সংক্ষিপ্ত
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, খুনির সঙ্গে শিশুদের অঙ্গ ব্যবসায়িদের যোগাযোগ রয়েছে, সেই অভিসন্ধি আঁচ করে ফেলার ফলেই ছোট্ট বাচ্চাটিকে মেরে দেওয়া হয়েছে।
পারিপার্শ্বিক ঝামেলার জেরে রোষ গিয়ে পড়ল ছোট্ট শিশুর ওপর, তার জেরে খুন করে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হল মৃতদেহ। রবিবার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের একে গোপালন কলোনি এলাকায়। ঘটনার জেরে এলাকাজুড়ে চূড়ান্ত অশান্তি, জ্বালিয়ে দেওয়া হল অভিযুক্তের বাড়ি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নিহত নাবালকের নাম দীপ হালদার, তার বয়স মাত্র ৮ বছর। তার বাবার নাম সঞ্জয় হালদার। তিনি পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। শিশুটির মা নেই। বাবা কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকেন। ছেলেটি তার ঠাকুরমার কাছেই থাকত। স্থানীয় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পড়ুশোনা করত। শনিবার সন্ধ্যায় একে গোপালন কলোনির প্রতিবেশী যুবক মানস সিং ওই নাবালককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তারপর থেকেই দীপের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ওই যুবকের সঙ্গে আরও দুজন অপরিচিত ব্যক্তি ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের।
শনিবার সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও শিশুটি বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুজি শুরু হয়। একে গোপালন কলোনি-সহ অনেক আত্মীয়স্বজনের বাড়ি খোঁজ নিয়েও তার কোন খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, যে যুবক বাচ্চাটিকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল, সে এবং তার সঙ্গীসাথিরা হঠাৎ গা ঢাকা দিয়ে দেওয়ায় দীপের পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। অপহৃত নাবালকের পিসি পিঙ্কি সরকার রবিবার বলেছেন, ‘কাল বিকেলে প্রতিবেশী মানস সিং তার ভাইপোকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গেছিল। ওর সঙ্গে আরও দু'জন ছিল। তারপর থেকে ভাইপো আর বাড়ি ফেরেনি।’ এরপরই রবিবার দুপুরে বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের সদস্যরা। তখন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজন অভিযুক্তকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার সারাদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি তল্লাশি চলতে থাকে, অবশেষে সন্ধ্যায় নিজেই থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে অভিযুক্ত। অভিযুক্ত যুবকের বাবা রবিন সিং, মা দুলো সিং ও বোন মানসী সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা গেছে, পুরো পরিবারই এই ঘটনাতে মদত দিয়েছে।
এবিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেছেন, নিখোঁজ থাকার পর বিকেলে ওই শিশুর দেহ উদ্ধার করা গেছে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। সম্পূর্ণ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। মূলত, বাচ্চাটি বারবার দড়িতে পা দিচ্ছিল বলে সেই রোষ থেকেই তাকে খুন করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিন্তু, এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ ভিন্ন। তাঁদের দাবি, এলাকায় অনেক দিন ধরেই অনেক বাচ্চা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেউ টের পাচ্ছে না। ধৃত মানসী সিং কোনও একটি হাসপাতালে চাকরি করেন, তাঁর সঙ্গে বাচ্চাদের অঙ্গ ব্যবসায়িদের যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরাই বাচ্চাগুলিকে চুরি করে নিয়ে যেতেন। শনিবার ৮ বছরের দীপ তাঁদের অভিসন্ধি আঁচ করতে পেরে গিয়েছিল বলেই তাকে সঙ্গে সঙ্গে পাথর দিয়ে মেরে খুন করে মৃতদেহ বস্তায় ভরে ফেলে দিয়েছিল অভিযুক্তরা।
অপহরণ ও পরে মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই রবিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর করেছে এলাকার উত্তেজিত জনতা। আগুন লাগিয়ে পুড়িয়েও দেওয়া হয় বাড়ির অনেক জিনিসপত্র। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক কুমার মিত্র ও স্থানীয় কাউন্সিলর বিপুল কান্তি ঘোষ। ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিশুকে শনিবার রাতেই খুন করে দিয়েছিল অভিযুক্ত মানস সিং। এরপরে তাকে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের খাঁড়ির ঝোপে ফেলে দেওয়া হয়। রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ির পাশের আত্রেয়ী খাঁড়ি থেকে ছোট্ট দীপের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উত্তপ্ত জনতা ওই অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে। অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি থানায় এসেও বিক্ষোভ দেখান উত্তেজিত মানুষ। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ওই এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য অভিযুক্তদের সঙ্গে অঙ্গ পাচারের ঘটনাটিতে শিলমোহর দেয়নি। পুলিস সুপারের দাবি, সাধারণ একটি বচসা থেকেই আক্রোশের বশে খুন করে দেওয়া হয়েছে শিশুটিকে।
আরও পড়ুন-
‘পুলিশি চালানের মাধ্যমে কোষাগারে রাজস্ব তুলছে রাজ্য সরকার’, টুইটারে সোচ্চার শুভেন্দু অধিকারী
ব্যাগ থেকে টাকা ‘চুরি’-র দোষারোপ, খাস কলকাতায় বীরভূমের যুবককে মারতে মারতে মেরেই ফেলল ৬ আততায়ী
গাছ থেকে পড়ে যাওয়া পেয়ারা ‘চুরি’-র অপরাধ, উত্তর প্রদেশে প্রতিবেশীদের প্রচণ্ড মারে প্রাণ খোয়াতে হল দলিত তরুণকে