সংক্ষিপ্ত


অধিনায়কত্বের বিষয়ে কোন কঠোর আত্ম-মূল্যায়ন করেননি বিরাট কোহলি। বরং, টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। 
 

বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একপ্রকার বোমা ফাটালেন বিরাট কোহলি। জানিয়ে দিলেন, আসন্ন আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরই তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের পদ থেকে সরে যাবেন। তবে এরপরও টেস্ট ক্রিকেট এবং ওয়ানডেতে তিনি দলের নেতৃত্ব দেবেন। মজার বিষয় হল, টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসাবে বিরাট কোহলি কিন্তু, তার অধিনায়কত্বের বিষয়ে কোন কঠোর আত্ম-মূল্যায়ন করেননি। বরং, বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। 

টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার প্রধান কারণ হিসাবে তিনি ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট বা কাজের বোঝাকে দায়ী করেছেন। কোভিড মহামারি জনিত  ক্রিকেট বিরতির পর, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ভারত খেলেছে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে মাত্র ৮টি। তাছাড়া, টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের সবথেকে বেশি চাপ থাকে আইপিএলে, আন্তর্জাতিক খেলায় নয়। তাহলে কি আরসিবি অধিনায়কের পদ থেকেও সরে দাঁড়াবেন কোহলি? নাহলে কিন্তু, তিনটি ফরম্যাটের সব থেকে নিচের ধাপের খেলার অধিনায়কত্ব ছাড়ার পিছনে, কাজের বোঝার যুক্তিটা টিকবে না। 

আরও যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হল এই সিদ্ধান্তের ব্যপ্তি কি শুধু ৪০ ওভারের ফর্ম্যাটে আটকে থাকবে? রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতকে যদি ধারাবাহিকভাবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জিততে থাকে, তাহলে তাকে ওয়ানডেতেও নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়ার আওয়াজ ওঠাটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা হবে। বিশেষ করে, দুই সাদা বলের ক্রিকেটেই মোটামুটিভাবে েকই ভারতীয় ক্রিকেটাররা খেলে থাকে। ঘরের মাঠে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রলোভন হয়তো বিরাট কোহলি প্রতিরোধ করতে পারেননি। তবে েটাই কিন্তু তার জায়গাটা বিভ্রান্তিকর করে তুলেছে। 

আর এখানেই বলটা কোহলি বিসিসিআই এবং নির্বাচকদের কোর্টে ছুড়ে দিয়েছেন। আমি ছেড়ে দিচ্ছি না বলে, তিনি বলেছেন, যদি চান, আমাকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকেও সরিয়ে দিন। অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তটা খেলোয়াড়দের উপর কখনই থাকে না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা নির্বাচকদেরই নিতে হয়। ই ক্ষেত্রে সম্ভবত, রোহিত শর্মা কীরকম নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা কয়েক মাস দেখার পর বোর্ড আগামী বছর এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে। 

আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হল, অধিনায়ক হিসাবে কোহলি কিন্তু, একেবারে মহেন্দ্র সিং ধোনির বিপরীত রাস্তায় হাটছেন। এমএস ধোনি টেস্ট ম্যাচ অধিনায়কত্বে কখনই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। টেস্ট ম্যাচের অধিনায়কত্ব ছেড়ে টি -টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতেই মন দিয়েছিলেন বেশি।    কোহলি, আবার টেস্ট ফর্ম্যাটেই আপাতদৃষ্টিতে বেশি নিবেদিত। ইংল্যান্ডে সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজে তার অধিনায়কত্ব প্রশংসিত হয়েছে। পাঁচ দিনই স্বতস্ফূর্তভাবে তার তীব্রতা বজায় রাখার ক্ষমতা অবিশ্বাস্য। তার অধিনায়কত্বের শুরুতে মনে করা হত, তার আগুনে স্বভাব সংক্ষিপ্ত ফর্ম্যাটেই বেশি মানানসই হবে। কিন্তু, তার আইপিএলের ইতিহাস অন্যকথাই বলে। 

আইপিএল-ের মতো অত খারাপ অবস্থা আন্তর্জাতিক ম্যাচে নয়। এই বছর কোহলির অধীনে ভারত একটিও টি -টোয়েন্টি সিরিজ হারেনি। ইংল্যান্ডে (৩-২), অস্ট্রেলিয়ায় (২-১), শ্রীলঙ্কায় (২-০) এবং নিউজিল্যান্ডে (৪-০)-এয় জয় পেয়েছে। কিন্তু, ওয়ানডের মতোই টি-টোয়েন্টিতেও তাকে সমালোচনার মুকে পড়তে হয়েছে ফাকা  ট্রফি ক্যাবিনেটের কারণে। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ভারত এখন এতটাই এগিয়ে, যে আইসিসি ট্রফি না পাওয়াটাই ব্যর্থতা হিসাবে ধরা হচ্ছে। রোহিত শর্মা সেই ফিনিশিং লাইন পার করানোর দায়িত্ব নিতে পারেন  কিনা এখন সেটাই দেখার। 
 

YouTube video player