হাওড়া পুরনিগমে শেষ বার ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। ১২ বছর কেটে গেলেও হয়নি ভোট। হাওড়ার সাথে বালির ১৬ টি ওয়ার্ডের পুনর্বিন্যাস নিয়েই তৈরী হয়েছে জট। তবে নজর এবার নবান্নের দিকে, কোন সিদ্ধান্ত নেবেন শাসকদল?
হাওড়া পুরনিগমে শেষ বার ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। ১২ টা বছর সময় থেকে কেটে গিয়েছে তবু হাওড়া পুরসভার ভোট হয়নি। এবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ‘হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সংশোধনী বিল ২০২১-এ সই করেছেন ঠিকই, তবে তাতে আরও নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। ভোটের রাস্তা এখনও জটমুক্ত হয়নি।
প্রশাসন ও শাসক দলের একাংশের মতে, হাওড়া পুরভোট আটকে থাকার মূল কারণ ‘১৬’-র জট। ১৬-র জট বলতে আসলে বালি পুরসভাকে হাওড়া পুরনিগমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার ২০২২ সালে। সেই অনুযায়ী হাওড়ার ওয়ার্ড সংখ্যা হয়েছিল ৬৬টি, যার মধ্যে হাওড়ার ৫০ টি ও বালির ১৬টি ওয়ার্ডও ছিল। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপাল যে বিলে সই করেছেন, তা সেই পুরনো ৫০টি ওয়ার্ডের হাওড়া পুরনিগম। পুনর্বিন্যাসের বিষয় বা পুনর্বিন্যাস-পরবর্তী ওয়ার্ডের সংখ্যা সেখানে উল্লিখিত নেই। অর্থাৎ, এই ১৬টি ওয়ার্ড নিয়েই নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
বিল অনুযায়ী এখন হাওড়া পুরনিগমের অধীনে থাকবে ৫০টি ওয়ার্ড। আর সই-করা বিলের ভিত্তিতে ভোট করাতে হয়, তাহলে আসন পুনর্বিন্যাসকে নাকচ করতে হবে। আবার অন্যদিকে পুরনো বিল বাতিল করে দ্রুত নতুন প্রক্রিয়া শুরু করতে গেলে সেক্ষেত্রে বিধানসভায় বিল পাশ এবং রাজ্যপালের সইয়ের বিষয় থাকবে। শাসকদলেরই অনেকে আশাবাদী হয়ে বলছেন, ‘‘বিল আটকে রাখা নিয়ে তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছে, তাতে সব রাজ্যের রাজভবনের উপরেই চাপ তৈরি হয়েছে। এমতবস্থায় নতুন করে বিল পাশ হলে তা নিয়ে বিলম্ব হওয়ার কথা নয়।’’
সালকিয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রবীর দত্ত বলেন, “শেষ বার যখন ভোট দিয়েছিলাম, তখন সিপিএম ছিল, বিজেপিকে কেউ চিনত না। আজ সব বদলে গিয়েছে। শুধু ভোটটাই হয়নি!” হাওড়া পুরসভায় গত সাত বছর ধরে কোনও নির্বাচিত কাউন্সিলর নেই। প্রশাসক বা প্রশাসকমণ্ডলীর মাধ্যমে চলছে পরিষেবা। এর ফলেই সম্প্রতি বেলগাছিয়া ভাগাড় বিপর্যয়ের সময় ‘প্রশাসনিক শূন্যতা’ প্রকট হয়ে ওঠে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, নিত্য সাম্যাজিক ও প্রশাসনিক কোনো সমস্যার সমাধানে কাউন্সিলর না থাকায় তারা দিশাহারা।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এখন নবান্নের সামনে দুটি রাস্তা খোলা—হয় বর্তমান বিলেই ভোট আয়োজন, নয়তো সম্পূর্ণ নতুন প্রক্রিয়া। তবে যে পথই বেছে নেওয়া হোক, দ্রুত সিদ্ধান্ত না হলে আরও পিছিয়ে যেতে পারে হাওড়ার গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো।


