দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে 'দিল মে কাবা' গান বাজানো এবং তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপি মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী এই ঘটনাকে 'শক্তি'র উপর আক্রমণ তোষণ রাজনীতির চূড়ান্ত সীমা বলে কটাক্ষ করেছেন।
ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী শনিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ঘটনার সূত্রপাত এক দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে "দিল মে কাবা" গানে তালি দেওয়ার একটি ভাইরাল ভিডিও নিয়ে। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল রয়েছে। যা নিয়ে তীব্র চর্চা শুরু হয়েছে।
হিন্দু ঐতিহ্য সংকটে!
সুধাংশু ত্রিবেদী এই গানের সময় এবং প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এটি হিন্দু ঐতিহ্যকে খাটো করার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই গোটা বিষয়টিকে দেখছেন। বিজেপি নেতা ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে নবরাত্রি উদযাপনের সময়, বিদ্বেষপূর্ণ চিন্তা এবং সন্দেহজনক আবেগ পোষণ করার অভিযোগ করেছেন। সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, “যখন গোটা দেশ নবরাত্রি উদযাপন করছে, তখন ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের বিদ্বেষপূর্ণ চিন্তা ও সন্দেহজনক আবেগ সামনে আসছে। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন যে তাঁকে হিন্দুধর্মের 'শক্তি'র বিরুদ্ধে লড়তে হবে। মনে হচ্ছে এই নবরাত্রিতে সেই 'শক্তি'র উপর আক্রমণ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি, কর্ণাটক সরকার বানু মুশতাককে দিয়ে একটি দেবী মন্দিরে পুজো করিয়েছে। আজ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় একটি দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে 'দিল মে কাবা, নজর মে মদিনা' গানে তালি দিয়েছেন এবং উপভোগ করেছেন... এতে কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু সন্দেহজনক বিষয় হলো, নবরাত্রির সময়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে এই গান কেন গাওয়া হচ্ছে...।”
ভাইরাল ভিডিও
উল্লেখ্য, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র একটি দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে “দিল মে কাবা, নজর মে মদিনা” গানটি গাইছেন এবং মমতা ব্যানার্জি সেই পরিবেশনা উপভোগ করছেন।
তোষণের রাজনীতির অভিযোগ
বিজেপি নেতা দাবি করেছেন যে মমতার এই কাজ উগ্রপন্থী ভোট নিশ্চিত করার একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ। তিনি এটিকে “তোষণ রাজনীতির চূড়ান্ত সীমা” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি রাম মন্দির উদ্বোধনে ইন্ডিয়া জোটের অনুপস্থিতি এবং দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে তাদের উপস্থিতির মধ্যে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরেন, যেখানে তারা ইসলামিক প্রতীকের প্রতি প্রশংসা প্রকাশ করেছেন।
“হিন্দুধর্মের 'শক্তি'র বিরুদ্ধে লড়াই এবং হিন্দুধর্মকে উপড়ে ফেলার জন্য কি মাইন পাতা হচ্ছে?... পুজোর সময় অন্য ধর্মের গান গাওয়াটা তাদের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা... উগ্রপন্থী ভোট নিশ্চিত করার এটাই চূড়ান্ত সীমা, এবং দেশকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে... এটা তোষণ রাজনীতির চূড়ান্ত পর্যায়... আমরা ইন্ডিয়া জোটের কাছ থেকে সরাসরি উত্তর চাই; একটি দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে এমন গান গাওয়ার পিছনে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিটা কী... এরাই সেই লোক যারা আমন্ত্রণ পেয়েও রাম মন্দিরে যাননি; আর এখন তারা দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে বিনা আমন্ত্রণে এসে কাবা ও মদিনার প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছেন। আমরা রাহুল গান্ধী এবং মমতা ব্যানার্জিকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে তাদের দল এই বিষয়ে কী ভাবে...,” বলেন ত্রিবেদী।
এছাড়াও, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট দুর্গাপূজার প্যান্ডেলের অনুদান প্রত্যাহার করার অভিযোগও করেছেন, কারণ সেই প্যান্ডেলের থিম ছিল অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কিত। “...শুধুমাত্র একটি দুর্গাপূজার প্যান্ডেলের থিম অপারেশন সিঁদুরের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল বলে, সেটি শুধু বন্ধই করে দেওয়া হয়নি, বরং সরকারি অনুদানও প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুধু বিজেপি বা বিজেপি নেতাদের প্রতিই নয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি অসম্মান উপচে পড়ছে...,” জোর দিয়ে বলেন ত্রিবেদী।


