হঠাৎই থমকে গিয়েছিল নবম শ্রেণির ছাত্রের জীবন। পায়ের যন্ত্রণায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হাঁটাচলা। কোনও মতেই ধরা পড়ছিল না আসল রোগ। শেষে ধরা পড়ল ক্যানসার। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসকেরা বলেছিলেন পা বাদ যাবে।
হঠাৎই থমকে গিয়েছিল নবম শ্রেণির ছাত্রের জীবন। পায়ের যন্ত্রণায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হাঁটাচলা। ক্রমশ ফুলে যাচ্ছিল গোড়ালির কিছুটা উপরের অংশ। কোনও মতেই ধরা পড়ছিল না আসল রোগ। শেষে ধরা পড়ল ক্যানসার। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসকেরা বলেছিলেন পা বাদ যাবে। সেই ক্যানসার ছড়িয়েছে পায়ের হাড়ে। তারপর ১১ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার। এতেই শেষ নয়, টানা ১ বছর থাকতে হয়েছিল বিছানায়। নিজে পায়ে হেঁটে বাথরুম পর্যন্ত যাওয়া মুশকিলের ছিল। কিন্তু সেই সব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে রেখে নিজে পায়ে হেঁটেই মাধ্যমিক দিল বাঁকুড়ার ওন্দা গ্রামের ছেলেটা।
শুধু কি তাই? পাশ করে গেল চোখের নিমেষে। ঝুলিতে নম্বর আকাশ ছোঁয়া না হলেও। আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষায় আকাশ ছোঁয়া নম্বর পেয়ে গেল অন্তরীপ সরখেল।
বাঁকুড়া ওন্দা হাইস্কুলের ছাত্র অন্তরীপ। আগাগোড়াই পড়াশুনায় মোটামুটি। ইচ্ছে ছিল ক্রিকেটার হবে। নবম শ্রেণির পর থেকে হঠাৎই থমকে গিয়েছিল সব স্বপ্ন। কিন্তু কোথাও যেন জিতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল অন্তরীপের। প্রাণপণে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল মৃত্যুর সঙ্গে। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন পা বাদ যাবে, কিন্তু অন্তরীপ মানতে চায়নি। শেষে ওর আত্মবিশ্বাসের কাছে যেন হার মেনে গিয়েছে বড় বড় প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা। এক বছরের মধ্যেই নিজের পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যায় পরীক্ষাকেন্দ্রে। পড়াশুনা করার সময় পায়নি খুব একটা। বেশিরভাগ সময়টাতেই হাসপাতালে বা চিকিৎসার মধ্যে কাটাতে হয়েছে। নিজের গ্রাম ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে কলকাতায়, কারণ ওখানেই চলছে ক্যানসারের চিকিৎসা। তাই পুরো সময়টাতেই বাড়িতে বসে পড়াশুনো করতে হয়েছে। যাওয়ার উপায় হয়নি টিউশনেও। ক্লাস করা হয়নি বহুদিন।
কেমো থেরাপির জন্য দুর্বলতাও ছিল প্রচুর। পড়তে বসলেও শত্রু হয়ে দাঁড়াতো কেমো থেরাপির পরবর্তী শারীরিক সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘুমে চোখ ঢলে আসত তার। কিন্তু তারপরেও থেমে থাকেনি এই ছাত্র। যতটুকু পেরেছে পড়াশুনো করেছে। তবে অন্তরীপের এই সাফল্যে স্কুলের ভূমিকাও কম ছিল না। ওর চিকিৎসা থেকে পড়াশুনো সবকিছুতেই ভীষণ সাহায্য করেছে ওন্দা হাইস্কুলের শিক্ষকেরা।
যে যখন পেরেছেন অন্তরীপকে নোটস পাঠিয়েছেন। এমনকী অনলাইনে ক্লাসও করানো হয়েছে নিয়ম করে। পরীক্ষার প্রজেক্টে সাহায্য করেছেন স্কুলের সমস্ত শিক্ষকেরা। তবে এই যুদ্ধ জয়ে আরও যে দু'জন নিজের সমস্ত কিছু দিয়ে পাশে ছিল তাঁরা হলেন অন্তরীপের মা ঋত্ত্বিকা সরখেল ও বাবা অনিমেষ সরখেল।
একসময় শুনেছিলেন ছেলের একটা পায়ের আঙুলও নড়বে না । মুহূর্তে আকাশ ভেঙে পড়েছিল তাঁদের মাথার উপর। কিন্তু তাঁরা জানতেন না মাত্র ২টো বছর পরে ছেলে শুধু মাধ্যমিকে নয়, জীবন যুদ্ধেও জয়ী হয়ে যাবে। থেমে থাকার জন্য জন্ম হয়নি অন্তরীপের বরং ডানা মেলে আকাশে উড়তে জন্মেছে সে। ও যে হাজার হাজার মানুষের অনুপ্রেরণা.....জীবনের পরীক্ষায় ১০০তে ১১০ পেয়ে গিয়েছে ওন্দার অন্তরীপ সরখেল।

