সংক্ষিপ্ত

নব্বই দশকের পরবর্তী সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের এক বর্ণময় চরিত্র অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডস। তাঁর আগ্রাসি মেজাজ ক্রিকেট ময়দান-কে দিত এক আলাদা মাত্রা। দৈত্যাকার চেহারায় একটা আফ্রিকান লুকের তরুণ বিশ্ব ক্রিকেটের ভক্তদের হৃদয়ে দোলা লাগিয়েছিলেন একটা সময়ে। অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকত আফ্রিকানদের মতো দেখতে অ্যান্ড্রিউ আদৌ কি প্রকৃত অস্ট্রেলিয়ান!  

অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডসের জন্মগত যে পরিচয় পাওয়া যায় তাতে জানা গিয়েছে যে তিনি একজন অ্যাফ্রো-ক্যারিবিয়ান বংশজাত। যে সব মানুষ ক্য়ারিবিয়ান কিন্তু তাঁদের বংশজাত সম্পর্কে আফ্রিকা জড়িয়ে রয়েছে তাঁদেরকে সাধারণত অ্যাফ্রো-ক্যারিবিয়ান বলে ডাকা হয়। অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডসও তেমনই একজন ছিলেন। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুলে ছোট ছোট করে বিনুনি থেকে পনিটেল, অস্বাভাবিক মোটা ঠোঁট, চোখের এক মায়াবি দৃষ্টি, বিশালাকার ছাতি এবং সর্বোপরি এক দৈত্যাকৃতি চেহারা- ক্রিকেটার অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডস তরুণীদের হৃদয়ে দোলা দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিলেন। ক্রিকেট ময়দানে অনেকে তাঁর মধ্যে একটা বুনো মেজাজ খুঁজে পেতেন। আসলে তাঁর অ্যাফ্রো-ক্যারিবিয়ান লুকের জন্যও হতে পারে। 

অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডস সম্পর্কে জানা যায় যে তাঁর বাবা ছিলেন একজন অ্যাফ্রো-ক্যারিবিয়ান। মা ছিলেন ডেনিস অথবা সুইডিস। তারা থাকতেন ইংল্যান্ডে। কোনও কারণে অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডসকে মাত্র ৩ মাস বয়সেই দত্তক দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সাইমন্ডসের পালিত মা-বাবা-- বারবারা এবং কেন ইংল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের দত্তক সন্তান অ্যান্ড্রিউ-কেও। দত্তক সন্তান বলে কোনওদিনই মা-বাবার আদর এবং স্নেহ-তে খামতি দেননি বারবারা ও কেন। অ্যান্ড্রিউকে বড় করে তুলতে পালিত বাবা কেন বিশাল ভূমিকা নিয়েছিলেন। অতিতে একাধিক সাক্ষাৎকারে ক্রিকেটার হিসাবে তাঁর উত্থানের পিছনে বাবা কেন-কে কৃতিত্ব দিতেন অ্যান্ড্রিউ। 

অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর অ্যান্ডিউ তাঁর বাবা-মার সঙ্গে উত্তর কুইন্সল্যান্ডের চার্টার্স টাওয়ারে থাকতেন। অ্যান্ড্রিউ-র বাবা-মা আর একজনকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাঁর নাম লুইস সাইমন্ডস। অ্যান্ড্রিউ-র এই ভাই আবার রিয়্যালিটি শো অভিনেতা। এছাড়াও অ্যান্ড্রিউ-র বাবা-মা আরও দুই সন্তান ছিলেন, যাঁরা তাঁদের বায়োলজিক্যাল সন্তান ছিলেন। 

উত্তর কুইন্সল্যান্ডে একটি স্কুলে পড়াতেন অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডসের বাবা। এই স্কুলেই প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল অ্যান্ড্রিউ-কে। খুব ছোট থেকেই খেলাধূলোয় প্রচুর উৎসাহ ছিল অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডসের। তাঁর বাবা কেনেরও ক্রিকেটে প্রচুর উৎসাহ ছিল। যা পরবর্তী সময়ে অ্যান্ড্রিউ-র মধ্যে প্রবাহিত হয়েছিল। সপ্তাহের ছয় দিনই স্কুলে যাওয়ার আগে এবং স্কুল থেকে ফেরার পর অ্যান্ড্রিউকে বল ছুঁড়ে-ছুঁড়ে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করাতেন কেন। এমনকী ঘরের মধ্যেও পিং পং বল অথবা অনেক সময় খ্রিস্টমাসের ডেকোরেশনের মধ্যেও বাবা-ছেলে মিলে শর্ট ক্রিকেট খেলতেন। জুনিয়ার ক্রিকেটার হিসাবে অ্যান্ড্রিউ সাইমন্ডসের অধিকাংশ সময়টা কেটেছে টাউনসভিল-এর ওয়ান্ডার্স ক্লাবে। কিছুদিন পরে কুইন্সল্যান্ডের গোল্ট কোস্টে চলে গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রিউ-র পরিবার। এরপর সেখানেই থাকতে শুরু করেছিলেন এবং ক্রিকেটার হিসাবে এই খান থেকে বিশ্ব ক্রিকেটের আঙিনায় পৌঁছেছিলেন তিনি। 

আরও পড়ুন- 'মাঙ্কিগেট' বিতর্ক তাদের কেরিয়ারের কালো অধ্যায়, 'চিরশত্রু' সাইমন্ডসের প্রয়াণে কী বললেন হরভজন সিং 
আরও পড়ুন- অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অলরাউন্ডার সাইমন্ডসের সেরা ৫ বিতর্ক, যা তাঁর ক্রিকেট কেরিয়র অকালে শেষ করেছিল 
আরও পড়ুন- ৫ লক্ষ মার্কিন ডলারের সম্পত্তি রেখে চির বিদায় নিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস