সংক্ষিপ্ত

শ্যামনগর কেস- এই শুনলেই যেন রেগে তাড়া করার উপক্রম করছেন অধিকাংশ শহরবাসী। কারণ, বিগত কয়েকদিন ধরে যেভাবে শ্যামনগর নামটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে তাতে এই শহরের কদর যতটা না বেড়েছে তার থেকে দুর্নামের মাত্রা অনেক।

 

একই বিছানায় স্ত্রী ও শালীর সঙ্গে শারীরিক মিলনে স্বামী। কখনও স্বামীর সঙ্গে বোনের শারীরিক মিলনের ভিডিও তুলছেন স্ত্রী, আবার কখনও দিদি-জামাইবাবুর শারীরিক মিলনের ভিডিও করছেন খোদ শালী। এভাবেই এক থ্রি-সাম সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিন যুবক-যুবতী। যারা সম্পর্কের বাঁধনে স্বামী-স্ত্রী ও শালী। শ্যামনগরের বাসিন্দা বলে এই তিন যুগলকে দাবি করা হচ্ছে। যদিও এদের সঠিক পরিচয় এখনও সামনে আসেনি। নেটিজেনরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করে এই থ্রি-সাম ভিডিও নিয়ে কথা বলছে। যদিও, এই প্রোফাইলের সঙ্গে সত্যি সত্যি এই ভিডিও-র কোনও যোগ আছে কি না তা স্পষ্ট নয়।

শ্যামনগর পুলিশ যে এই ভিডিও নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত কোনও মামলা করেছে তাও সামনে আসেনি। কিন্তু, বিগত কয়েক দিন ধরে রীতিমতো সুপার ভাইরাল হয়ে গিয়েছে শ্যামনগর কেস শব্দবন্ধটি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে গুগল ট্রেন্ডেও ঘুরে বেড়াচ্ছে শ্যামনগর কেস। দিন দুই আগেও স্পষ্টভাবে কারওই ধারনা ছিল না যে শ্যামনগর কেস আসলে কি। কেউ কেউ আবার এর সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিকেও জুড়ে দিয়েছিলেন। কেউ আবার এমন ছবিও শেয়ার করেন যেখানে দেখা যায় শ্যামনগর স্টেশনের বোর্ডে শ্যামনগর নাম কেটে অনুকূল ঠাকুর স্টেশন করা রয়েছে। শেষমেশ দিন দুই আগে থেকে একটু একটু করে স্পষ্ট হয় আসলে শ্যামনগর কেসের অর্থ কি!

জানা যায় শ্যামনগরের বাসিন্দা এমন কোনও ব্যক্তি গোপন মুহূর্তে একই সঙ্গে স্ত্রী ও শালীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়েছিলেন সেই ভিডিও কোনওভাবে বাইরে বেরিয়ে পড়়েছে। এর সঙ্গে এও জানা যায় যে এই ভিডিও নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লোক ব্যবসাও শুরু করে দিয়েছে। অর্থের বিনিময়ে অনেকেই এই ভিডিও নিজস্ব মেসেঞ্জার অ্যাকাউন্টে নেন বলেও অভিযোগ করেছেন কিছু নেটিজেন।

কীভাবে কারও ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ পেল তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে আবার এই খবর সামনে আসতেই অশ্লীল ভিডিও প্রকাশ হওয়া নিয়ে এর আগে কি কি ধরনের ঘটনা ঘটেছে তার বিবরণও তুলে ধরতে থাকেন। এই ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাদ পড়েনি বাংলার একাধিক মিডিয়াও। তারাও ফলাও করে এই নিয়ে বেশ রসালো গল্প তৈরি করতে থাকে।

শ্যামনগর কেস নিয়ে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিং চলছে তার বিরোধিতা করেছেন অসংখ্য স্থানীয় বাসিন্দা। বাংলার ইতিহাসে শ্যামনগর এক বর্ধিষ্ণু এলাকা বলেই পরিচিত। এর সঙ্গে বহু বাংলার মণিষী নামও জড়িয়ে আছে। ব্যক্তিগত জীবনের একটা পর্দা সব সময়ই থাকা উচিত। কেন তা এভাবে বাইরে বেরিয়ে আসবে তা নিয়ে মানুষের ভাবা দরকারও বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন।

শ্যামনগরের বহু মানুষের মতে এইখানে স্থানীয় প্রচুর ইস্যু অথবা স্থান রয়েছে যা নিয়ে কথা বলাটা জরুরি। অথচ সে সবের কোনও বালাই নেই। তিনটে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ভিডিও নিয়ে চর্চা চলছে রসিয়ে। এমন মানসিকতার জন্য আখেরে শ্যামনগরের নামটাই খারাপ হল। আর এই নিম্নরুচির মানসিকতার জন্য যতটা না দায়ী ভাইরাল ভিডিও, তার থেকেও বেশি যারা এই ভিডিও দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় খিল্লি করছেন তারা- এমন কড়া প্রতিক্রিয়াও দিয়েছেন অনেকে। যদিও, এরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। কারণ, ইতিমধ্যেই শ্যামনগরের কিছু মানুষ এই নিয়ে সোশ্যল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করেছিলেন। তার ফল হয়েছে ঠিক উল্টো। কারণ এই প্রতিবাদী মানুষগুলো কিছু নেটিজেনদের বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন। লাগাতার তাঁদের নানা ভাষায় কমেন্ট করে আক্রমণ করা হয়েছে। শ্যামনগরের কিছু মানুষের মতে, এ সব আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার মশালা। এই ধরনের বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখলেই হল এবং এতে অংশ না নিলেই হল। এ সবই আপনা আপনি একদিন থেমে যাবে বলেই তাঁরা আশা প্রকাশ করছেন। আবার অনেকের প্রশ্ন পুলিশ কেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই ঘটনার তদন্ত করছে না? সাধারণ জনমানসের অন্য কিছু সংখ্যক মানুষ মনে করছেন অশ্লীলতার প্রদর্শন বিরোধী যে আইন রয়েছে তাকে হাতিয়ার করেই সাধারণ মানুষের এই নিয়ে আইনের সাহায্য নেওয়া উচিত। তাহলে হয়তো কিছু সংখ্যক মানুষ অশ্লীতার প্রচারের সাজা সম্পর্কে অবগত হবেন।

আরও পড়ুন--- 
যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেস্টে-ই বহিরাগত ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ, কাঠগড়ায় প্রথিতযশা মিডিয়া হাউসের সাংবাদিক 
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্তর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন নিগৃহীতা ছাত্রী 
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ কিছু না করলে কেন ক্ষমা চাইলেন অভিযুক্ত উঠছে প্রশ্ন