধুটি তখন ১০০ টাকার নোট দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৮০ টাকা ফেরত চান। কিন্তু, ওই বৃহন্নলা তাঁকে মাত্র ৫০ টাকা ফেরত দেবেন বলে জানিয়ে দেন। ওই যুবক তাঁকে ৭০ টাকা ফেরত দিতে বললে, তিনি ৭০ টাকাই ফেরত দেন কিন্তু, এর পরিবর্তে ওই যুবকের সঙ্গে থাকা আরও দুই যুবকের থেকে টাকা দাবি করেন।

যুবকের ২ জন সঙ্গী জানিয়ে দেন যে, তাঁরা সকলে একসঙ্গেই আছেন এবং তাঁরা ইতিমধ্যেই টাকা দিয়েছেন। এই কথা বলামাত্র টাকা দেওয়া যুবকের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে কামরায় থাকা সমস্ত যাত্রীদের সামনে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন ওই দুজন বৃহন্নলা, এর সাথে সাথে দুজন সঙ্গীকে মৌখিকভাবে চূড়ান্ত উত্যক্ত করতে থাকেন তাঁরা। এখানেই শেষ নয়, যুবকদের পরিবারের সদস্য, এমনকি, বাবা-মায়ের প্রসঙ্গ তুলেও তাঁরা গালিগালাজ করতে থাকেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার সময় ওই ভিড়াক্কার কামরাটিতে কোনও RPF কর্মী নিরাপত্তা দিচ্ছিলেন না বলে জানা গেছে। উপস্থিত সহযাত্রীরাও বৃহন্নলাদের আচরণে ভয় পেয়ে কোনও প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এই গোটা বিষয়টি টুইট করে ভারতীয় রেলমন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে (Ashwini Vaishnaw) অবগত করেছেন নিগৃহীত যুবক।

এই ঘটনাই ফের প্রশ্ন তুলে দিল রূপান্তরকামীদের অধিকার এবং দাবিদাওয়া নিয়ে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন যে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা যদি ভোটাধিকার পেয়ে থাকেন, তাঁরা যদি শিক্ষায় এবং চাকরিতে আবেদন জানানোর জন্য সমানভাবে দক্ষ হয়ে থাকেন, তাঁরা যদি শিল্পকলা এবং কাজের মাধ্যমে এই সমাজের একেকটি আইকন হয়ে ওঠেন, এই দেশে তাঁরা যদি সসম্মানে সাধারণ নাগরিক জীবন যাপন করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, তাহলে দিনের পর দিন টাকা চেয়ে হাত পেতে এই জুলুমবাজি তাঁরা কবে বন্ধ করবেন?

 

 

আরও পড়ুন-

কীভাবে ঘটল করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা? একসাথে ৩টি ট্রেনের ধাক্কা লাগা নিয়ে উঠছে বড় প্রশ্ন
বিমানে ওঠার আগে এবার যাত্রীদের শরীরের ওজনও মাপা হবে, নিয়ম চালু করল এয়ার নিউজিল্যান্ড সংস্থা
Coromandel Express: দুমড়ে যাওয়া কামরা থেকে ঝুলছে কাটা হাত-পা, মৃতদেহের স্তূপের মধ্যে প্রিয়জনকে খুঁজছেন স্বজনহারা মানুষ