সংক্ষিপ্ত

এশিয়া কাপে (Asia Cup 2022) ভারত বনাম পাকিস্তান (India vs Pakistan) ম্যাচে ৫ উইকেট জয় পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া।  প্রথমে ব্যাট করে ১৪৭ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ২ বল বাকি থাকতে জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় ভারত। ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলার পর হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya) প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেট বিশ্ব।
 

এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে যেভাবে চাপের মুহূর্তে ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ ফিনিশ করেছেন,  বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ১৭ বলে ৩৩ রানের ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলেছেন, তারপর থেকেই আরও একবার ক্রিকেট বিশ্নে হার্দিক পান্ডিয়ার বন্দনা। শেষ ওভারে তৃতীয় বলে কোনও রান করতে পারেননি। তখন ৩ বলে দলের জিততে ৬ রান দরকার। অপরদিকে দীনেশ কার্তিককে যেভাবে ম্য়াচ ফিনিশ করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন হার্দিক সেই ভিডিও ঝড় তুলেছে নেট দুনিয়ায়। ঠান্ডা মাথার য়ে পরিচয় দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া তারপর থেকেই ফিনিশার এমএস ধোনির সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে তারকা অলরাউন্ডারের। তবে নিজের মধ্যে এই পরিবর্তনের জন্য কম কাঠ খড় পোড়াতে হয়নি হার্দিক পান্ডিয়াকে।

'জীবনে প্রথম বার যৌনসঙ্গম করে এসে বাবা-মা’কে বলেছিলাম, করকে আয়া হুঁ!'। পরিচালক করণ জোহারের শো-তে এই একটি বক্তব্য পুরো দেশের কাছে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছিল হার্দিক পান্ডিয়াকে। দেশ জুড়ে উঠেছিল সমালোচনার ঝড়। তবে তার আগে আইপিএলে আবির্ভাব থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আঙিনায় তারকা হয়ে ওঠা, সবক্ষেত্রেই বিতর্ক ছিল হার্দিকের চিরসঙ্গী। লুকস ও স্টাইল স্টেটমেন্টও ছিল সকলের থেকে আলাদা। শরীরে রুক্ষতা, কখনও রঙিন, কখনও আবারা নানা কায়দায় কাটা চুল, কানে ঝকঝকে হীরের দুল, সবসময় একটা খুনে মেজাজ, আগ্রাসন যেন সর্বক্ষণের সঙ্গী। ব্য়াট হাতে নেমেও আগ্রাসন দেখাতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসা। যার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সাফল্যের সঙ্গে শুনতে হয়ছে সমালোচনাও। এটাই ছিল হার্দিক পান্ডিয়ার প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট।   

মাঝে চোট সমস্য়া, ভারতীয় দল থেক বাদ পড়া, কয়েক মাস খানিকটা অন্তরালে থেকে কঠোর পরিশ্রম তারপর আইপিএল ২০২২-এ নতুন অবতারে ফিরে আসা।  আইপিএল ২০২২ থেকেই ২২ গজে শুরু হল  পরিবর্তিত হার্দিকের যাত্রা। গোটা ক্রিকেট বিশ্ব দেখল এক বদলে যাওয়া নতুন হার্দিককে। যা অব্যাহত রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। জাতীয় দলের অধিনায়কক্তও এই সময়তেই পেয়েছেন হার্দিক। সেই চেনা আগ্রাসন, মাঠে আবেগ-উচ্ছ্বাস-ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ, নেই কোনও কিছুই। জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে আমূল পরিবর্তন করে ফেলেছেন। দেশকে ম্যাচ জেতানোর পরও হার্দিক পান্ডিয়ায় অভিব্যক্তি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট সকলকে মুগ্ধ করেছে। এই হার্দিক পান্ডিয়া অনেক বেশি ধীর-স্থির, শান্ত, স্নিগ্ধ। মাঠে লড়াইয়েক মানসীকতা একই থাকলেও তা উপরে প্রকাশ করেননা। হারলেও ভেঙে না পড়ে কীভাবে ঘুড়ে দাঁড়ানো যায় সেই মন্ত্রে বিশ্বাসী।  জিতলে প্রকাশ্যে উচ্ছ্বসিতও হন না।  এই হার্দিক পান্ডিয়া অনেক বেশি পারিবারিক। 

হার্দিক পান্ডিয়ার এই পরিবর্তন বা নয়া অবতার সকলকে মনে করে দিয়েছে আরও একজনের কথা। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। হার্দিক পান্ডিয়ার মধ্যে মাহির ছায়া দেখতে পেয়েছেন সকলেই। যে কোন চাপের পরিস্থিতি ধোনি যেভাবে নিজেকে শান্ত রাখেন, ক্রিজে টিকে থেকে ম্য়াচকে আর ছোট করার চেষ্টা করেন, উচ্ছ্বাসে গা না ভাসিয়ে নিজের কর্মে বিশ্বাসী ধোনি, ঠিক তেমনই হার্দিক যেন একেবারে নিজেকে সেই ছাচেই ঢেলে ফেলেছেন। তাইতো এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে  জয়ের পর পুরো দল যখন উচ্ছ্বাসে ভাসছেন, সেই সময় হার্দিকের মুখে শুধু কেবল একটা মিষ্টি হাসি। ধোনির প্রভাব যে তার জীবনে রয়েছে সেই কথা স্বিকার করেছেন হার্দিকও। অতীতে বলেছেন,'মাহিভাইয়ের আমার জীবনে খুব বড় ভূমিকা নিয়েছে। ও আমার দাদা, বন্ধু এবং পরিবারের অংশ। আমি ওর থেকে অনেক কিছু শিখেছি।' ফলে অনেকের মতেই আইপিএল ২০২২ থেকে জাতীয় দল,  ধোনির পুনর্জন্ম হল হার্দিক রূপে।

আরও পড়ুনঃব্যাটে-বলে হার্দিক পান্ডিয়া শো, রুদ্ধশ্বাস ম্য়াচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারাল টিম ইন্ডিয়া

আরও পড়ুনঃকীভাবে এমএস ধোনির মত 'কুল' হয়ে উঠলেন হার্দিক পান্ডিয়া, জানালেন রোহিত শর্মা