সংক্ষিপ্ত
বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজোর সূত্রপাত স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো করার পর ১০৮টি পদ্ম মা সারদার পায়ে দিয়ে জ্যান্ত দুর্গার পুজো করলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
অনিরুদ্ধ সরকার:- বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজোর ( Durga Pujo at Belur Math ) সূত্রপাত স্বামী বিবেকানন্দের ( Swami Vivekananda) হাত ধরে। শেষ মুহুর্তে কপালগুনে মিলেছিল প্রতিমা।বালি,বেলুড়,উত্তরপাড়ার বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ পন্ডিত ও তার্কিকরা কথায় কথায় বেলুড় মঠের (Monk of Belur Math) সন্ন্যাসীদের নিন্দা করতেন, কটাক্ষ করে বলতেন 'মঠের আচার বিচার খাবার-দাওয়ার কোনও বাদবিচার নেই'। সেই সন্ন্যাসীরাই বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা দেখে আনন্দে গদগদ হয়ে বললেন, "মঠের সন্ন্যাসীরা যথার্থ হিন্দুসন্যাসী,সনাতন মার্গ বিরোধী নন।"
১৯০১ এর মে-জুন মাস।স্বামীজীর সাথে বেলুড় মঠে দেখা করতে এসেছেন শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী।শরতবাবুকে স্বামীজী হঠাৎ বললেন -যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমায় রঘুনন্দনের 'অষ্টাবিংশতি-তত্ত্ব' এনে দিতে পারেন।শুনে শরতবাবু একটু অবাক হয়ে বললেন, 'বর্তমান শিক্ষিত সম্প্রদায় যাকে কুসংস্কারের ঝুড়ি বলে, ও নিয়ে আপনি কি করবেন?' স্বামীজী বললেন,' এবার মঠে দুর্গোৎসব করার ইচ্ছে হচ্ছে! তাই দুর্গোৎসববিধি পড়বার ইচ্ছে হয়েছে।'কয়েকদিনের মধ্যেই শরতবাবু গ্রন্থখানি কিনে এনে দিলেন।চার-পাঁচ দিনে স্বামীজীর তা পড়াও হয়ে গেল।দূর্গাপুজো নিয়ে স্বামীজী আর কোথাও কোন আলোচনা করলেন না।
আরও পড়ুন, Durga Puja2021: ছৌ শিল্পের আদলে ৩ সেমি অভিনব দুর্গা বানিয়ে তাক লাগালেন বাঁকুড়ার শিল্পী
দুর্গাপুজোর ঠিক দিন দশ-বারো আগের ঘটনা।স্বামীজী (Kolkata) কলকাতা থেকে নৌকায় করে বেলুড় মঠে ফিরেই খোঁজ করলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দের এবং তাকে মঠে দুর্গাপূজোর আয়োজন করতে বললেন।ব্রহ্মানন্দ তো শুনে অবাক! স্বামীজীর কাছে দু-দিনের সময় চাইলেন ও বললেন,'এখন প্রতিমা পাওয়া যায় কিনা দেখতে হবে।'পূজোর তখন আর হাতে গোনা চার-পাঁচ দিন বাকি।হন্যে হয়ে খোঁজ করে কলকাতার (Kumortuli) কুমোরটুলিতে মিলল একটি প্রতিমা,তাও কপালগুনে। তা যিনি ফরমাশ দিয়েছিলেন তিনি কোন কারনে প্রতিমা নিয়ে যাননি। সেই প্রতিমাতেই হল বেলুড় মঠের প্রথম দুর্গাপূজা।স্বামীজী জানালেন, কৌপিনধারী সন্যাসীদের পূজা বা ক্রিয়া সংকল্প করার অধিকার নেই।অতএব সঙ্কল্প হল মা'সারদার নামে। ষষ্ঠীর বোধনের দু-একদিন আগে নৌকায় করে মঠে এল দূর্গা প্রতিমা।প্রতিমা মঠে নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর পরই নামল মুষলধারে বৃষ্টি।
পূজোর পুরোহিত নিযুক্ত হলেন মঠের ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল। আর তন্ত্রধারক হলেন মঠেরই সন্যাসী স্বামী রামকৃষ্ণানন্দের পিতা ঈশ্বরচন্দ্র ভট্টাচার্য। ঘটনাটা ঘটল পশুবলিকে কেন্দ্র করে।পুজোর নিয়ম মেনে স্বামীজী পশুবলির পক্ষে ছিলেন।কিন্তু মা'সারদা পশুবলির বিরোধিতা করলেন।পশুবলির বিকল্প হিসেবে মাদূর্গাকে দেওয়া হল চিনির নৈবেদ্য আর স্তুপিকৃত মিষ্টান্ন। গরীব,দুঃখী,কাঙাল ভোজন চলল পূজো তিন দিন ধরে। বালি,বেলুড়,উত্তরপাড়ার বিশিষ্ট পন্ডিত,ব্রাহ্মণ, তার্কিক,বিদ্বজ্জনেরা এলেন।যারা কথায় কথায় বেলুড় মঠের সন্যাসীদের নিন্দা করতেন, কটাক্ষ করতেন,বলতেন 'মঠের আচার বিচার খাবার-দাবারের কোন বাদবিচার নেই'।তারাই মঠে সন্ন্যাসীদের দুর্গাপূজা দেখে আনন্দে গদগদ হয়ে বললেন, 'মঠের সন্যাসীরা যথার্থ হিন্দুসন্যাসী,সনাতন মার্গ বিরোধী নন।'
এদিকে মহাঅষ্টমীর আগের দিন থেকে স্বামীজীর প্রচণ্ড জ্বর।পূজোমণ্ডপে যেতে পারলেন না। সন্ধিপূজোর সময় জ্বর গায়েই উঠলেন মণ্ডপে। পুষ্পাঞ্জলি দিলেন।রামলালদাদার কন্যাকে স্বামীজী কুমারী পুজোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন। পুজো হল। অসুস্থ শরীরেই করলেন কুমারী পুজো।অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো করার পর ১০৮টি পদ্ম মা সারদার পায়ে দিয়ে জ্যান্ত দুর্গার পুজো করলেন স্বামী বিবেকানন্দ। নবমীর দিন তিনি একটু সুস্থ। একসময় শ্রীরামকৃষ্ণ নবমীর দিন যেসব গান গাইতেন স্বামীজীও সেই সব গানের দু-একটি গান গাইতে লাগলেন সেদিন।নবমীর পূজো শেষে মা'সারদা যজ্ঞ করলেন। স্বামীজী মা'সারদার হাত দিয়ে তন্ত্রধারক ঈশ্বরচন্দ্রকে পঁচিশ টাকা দক্ষিণা দেওয়ালেন। বিজয়া দশমী।লোকে লোকারণ্য।স্বামীজীর শরীর অসুস্থ থাকায় নিচে নামতে পারেননি। নিয়ম মেনে সন্ধেবেলায় মঠের সন্ন্যাসী ও অন্যানদের সহায়তায় দূর্গাপ্রতিমা গঙ্গায় বিসর্জন করা হল। সবাই গঙ্গার ধারে আওয়াজ তুললেন- দুর্গা মাইকি জয়..... আসছে বছর আবার হবে।
ঋণ:যুগনায়ক বিবেকানন্দ- স্বামী গম্ভীরানন্দ
আরও দেখুন, বিরিয়ানি থেকে তন্দুরি, রইল কলকাতার সেরা খাবারের ঠিকানার হদিশ
আরও দেখুন, কলকাতার কাছেই সেরা ৫ ঘুরতে যাওয়ার জায়গা, থাকল ছবি সহ ঠিকানা
আরও দেখুন, মাছ ধরতে ভালবাসেন, বেরিয়ে পড়ুন কলকাতার কাছেই এই ঠিকানায়
আরও পড়ুন, ভাইরাসের ভয় নেই তেমন এখানে, ঘুরে আসুন ভুটানে