সংক্ষিপ্ত

ঐন্দ্রিলার ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই চলাকালীন বারবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে লেখালেখি করতে দেখা গিয়েছে সব্যসাচীকে। অভিনেত্রী কেমন আছেন সেই খবর অনুরাগীদের দিয়েছেন তিনি। তবে এবার সেই যুদ্ধ শেষের পথে। 

কাছের মানুষ পাশে থাকলে পরিস্থিতি (Situation) যতই জটিল হোক না কেন সব ক্ষেত্রেই জয়ী (Win) হওয়া সম্ভব। সেটা মারণ রোগ ক্যানসারই (Cancer) হোক না কেন। সাফল্য ঠিক মিলবেই। আর সেভাবেই কাছের মানুষদের সহযোগিতায় মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে সব শেষে জয়ের হাসি হাসলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। আর এই লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত তাঁর পাশে থেকে মনের জোর বাড়িয়ে গিয়েছেন প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)। প্রেমিকার জন্য শেষ বারের মতো কলম ধরলেন তিনি।

ঐন্দ্রিলার ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই চলাকালীন বারবার সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) তা নিয়ে লেখালেখি করতে দেখা গিয়েছে সব্যসাচীকে। অভিনেত্রী কেমন আছেন সেই খবর অনুরাগীদের দিয়েছেন তিনি। তবে এবার সেই যুদ্ধ শেষের পথে। চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে অভিনেত্রীর চিকিৎসা (Treatment)। দাঁতে দাঁত চেপে ‘ফাইট ঐন্দ্রিলা ফাইট’ এই মন্ত্র জপতে জপতে লড়েছেন তিনি। এবং অবশেষে ক্যানসারকে জয়ী করলেন ঐন্দ্রিলা। আর সেই আনন্দ কীভাবে নিজের মধ্যে চেপে রাখবেন সব্যসাচী! এই লড়াইয়ে তাঁকে সব সময় পাশে পেয়েছেন ঐন্দ্রিলা। গোটা লড়াইয়ে ঐন্দ্রিলার মনে সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন তিনি। আর ঐন্দ্রিলা যখন সফল হলেন তখন শেষবার কলম ধরে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করলেন। 

আরও পড়ুন- ভিকি-ক্যাটের বিয়েতে প্রবেশ করা যাবে এই বিশেষ জিনিসটি থাকলে

গোটা ঘটনা ও নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লেখ করেছেন সব্যসাচী। তিনি লেখেন, "সেই ফেব্রুয়ারী থেকে দিন গোনা শুরু হয়েছিল আর অবশেষে সেই বহু প্রতীক্ষিত ডিসেম্বর (December) মাস এল। আমি যখন ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে প্রথম লিখতে শুরু করেছিলাম, আমার বাবা মা সমেত চেনাজানা অনেকেরই ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হয়েছিল। আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ এটা আমার স্বভাববিরুদ্ধ বিষয়। ঐন্দ্রিলার সাথে আমার আলাপ চার বছর আগে কিন্তু এর মাঝে আমরা কোনোদিনও সেভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি পোস্ট করিনি। কাপল্ ফটোশুট, টিকটক ভিডিও, বুমেরাং ইত্যাদি যা সব হয় আর কি, কখনও করিনি আমরা। আর সত্যি বলতে, আমি এগুলো করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। উনি অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন, তবে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তেমন নয়। সিনেমার গল্প ভালোবাসো নিশ্চয়, তাহলে বাস্তবের গল্পটাও শোনো। ১৪ ফেব্রুয়ারি নাকি ভালোবাসার দিবস, আমি বড়ই কাঠখোট্টা মানুষ, এসব বিশেষ দিনে কিছুই করি না কখনও। কিন্তু এই বছর, এই প্রথমবার তিনি বায়না করেছিলেন যে দিনটি মাসের দ্বিতীয় রবিবার, তাই দুজনেরই ছুটি, অতএব রাতে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে হবে। ভালো কথা, টেবিল বুক করা হল, বলল দুপুরে একটু ঘুমাচ্ছি, উঠে তৈরি হব। ঘুমালো কিন্তু আর উঠতে পারল না। পিঠের যন্ত্রণায় পরিত্রাহি চিৎকার করছে, এদিকে আমি বুঝতেই পারছি না যে কি হয়েছে। অগত্যা খেতে যাওয়া বাতিল করে আমি নিজেই রান্না করে খাওয়ালাম, তখনও আমরা ভাবছি যে পিঠের মাংসপেশিতে টান লেগেছে বোধহয়। পরের দিন জানা গেল ছয় বছর আগের সেই কালসদৃশ অসুখ আবার ফিরে এসেছে এবং ফুসফুসে এক লিটার রক্ত জমেছিল, আমরা কেউ তা বুঝিনি। এর পর থেকে, আমাদের জীবনে আর কোনও নির্দিষ্ট ভালোবাসার দিন নেই। জীবনেও তা পালন করব না।"

এই মারণ রোগ ধরা পড়ার পর দিল্লিতে ঐন্দ্রিলার চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। কিন্তু, চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরই হতাশা গ্রাস করেছিল তাঁকে। আর সেই সময় শক্ত করে তাঁর হাত চেপে ধরেছিলেন সব্যসাচী। প্রতিনিয়ত তাঁর পাশে থেকে, তাঁকে সঙ্গ দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কেমোর সময়ও ঐন্দ্রিলার পাশে থেকেছেন। তবে সব প্রতিকূল অবস্থাকে পিছনে ফেলে ঐন্দ্রিলা এখন জয়ী। আগামী বছরই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে কাজে ফিরবেন অভিনেত্রী। এ প্রসঙ্গে সব্যসাচী লেখেন, "অস্ত্রোপচারে শরীর থেকে বাদ গেছে অর্ধেক ফুসফুস, হৃদপিণ্ডের ছাল অর্থাৎ পেরিকার্ডিয়াম এবং ডায়াফ্রামের একাংশ। হাই প্রোটিন খাবার আর স্টেরয়েড এবং বাকি ওষুধপত্রের প্রভাবে ওজন বেড়েছে প্রায় ১১ কেজি। ডাক্তার বলেছেন যে সেটা অবশ্য খুবই ভালো, চিকিৎসা চলাকালীন ওজন কমলেই বরং রক্তের সমস্যা দেখা দেয়। ঐন্দ্রিলা আমায় জানিয়েছে যে ধীরে সুস্থে ওজন কমিয়ে, একেবারে সুস্থ হয়ে পরের বছর পুনরায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেই, ফিরবে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে।"

আরও পড়ুন- 'হাসিটুকুর জন্য আরও সহস্রবার হারতে রাজি', ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট সব্যসাচীর

একইসঙ্গে সব্যসাচী জানান, ঐন্দ্রিলার লড়াইয়ের বীজ ওর রক্তে। রোগের বীজ জিনঘটিত। ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা অনেকগুলো বছর ভুগেছেন জরায়ু, কোলন ক্যানসারে। সব্যসাচীর লেখা থেকেই জানা গিয়েছে, ২০০৭-এ অভিনেত্রীর মায়ের কর্কট রোগ ধরা পড়ে। তারপর দেশে-বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করান তিনি। চিকিৎসকরা যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখনও তিনি দমেননি। পরামর্শ নিয়ে অস্ত্রোপচার করেছেন। ওষুধ খেয়েছেন। সুস্থ হয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরেছেন। এখন অভিনেত্রীর মা পুরোপুরি সুস্থ। চাকরিও করেন। এই মুহূর্তে মেয়েকে দুই হাত দিয়ে আগলাচ্ছেন তিনি। 
 
ঐন্দ্রিলার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কর্কট রোগের আর কোনও কোষ ওঁর শরীরে অবশিষ্ট নেই। এই মুহূর্তে ঐন্দ্রিলা সুস্থ এবং বিপদমুক্ত। পাশাপাশি, ডিসেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত কেমোথেরাপি চলবে। শারীরিক অবস্থা জানতে প্রতি তিন মাস অন্তর স্ক্যান করা হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। তাঁরই বেঁধে দেওয়া নিয়মে জীবন যাপন করতে হবে অভিনেত্রীকে। আর আগামী বছর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফের কাজে যোগ দেবেন তিনি।