সংক্ষিপ্ত

কোটি কোটি টাকার মালিক সায়নী ঘোষ। যুব তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর সম্পত্তির হিসেব নিকেশের সঙ্গে রইল তাঁর ঋনের বোঝার সন্ধানও।

 

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এখন আলোচনায় তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ। শুক্রবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অফিসে ম্যারাথন জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছিল বাংলা ছবির নায়িকাকে। তবে তাতেও শেষ নয় আবারও তাঁকে ডাকা হয়েছে বুধবার। ইডি সূত্রের খবর সায়নী ঘোষের আয় - ব্যায়ের মধ্যে ফারাক বিস্তর। হিসব বহির্ভূত সম্পত্তি রয়েছে। কোথায় থেকে কীভাবে সম্পত্তি পেয়েছেন তার কোনও সঠিক উত্তর বা প্রমাণ এখনও পর্যন্ত দাখিল করতে পারেননি তৃণমূল। সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সায়নী ঘোষকে আরও জেরার প্রয়োজন রয়েছে।

ইডি সূত্রের খবর সায়নী তাঁর ফ্ল্যাট কেনার টাকার উৎস নিয়ে সঠিক জাবাব দেননি। ত্রিপুরায় ভোট প্রচারের খরচ নিয়ে প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কত টাকার সম্পত্তির মালিক সায়নী ঘোষ?

সায়নীর সম্পত্তি

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোলে দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। যদিও বিধায়ক হতে পারেননি। তারপরই তাঁকে যুবতৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী করা হয়। বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়ানোর সময় নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী সেই সময় অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সায়নী ঘোষের মোট আয় ছিল ৮৯ লক্ষ ২ হাজার ৫৬৮ টাকা। সেই সময় তাঁর হাতে ক্যাশ ছিল ৩২ হাজার ৭৭৫ টাকা। পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত ছিল ১০ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮২৫ টাকা। বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে ৮ লক্ষ ৫২ হাজার ৩৭৬ টাকা জমা ছিল তাঁর নামে। সেই সময় সায়নী ৩৪ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ছিল তাঁর নামে। ৬ লক্ষ ৭৭ হাজারের বেশি টাকার একটি গাড়ি ছিল। যেটি তিনি ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন। সেই সময় তিনি দেখিয়েছিলেন তাঁর কাছে মাত্র ৪ গ্রাম সোনার গয়না রয়েছে। যার মূল্য সেই সময় ছিল ২৩ হাজার টাকার মত। তাঁর মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ লক্ষ টাকা। তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে ১৯ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তাও জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায়। হলফনামায় সায়নী জানিয়েছিলেন, তিনি শেয়ার মার্কেটে কোনও বিনিয়োগ করেননি। তবে জীবনবীমায় ৮ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যাদবপুরের হিরেন্দ্রলীলা পত্রনবিশ স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিলেন।

সায়নী নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফবনামায় জানিয়েছিলেন তাঁর নামে কোনও জমিজমা নেই। নেই কোনও বাড়ি। ফ্ল্যাট রয়েছে তাও জানিয়েছিলেন। ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া এই সম্পত্তির হিসেব নিকেশ। কিন্তু ২০২৩ সালে সায়নীর সম্পত্তির মধ্যে নাকি প্রচুর পরিমাণে গরমিল পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকরা। আর সেই কারণেই তাঁকে আবারও তলব করেছে ইডি।

সায়নীকে নিয়ে প্রশ্ন কলকাতা হাইকোর্টের

সায়নীয় সম্পত্তি নিয়ে কথা বলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩০ জানুয়ারি, দুর্নীতি মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'আমি শুনেছি এক অভিনেত্রী তিনটি ফ্ল্যাট ভেঙে একটা বড় ফ্ল্যাট পেয়েছেন। জানতে চাই কে তিনি? এই অভিনেত্রীকে দেখতে চাই। তার সিনেমাও দেখতে চাই।' অভিনেত্রীর নাম জানিয়ে, ED কে হলফনামা পেশ করার নির্দেশও দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

ইডি সূত্রে খবর

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রেশ ধরেই ইডির আধিকারিকদের সূত্রের খবর শুধুমাত্র সম্পত্তি কেনাবেচা নয়, একাধিক আর্থিক লেনদেনেরও তথ্য তাদের হাতে রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে একাধিক সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলে সায়নীর নাম পেয়েছে তদন্তকারীরা। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমেই সায়নীর তথ্য পেয়েছে। তবে ইডি সূত্রের খবর সায়নী ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় যে খতিয়ান দিয়েছিলেন তার সঙ্গে বর্তমানে তাঁর সম্পত্তির আকাশপাতাল ফারাক রয়েছে। সম্পত্তিও বেড়েছে বহুগুণ।

আরও পড়ুনঃ

ইডির অফিসে হাজিরা দিলেন সায়নী ঘোষ, তদন্ত নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল যুবনেত্রী

সায়নী ঘোষ কি যাবেন ইডির অফিসে? আর কিছুক্ষণ পরেই হাজিরার কথা সিজিও কমপ্লেক্সে

Uniform Civil Code: অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কী? এই বিল পাশ করতে মরিয়া কেন্দ্র পেশ করবে বাদল অধিবেশনে