সংক্ষিপ্ত

জাতীয় দল থেকে রিটায়মেন্টের ক্ষেত্রে (Wriddhiman Saha) বয়স শুধু বাধা হতে পারে না বলেই মত জয়ন্ত ভৌমিকের (Jayanta Bhowmick) (Exclusive Interview)। তিনি মনে করছেন, ক্রিকেটে দুটো জিনিসের প্রাধান্য সবার আগে (Controversy Over Wriddhiman Saha's Drop From Indian Cricket Team)। একটা ফিটনেস এবং অন্যটা পারফরম্যান্স।

চক্রান্তের শিকার হয়েছে ঋদ্ধিমান। এই চক্রান্তের পিছনে কারা তা আগামীদিনে নিশ্চিতভাবে সামনে আসবে। ঋদ্ধিমান সাহার (Wriddhiman Saha)জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া বিতর্কে এভাবেই আরও এক বিস্ফোরণ ঘটালেন প্রখ্যাত ক্রিকেট কোচ জয়ন্ত ভৌমিক (Jayanta Bhowmick) তথা ভাইদা। শিলিগুড়িতে ক্রিকেট কোচিং করালেও কোচ হিসাবে আজ বাংলা-সহ ভারতবর্ষে সমাদৃত হন তিনি। ঋদ্ধিমান সাহার মতো প্রতিভা-র লালনপালন তাঁর হাতেই হয়েছিল। ফলে ঋদ্ধিমানের ক্রিকেট মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে মানবিক গুণ সবেতেই তিনি সমান ওয়াকিবহাল। ঋদ্ধিমান-কে বয়সে যুক্তি দিয়ে জাতীয় দলের (National Team) বাইরে ঠেলে দেওয়াটা তাঁকে অবাক করেছে। তাঁর সাফ কথা, 'ঋদ্ধি লড়াকু ছেলে, ও জানে কোথায় এবং কখন থামতে হয়। ঋদ্ধিমান ফের জাতীয় ক্রিকেটের মূল স্রোতে ফিরে আসবেন বলেই আশাবাদী কোচ জয়ন্ত ভৌমিক। 

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার এডিটর দেবজ্যোতি চক্রবর্তীকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে (Exclusive Interview) জয়ন্ত ভৌমিক আরও জানিয়েছেন যে তাঁকে সবচেয়ে অবাক করেছে স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের (Snehashis Ganguly) মন্তব্য। অতিতে বাংলার ক্রিকেটারকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে বহু প্রতিবাদ হয়েছে। সমর পালস রাজা ভেঙ্কটরা নির্বাচক কমিটি থেকে পদত্যাগ করারও হুমকি দিয়েছিলেন। অথচ ঋদ্ধিমান সাহা-র ক্ষেত্রে বঙ্গ ক্রিকেটের কর্তারা কোনও প্রতিবাদ-ই করবেন না এ কেমন কথা! 

জয়ন্ত ভৌমিক এমনও বলেছেন যে ঋদ্ধিমান তাঁর পারফরম্যান্স ও যোগ্যতা দিয়েই ভারতীয় দলে টিকে ছিলেন। এমনটা কখনও হয়নি যে ঋদ্ধিমানের পারফরম্যান্স না থাকায় তাঁকে দলের সঙ্গে বহন করা হয়েছে। জাতীয় দল থেকে রিটায়মেন্টের ক্ষেত্রে বয়স শুধু বাধা হতে পারে না বলেই মত জয়ন্ত ভৌমিকের। তিনি মনে করছেন, ক্রিকেটে দুটো জিনিসের প্রাধান্য সবার আগে। একটা ফিটনেস এবং অন্যটা পারফরম্যান্স। ঋদ্ধিমানের এই দুটো জায়গায় কোনও খামতি খোদ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট দেখাতে পারেনি। ফিটনেসে ভারতীয় দলের প্রথম তিন ক্রিকেটারের মধ্যে ঋদ্ধিমানও পড়েন। যখনই টিম তাঁকে যেভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে ঋদ্ধি সেভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। সারাক্ষণ ব্যাটিং লাইন-আপে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়েছে ঋদ্ধিমানকে। কিন্তু কোনও দিনই একবারের জন্য না বলেননি ঋদ্ধিমান। এরপরও পারফরম্যান্স করেছেন অথচ বারবার দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একজন ১৯ টা ২০ টা করে টেস্টে ইনিংস খেলে অশ্ব ডিম্ব প্রসব করছেন। অথচ, ঋদ্ধি যখনই নামছেন উইকেট কিপিং থেকে শুরু করে ব্যাটিং-এ নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। এরপরও তাঁকে কোনও যুক্তিতে বয়সের কারণে ভারতীয় দলের বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হল! এমন প্রশ্ন করেছেন ঋদ্ধিমানের কোচ জয়ন্ত ভৌমিক। 

ঋদ্ধিমানকে আজ সঠিকভাবে ভারতীয় দলে ব্যবহার করলে ৫০টিও বেশি টেস্ট খেলা হয়ে যেত তাঁর। এমন মন্তব্যও করেছেন জয়ন্ত ভৌমিক। তবে, তিনি মনে করেন ঋদ্ধিমান একজন লড়াকু ছেলে। ও ঠিক নিজের যোগ্যতার প্রমাণ আবারও দিয়ে দেবে। ঋদ্ধি কখনও ময়দান ছেড়ে পালায় না বলেও দাবি করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলে ফিরে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ করেছে। একাধিক হারতে বসা ম্যাচকে ভারতের ঝুলিতে নিয়ে এসে দিয়েছে। এত কিছুর পর যে আচরণটা বিসিসিআই  ঋদ্ধির সঙ্গে করেছে তার পিছনে অন্যকিছু রয়েছে। জয়ন্ত ভৌমিক আরও জানিয়েছেন যে, অবসর যে কোনও মানুষের জীবনের অঙ্গ। বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে এখনকার ক্রিকেটে একজন খেলোয়াড়ের পিক টাইম হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ বছর। এরপরই অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ফিটনেস এবং ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলছে। সেখানে একজন ক্রিকেটার ৩৫-৩৭ বছর বয়সেও একজন অল্পবয়সীর মতো ফিটনেস ও ধারবাহিকতার নির্দশন রাখছে- এটা তো একটা সেরা বিজ্ঞাপন ক্রিকেটের ময়দানে। সেখানে বৈমাত্রেয়সুলভ আচরণ কেন! এমন প্রশ্নও করেছেন জয়ন্ত ভৌমিক। তাঁর মতে, বর্তমান ভারতীয় দলে বহু ক্রিকেটার রয়েছেন যাঁদের বয়স ৩৫ পার করেছে। তাহলে তাঁদের কেন ধরে রাখা হল, অথচ ঋদ্ধিকে বাদ দিয়ে দেওয়া হল? 

এক ক্রীড়া সাংবাদিক যেভাবে ঋদ্ধিমানকে হুমকি দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠিয়েছেন তা নিয়েও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এই ক্রিকেট কোচ। তিনি জানিয়েছেন, ভারতীয় ক্রিকেটে ড্রেসিংরুমে যা হচ্ছে তা এই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেই প্রমাণ। একজন ক্রীড়া সাংবাদিক কীভাবে এভাবে একজন জাতীয় দলের ক্রিকেট সদস্যকে হুমকি দিতে পারেন! এর তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন ঋদ্ধিমানের ক্রিকেট কোচ। 

আরও পড়ুনঃআমায় ইন্টারভিউ না দিয়ে চরম ভুল করলে, এর ফল ভুগতে হবে', ঋদ্ধির হোয়াটসঅ্যাপ শাসানি মেসেজ সাংবাদিকের

আরও পড়ুনঃ'আমি আসলে কষ্ট পাই নি' ঋদ্ধিমান সাহার মন্তব্যে এবার মুখ খুললেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়

রণজি খেলার জন্য সিএবি কর্তারা ঋদ্ধিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সেভাবে সাড়া পাননি বলে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতেও নিজের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জয়ন্ত ভৌমিক। তিনি জানিয়েছেন,  বিরাট কোহলি থেকে কে এল রাহুল যখন-তখন না খেলার কথা বলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো অথবা কোনও বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন। সেখানে ঋদ্ধিমান একটানা যেভাবে ভারতীয় দল এবং আইপিএল-এর জন্য বায়োবাবল-এর গণ্ডীর মধ্যে ছিল তাতে একটা মানসিক ক্লান্তি এসেছে। পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে নিজেকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে চেয়েছিল ঋদ্ধি। অথচ তাতেও ভুল খুঁজে বেড়ানো হচ্ছে। ঋদ্ধিমান একজন ভারতীয় টেস্ট দলের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছিল। সেখানে সে যদি একটানা ক্রিকেটের বাইরে এসে একটু পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে তাহলে কী সেটাকে মর্যাদা দেওয়াটা অত্যন্ত অন্যায় আবদার বলে বিবেচিত হবে? এমন প্রশ্নও করেছেন জয়ন্ত ভৌমিক। পাশাপাশি, তিনি আরও জানিয়েছেন, ঋদ্ধি খুব অল্প কথার মানুষ। কারওর সম্পর্কেই কোনও দিন কাউকে অভিযোগ করে না। সব সময়ই পারফরম্যান্স ও ফিটনেসে জোর দেয়। ও যেটা ৪ লাইনে বলবে, অন্যরা সেটা নিয়ে ১০ পাতা কথা বলবে। তবে, শিষ্য যে বিতর্কেকে পিছনে ফেলে নিজের যোগ্যতাকে ফের তুলে ধরবে তাতে যথেষ্টই আশাবাদী ক্রিকেট কোচ জয়ন্ত ভৌমিক।