সংক্ষিপ্ত

চলচ্চিত্র পরিচালনায় অসামান্য মুন্সিয়ানার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। এছাড়াও ৭ বার সম্মানিত হয়েছিলেন বিএফজিএ সম্মানে। এছাড়াও পাঁচটি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ১৯৯০ সালে আনন্দলোক সম্মানেও সম্মানিত হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি কাঁচের স্বর্গ ছবির জন্য জাতীয় সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। 
 

দাদার কীর্তি তাঁকে সর্বজন গৃহে যেন অমরত্ব দিয়েছে। বাংলা ছবির নব্বই-এর দশকের সেই ছবি যেন আলাদা একটা ঘরানা তৈরি করেছিল। আটপৌর বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনকে অন্যমাত্রায় সিনেমার পর্দায় তুলে এনেছিল। কিন্তু যে তরুণকে বাঙালি মনে রেখেছে দাদার কীর্তি-র জন্য, সেই তরুণের সিনে জগতে আবির্ভাব ঘটেছিল ষাট-এর দশকেই। সিনেমা পরিচালনায় তাঁর মুন্সিয়ানা বহু আগেই প্রতিষ্টিত ও পরিচয় পেয়েছিল। 

তরুণ মজুমদারের জন্ম আধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত বগুড়াতে। সালটা ছিল ৮ জানুয়ারি, ১৯৩১ সাল। বাবা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। পড়াশোনা সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজে। রসায়নের স্নাতক স্টুডেন্ট হয়েও পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সিনেমা তৈরিকে। শচীন মুখোপাধ্যায়, দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে তৈরি করেছিলেন যাত্রীক নামে একটি সংস্থা। এই যাত্রীকের ব্যানারেই তরুণ মজুমদার, শচীন মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি চাওয়া-পাওয়া মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। নায়ক-নায়িকা ছিলেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ঠিক ছিল যাত্রীকে ত্রয়ীদের অভিযান। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় যাত্রীকের ব্যানারে পলাতক। আর এরপরই ভেঙে যায় যাত্রীক। নিজের পরিচয়ে ছবি তৈরির কাজে হাত লাগিয়েথিলেন তরুণ মজুমদার।

চলচ্চিত্র পরিচালনায় অসামান্য মুন্সিয়ানার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। এছাড়াও ৭ বার সম্মানিত হয়েছিলেন বিএফজিএ সম্মানে। এছাড়াও পাঁচটি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ১৯৯০ সালে আনন্দলোক সম্মানেও সম্মানিত হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি কাঁচের স্বর্গ ছবির জন্য জাতীয় সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। তাঁর আরও একটি ছবি পলাতক-এ তিনি প্রথম স্বাধীনভাবে পরিচালনার কাজ করেছিলেন। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবে তরুণ মজুমদার সকলের নজরে আসেন পলাতক (১৯৬৩), নিমন্ত্রণ (১৯৭১), সংসার সীমান্তে (১৯৭৫), গণদেবতা (১৯৭৮)। 

তাঁর পরিচালিত ব্লগবাস্টার ছবির তালিকায় রয়েছে বালিকা বধূ (১৯৬৭), কুহেলি (১৯৭১), শ্রীমান পৃথ্বিরাজ (১৯৭৩), ফুলেশ্বরী (১৯৭৪), দাদার কীর্তি (১৯৮০), ভালবাসা ভালবাসা (১৯৮৫), আপন আমার আপন (১৯৯০)। 

সন্ধ্যা রায় যাঁকে তরুণ মজুমদার পরবর্তীকালে বিয়ে করেছিলেন তিনি তরুণ মজুমদারের ২০টি ছবি-তে নায়িকা হিসাবে কাজ করেছিলেন। প্রয়াত অভিনেতা তাপস পালও তাঁর ৮টি ছবিতে নায়ক হয়েছিলেন। এমনকী, বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি এবং মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও তাঁর হাত ধরে অভিষেক ঘটিয়েছিলেন তাপস পাল, মৌসুমী মুখোপাধ্যায়, মহুয়া রায়চৌধুরী, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়-রা। 

১৯৯৪ সালের পর থেকে আর ছবি বানাচ্ছিলেন না তিনি। ২০০৩ সালে তিনি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে নিয়ে তৈরি করেন আলো। যা ফের বক্স অফিসে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। এরপর তিনি বেশকিছু ছবি বানান। পরিচালনা ও কাহিনি বিন্যাসের দিক থেকে সেই ছবিগুলি খুবই উঁচুদরের হলেও দর্শকরা নেয়নি। ২০০৭ সালে চাঁদের বাড়ি ছবিতে তিনি বাবুল সুপ্রিয়কে নায়ক বানিয়ে পর্দায় নিয়ে এসেছিলেন। 

আগাগোড়া বামপন্থী মনোভাবাপন্নে দিক্ষীত তরুণ মজুমদার মনে করতে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার থাকা উচিত। হাজারো রাজনৈতিক বিতর্কেও তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসনেনি। চলে যাওয়ার আগেও তিনি বলে গিয়েছেন কোনও আড়ম্বর ছাড়াই যেন তাঁকে বিদায় জানানো হয়। আসলে তরুণ মজুমদার মানে সমাজের এক সত্যিকারের আয়না, যেখানে সুর-তাল একসঙ্গে মিলে সংলাপের মোড়়কে এক অন্য মূর্চ্ছনা তৈরি করে।  
আরও পড়ুন- চলে গেলেন 'দাদা-র কীর্তি'-র স্রষ্টা তরুণ মজুমদার, বাংলা চলচ্চিত্র হারাল আরও এক অভিভাবককে