সংক্ষিপ্ত
চিকিৎসার জন্য ভারতে এসে আটকে বাংলাদেশিরা
সঙ্গে কারোর অসুস্থ রোগী, কারোর বা মৃতদেহ
বন্ধ এখন ভারত-বাংলাদেশ উড়ান যোগাযোগ
বেনাপোল দিয়ে সড়কপথে ফিরলে থাকতে হবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে
প্রতি বছরই চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন বহু সংখ্যক বাংলাদেশি। ভারতে কোভিডের প্রথম তরঙ্গ স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পর, এই বছরও বহু সংখ্যক বাংলাদেশি এসেছিলেন। দ্বিতীয় তরঙ্গের ধাক্কায় ভারত-বাংলাদেশ বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া আটকে পড়েছেন কেউ কলকাতায়, কেউ দিল্লি, কেউ বা চেন্নাই-এ। সড়ক পথে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে যদিও বা ফেরা যায়, থাকতে হবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে। তাই ভারতে তীব্র করোনার দাপটের মধ্যে সঙ্গে রোগী নিয়ে মহা সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।
গোটা ভারতেই এখন ভয়ানক কোভিড সংকট দেখা দিয়েছে। তীব্রভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালে হাসপাতালে শয্যার অভাব দেখা দিয়েছে। সেই ঘাটতি মেটাতে অধিকাংশ হাসপাতালেই এখন চলছে বেড খালি করার অভিযান। অন্যান্য অসুখের রোগীদের নির্ধারিত সময়েই অনেক আগেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছেন সব মিলিয়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশিও। এই মুহূর্তে দেশে ফিরতে মরিয়া তাঁরা। দিল্লি, মুম্বই এবং কলকাতার বাংলাদেশ হাই কমিশনে শ'য়ে শ'য়ে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি (NOC)-র আবেদনপত্র জমা পড়েছে। কিন্তু সীমান্তের ওপাশে কোয়ারেন্টাইনের সুবিধা সীমিত। সেই সংখ্যা বিচার করেই এনওসি দেওয়া হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, এনওসি দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিংবা যাদের ভারতে থাকাকালীন মৃত্যু হয়েছে তাঁদের এবং তাঁদের আত্মীয়দের। এনওসি পেলেও সমস্যা শেষ হচ্ছে না। ফিরতে হবে পেট্রাপপোল-বেনাপোল স্থল-সীমান্ত দিয়ে। আটকে পড়া বাংলাদেশিদের অনেকের সঙ্গেই অসুস্থ মানুষ, বয়স্ক মানুষ রয়েছেন। চলাচলের কষ্টের জন্য আসার সময় অধিকাংশই বিমানে এসেছেন। এখন উড়ান বন্ধ থাকায় তীব্র সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। তার উপর, ভারতের অনেক জায়গাতেই এখন লকডাউন চলছে। ফলে স্থলপথে যাতায়াত করাটা আরও দুঃসাধ্য। এই কারণে অনেকে এনওসি-র আবেদনও করতে চাইছেন না।
আরও পড়ুন - তিকরি-র কৃষক আন্দোলনস্থলে গণধর্ষিতা বাঙালি শিল্পী, ৬ জনের নামে এফআইআর
আরও পড়ুন - করোনাধ্বস্ত ভারতের পাশে দ. কোরিয়াও, দিল্লি বিমানবন্দরে এল বিপুল চিকিৎসা সরবরাহ
আরও পড়ুন - ২৩ জুন কংগ্রেসে নির্বাচন, বিদ্রোহীদেরই জয় - 'ঘর গোছানো'র ডাক দিলেন সনিয়া
আর সবথেকে সমস্যায় পড়েছেন, যেসব বাংলাদেশিদের প্রিয়জনদের মৃত্যু ঘটেছে, তাঁরা। স্বজনের মৃতদেহ সৎকারের জন্য ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। মরদেহ নিয়ে দেশে ফেরার এনওসি যদি বা হাই কমিশন থেকে পাওয়া যাচ্ছে, সড়ক পথে কীভাবে মরদেহ বেনাপোল সীমান্ত অবধি নিয়ে যাবেন, তাই ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। তার উপর ওইপাড়ে গিয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় মরদেহ কোথায় থাকবে, তা সম্পর্কেও তাঁদের কোনও সম্মক ধারণা নেই। এই অবস্থায় নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং আনুষঙ্গিক সকল ব্যবস্থা করুক বাংলাদেশ সরকার, এমনটাই চাইছেন আটকা পড়া বাংলাদেশিরা। তাঁরা বলছেন, সরকারের উচিত শিঘ্রই বিশেষ উড়ানের ব্যবস্থা করে এরকম সংকটে পড়া নাগরিকদের উদ্ধার করা।
সেইরকম কোনও পরিকল্পনা বাংলাদেশ সরকারের আপাতত নেই বলেই জানা গিয়েছে। তবে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশিকে এনওসি যাতে দেওয়া যায়, তার জন্য ভারত-ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনের রাখার স্থান বাড়ানো হচ্ছে। যশোরের ১৮টি হোটেল এই উদ্দেশ্যে বুক করা হয়েছে। আশপাশের কয়েকটি জেলা শহরের হোটেলও বুক করা হচ্ছে। তবে শুধু কোয়ারেন্টাইন সুবিধা নয়, বহু মানুষই ভারত থেকে ফিরে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ১৫ দিনে ২৫ জন এরকম কোভিড পজিটিভ হয়েছেন। তাদের জন্য হাসপাতালের শয্যাও প্রস্তুত রাখছে বাংলাদেশ। যশোরে একটি আড়াইশ বেডের হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল করা হয়েছে। আপাতত ১৭ জন সেখানে ভর্তি রয়েছেন।