'কাকে ধরেছেন, ইউটিউব খুলে দেখুন', জীবনতলায় পুলিশকে শাসানি হুগলির বিশালের

  • বিষ্ণুকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে বিশাল 
  • দেহ টুকরো করে ফেলে দেয় বিভিন্ন জায়গায় 
  • তারপর এখনও বিষ্ণুর মাথা উদ্ধার হয়নি 
  • বিশালের ফাঁসির দাবী তুলেছে বিজেপি 

Asianet News Bangla | Published : Nov 3, 2020 9:05 AM IST / Updated: Nov 03 2020, 07:20 PM IST

'কাকে ধরেছেন ? আমায় চেনেন ? আমি ....। ইউটিউব খুলে দেখে নিন ', জীবনতলায় গুলি কাণ্ডে ধৃত দুষ্কৃতির কাছে এমন শাসানি পেয়ে কার্যত হতবাগ হয়ে যায় পুলিশ।পুলিশ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়তেই সেই দুষ্কৃতি বলে ওঠে তার নাম বিশাল দাশ। সে হুগলির ফেরারি খুনি। এতেই চটকা ভাঙে জীবনতলা থানার পুলিশের। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় হুগলির পুলিশের সঙ্গে। ধৃত দুষ্কৃতির ছবি পাঠানো হয় হুগলি পুলিশকে। তাঁরা জানায়, ধৃতদের মধ্যে দুই জন চুচূড়ার বিষ্ণু মাল নামে এক যুবক খুনের দাগী আসামি। এদের মধ্যে একজন বিশাল দাশ। যে ওই খুনের মাস্টার মাইন্ড। হুগলি পুলিশ আরও জানায়, পুঁজোর মধ্যে বিষ্ণুর দেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করা গেলেও তাঁর মুন্ডুর কোনও হদিশ মেলেনি। তবে ওই খুনের অভিযুক্তদের জেরা করে জানা গিয়েছে, মাস্টার মাইন্ড বিশাল এবং রথীন, বিষ্ণুর কাটা মুন্ডু প্লাস্টিকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। হুগলি পুলিশের কাছে এমন বয়ান পেয়ে রীতিমত চমক ভাঙে জীবনতলার থানার।

আরও পড়ুন, বিদায় নিলেন পুরুলিয়ার 'দাবাং' জেলা শাসক রাহুল মজুমদার, আচমকা বদলি ঘিরে জোর জল্পনা

 

কীভাবে বিষ্ণুকে খুন

 দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে বিশাল দাসকে। হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশালকে খুঁজছিল চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ। প্রসঙ্গত, গত ১০ অক্টোবর চুঁচুড়া কামারপাড়ার যুবক বিষ্ণু মালকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে বিশাল। দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় বিভিন্ন জায়গায়। হাত-পা-ধড় উদ্ধার হলেও এখনও বিষ্ণুর মাথা উদ্ধার হয়নি। বিশালের পাঁচ সঙ্গীকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে  পুলিশ। বিশালের খোঁজে জোর তল্লাশি চলছিল। 

আরও পড়ুন, রক্ষকই ভক্ষক, পাচার কাণ্ডে প্রাক্তন পুলিশ সুপারিনটেন্ড-ডেপুটি কমিশনারকে গ্রেফতার করল CBI


বিষ্ণুর প্রেমিকার উপরে কুনজর বিশালের, তার জেরেই বিষ্ণু খুন

চন্দননগর পুলিশ কমিশনার সূত্রে খবর, এর আগে ২০১৭ সালে হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী টোটন বিশ্বাসের দাদা তারক বিশ্বাস তাদের ডেরায় ঢুকে খুন করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং এলাকাতেই গা ঢাকা দিয়েছিল বিশাল। পরে সে গ্রেপ্তার হয়। প্রায় আড়াই বছর জেল খাটার পর সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পায়। মূলত তোলাবাজি আর ভাড়াটে খুনি হিসেবেই অপরাধ জগতে পরিচিত চুঁচুড়া সেগুন বাগানের বাসিন্দা বিশাল। 

আরও পড়ুন, 'ভেড়ির ঘরে কে'- জিগোতেই ছুটে এল ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি, জীবনতলা শ্যুট আউটে বিজেপি-কে কাঠগড়ায় তুলল তৃণমূল

 

কীভাবে জীবনতলায় বিশাল

চন্দননগর পুলিশকমিশনার জানিয়েছে, ক্যানিং-এর জীবনতলায় এক ভ্যান চালকের বাড়ি ৭ দিন লুকিয়ে ছিল-বিশাল,রথীন এবং আরও এক দুষ্কৃতি। এর আগেও বিশাল ক্যানিং-এর এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গা ঢাকা দিয়েছিল। ফলে জীবনতলার এই অঞ্চল তার কাছে স্বাভাবিকভাবেই পরিচিত। জীবনতলা স্থানীয় সূত্রে খবর, কুড়িভাঙা গ্রামের কুতুব শেখের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল বিশাল, রথীন এবং আরও এক দুষ্কৃতি। এই কুতুব শেখ পেসায় ভ্যান চালক এবং তৃণমূলের সমর্থক বলেই পরিচিত। যদিও স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস দাবী করেছে, কুতুব তাঁদের দলের কেউ নন। আরও জানা গিয়েছে, কুতুবের বোনের বর বিশাল, রথীন ও আরও এক দুষ্কৃতিকে কুড়ি ভাঙায় রেখে গিয়েছিল।  ক্যানিং-এর এই সব এলাকা একটা সময় দুষ্কৃতিদের কাছে মুক্তাঞ্চল ছিল। যেকোনও অপরাধ ঘটিয়ে, অপরাধীরা এই অঞ্চলে সহজের গা ঢাকা দিত। এই সব এলাকার খুব কাছেই বাংলাদেশ সীমান্ত ও জলসীমা।বেগতিক দেখলে সুন্দরবনের জলসীমা ও জঙ্গল ভেঙে দুষ্কৃতিরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ত। বিশাল হয়তো মঙ্গলবার সকালে তেমনই একটা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিশাল ও তার সঙ্গীরা বুঝতে পারেনি সোমবার রাতে তারা যাদেরকে গুলি করেছে, তাঁরা এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল কর্মী এবং  এলাকার বিধায়ক শওকত মোল্লার কাছের লোক। যার জন্য মানুষের নজরদারি এড়িয়ে এলাকা ছেড়ে পালাতে পারেনি বিশাল ও তার দুই সঙ্গী। চন্দরনগর পুলিশ কমিশনার জানিয়েছে, তাঁরা বিশাল ও রথীনকে হেফাজতে নেবে। কারণ বিষ্ণু মাল হত্যাকাণ্ডে বহু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যাবে, বিশাল ও রথীনের কাছ থেকে। 

আরও পড়ুন, রাজ্যের প্রশাসনিক স্তরে বড়সড় রদবদল, বদল করা হল একাধিক জেলার জেলাশাসককে


 বিশালের ফাঁসির দাবীতে বিষ্ণুর পরিবারের পাশে বিজেপি 


অপরদিকে, জেলে থাকতেই খবর পেয়েছিল যে, তার কুনজরে পড়া মেয়েটির সঙ্গে জমিয়ে প্রেম করছে বিষ্ণু মাল নামের  একটি ছেলে। এরপর পুরো রাগ গিয়ে পড়ে বিষ্ণুর উপর। জেল থেকে বের হয়েই সে বিষ্ণুকে থ্রেটও করেছিল বলে জানা যায়। কিন্তু বিষ্ণু তখন সেই ঘটনায় তেমন গা করেনি। আর এরপরেই এই নৃশংস খুনে ঘটনা ঘটে যায় । সোমবার বিশালের এক শাকরেদকে বিজেপির বিক্ষোভের জেরে কোর্টে না তুলেই ভারচুয়ালি পিসি নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে বিষ্ণুর এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসছে । বিশালের ফাঁসির দাবী তুলে বিজেপিও ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছে।

 

আরও পড়ুন, আজ নবান্নে মমতা- বিনয় তামাংদের বৈঠক, জট কাটিয়ে হবে কি জোট

Share this article
click me!