সংক্ষিপ্ত
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য ঘিরে সারা বিশ্ব এখন দ্বিধাবিভক্ত। এক বিরাট রাজনৈতিক সমীকরণ লুকিয়ে রয়েছে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে। আন্তর্জাতিক সেই সমীকরণ বিশ্লেষণ করলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
অনিরুদ্ধ সরকার- ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে প্রয়াত হন ৯৬ বছরের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই অবসান হয় একটি যুগের। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় শোক পালিত হয় ভারতে। আর তা নিয়ে ওঠে সমালোচনার ঝড়। কারণ, রানি মারা যাওয়ার ঠিক একদিন আগে যখন নয়া দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি মূর্তি থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলের রাস্তার নাম কিংসওয়েকে বদলে কর্তব্যপথে রাখা হল তখন ব্রিটিশ রানির জন্য ভারতে হঠাৎ রাষ্ট্রীয় শোক কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে বিজেপির দ্বিচারিতা বলে কটাক্ষ করেছেন।
সোমবার ১৯ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজকীয় শেষকৃত্য। রানিকে শেষবিদায় জানাতে ইংল্যান্ডে হাজির হবেন প্রায় শতাধিক রাষ্ট্রনায়ক ও বিভিন্ন দেশের সম্রাট-সম্রাজ্ঞীরা। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতেই হবে রানির অন্তেষ্টিক্রিয়া। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে স্বামী ফিলিপের পাশেই সমাহিত করা হবে তাঁকে। ১৯৬৫ সালে উইনস্টন চার্চিলের পর এই প্রথম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে কোনও রানির।
বিবিসি সূত্রে খবর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ইতালি, ব্রাজিল, জাপান, ফ্রান্স ও তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে আলাদাভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে রাজপরিবার। রাশিয়া, বেলারুশ ও মায়ানমার এই তিনটি দেশের কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রানির শেষকৃত্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি যোগদান না করলেও যোগ দেবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রোপদি মূর্মূ। এছাড়া রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকতে চলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার রণিল বিক্রমাসিংঘের মত হেভিওয়েট রাষ্ট্রপ্রধানরা।শতাধিক রাষ্ট্রপ্রধান, রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি, অন্তত ১০ লক্ষ সাধারণ মানুষ রানিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন যার জন্য ব্রিটিশ সংসদে চারদিন ধরে শায়িত থাকবে রানির কফিন। এই জনসমাবেশ সামলাতে সারা দেশের কয়েকহাজার পুলিশ কর্তাকে লন্ডনে মোতায়েন করা হয়েছে।সূত্রের খবর রানির অন্তেষ্টিক্রিয়ার আগে বাকিংহাম প্যালেসে রাষ্ট্রনেতাদের সংবর্ধনা জানাবেন রাজা তৃতীয় চার্লস। ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে শোকপ্রকাশের জন্য বই আকারের একটি ডায়ারি রাখা থাকবে। রাষ্ট্রনেতারা সেখানে তাঁদের শোকবার্তা লিখবেন। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রত্যেকে পাবেন ঘড়ি ধরে তিন মিনিট।
ব্রিটিশরা শৃঙ্খলাপরায়ন জাতি। সারা বিশ্বে একসময় তাই তাদের আধিপত্য ছিল। রানির মৃত্যুতেও তারা জারি করেছে একগুচ্ছ নিয়ম। যে নিয়মের আওতায় থাকছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। যেমন আমন্ত্রিত রাষ্ট্রপ্রধানদের কেউই ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করতে পারবেন না। তাঁদের ব্রিটেনে আসতে হবে বাণিজ্যিক বিমানে। বিমানবন্দর থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না ব্যক্তিগত গাড়ি কিম্বা হেলিকপ্টার। সব রাষ্ট্রনেতাদেরই ভ্রমণ করতে হবে বাসে। পশ্চিম লন্ডনের একটি গোপন স্থান থেকে রাষ্ট্রপ্রধানদের কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনির মধ্য দিয়ে প্রাইভেট বাসে করে নিয়ে যাওয়া হবে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে। "রাষ্ট্রনেতারা সাধারণ মানুষের মত বাসে কীভাবে ভ্রমণ করবেন"- এই প্রশ্নে সরব হয়েছেন লন্ডনে থাকা একাধিক দেশের রাষ্ট্রদূতেরা।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিন্তু নিজের বিশেষ গাড়ি ‘বিস্ট’-এ চড়েই সে দিন অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন। আলাদা গাড়ির বন্দোবস্ত থাকছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর জন্য। নিজের গাড়ি চড়ে রানির শেষকৃত্যে যাবেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এবং জাপানের রাজা নারুহিতোর। এই চারজন থাকছেন নিয়মের বাইরে। ব্রিটিশ প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মূলত নিরাপত্তার কারণে এই চার জনের ক্ষেত্রে বিশেষ গাড়ির ব্যবস্থা কর হচ্ছে। বাকিদের সবার জন্যই থাকছে বাসের ব্যবস্থা। সত্যিক কি তাই! কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চারদেশের ওপর ব্রিটেন কোনো না কোনো ভাবে নির্ভরশীল এবং এই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মনজুগিয়ে চলতে চায় ব্রিটেন।তাই এই ব্যবস্থা।
যাই হোক ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের আমন্ত্রিতের তালিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম থাকলেও তিনি যাচ্ছেন না। ব্রিটিশ রানির জন্য রাষ্ট্রীয় শোক পালন করলেও তিনি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর ১৫ এবং ১৬ সেপ্টেম্বর সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের সামিটে যোগ দিতে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে থাকবেন মোদি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং ইরানের ইব্রাহিম রাইসিও থাকতে পারেন সেখানে। তাই সেই বৈঠক রনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মোদিজীর কাছে। রানির শেষকৃত্যে মোদি লন্ডন না গেলেও ২৭ সেপ্টেম্বর জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের শেষকৃত্যে যোগ দিতে মোদি টোকিও যাবেন বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। এখন শুধু অপেক্ষা ১৯ সেপ্টেম্বরের! যেদিন সারা বিশ্ব দেখবে এক রাজকীয় রাষ্ট্রীয় শোক। যেখানে কেবল তিন রাষ্ট্রপ্রধান এবং একজন রাজা যাবেন নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে!
সিডনিতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের লেখা গোপন চিঠি, খোলা যাবে না একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত
ব্রিটেনের রানীর অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় যোগ ভারতের, লন্ডনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
ছোট নির্বাচনে বড় জয় বিজেপির, শুভেন্দুর গড়ে তৃণমূল দখল থেকে ছিনিয়ে নিস সমবায়