অ্যাডভোকেট সম্পূর্ণা ঘোষের তথ্যচিত্র "আমিও নাগরিক" সংশোধনাগারের বন্দিদের মর্যাদা, পুনর্বাসন এবং সমাজে ফিরে আসার অধিকারের কথা বলে। শাস্তি শেষে প্রত্যেক পরিবর্তিত মানুষের একটি মর্যাদাপূর্ণ দ্বিতীয় সুযোগ প্রাপ্য, কারণ তারাও সমাজের নাগরিক।
সমাজে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া মানে তাদের পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেওয়া, ন্যায়বিচারের মূল চেতনা রক্ষা করা এবং আমাদের সামাজিক কাঠামোকে আরও দৃঢ় করা। শেষ পর্যন্ত, কারও অতীত কখনও তার ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারে না, প্রত্যেক পুনর্গঠিত মানুষ আজীবনই নাগরিক।– এমনই চিন্তা ধারাকে অঙ্কন করে তথ্যচিত্র তৈরি করেন অ্যাডভোকেট সম্পূর্ণা ঘোষ। ছবির নাম “আমিও নাগরিক”। এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে বিচার, পুনর্বাসন ও সমাজে পুনর্মিলনের মানবিক দিকটি গভীরভাবে তুলে ধরেন তিনি। এই চলচ্চিত্রটি সংশোধনাগারগুলিতে বন্দিদের জীবনযাপন, তাদের সংগ্রাম, পরিবর্তন এবং মুক্তির পর সমাজের মূলধারায় ফিরে আসার কঠিন বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সংশোধনাগার আজ আর শুধুই শাস্তি দেওয়ার স্থান নয়, বরং এটি পুনর্বাসন, দক্ষতা উন্নয়ন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আচরণগত পরিবর্তনের ক্ষেত্র। তবু বহু বন্দি এখনো বিলম্বিত বিচার, সামাজিক কুসংস্কার, চাকরিতে বঞ্চনা এবং নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন, যা তাদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও আবার অবৈধ কাজের দিকে ঠেলে দেয়। তথ্যচিত্রটির প্রধান বক্তব্য—বিচারব্যবস্থার প্রদত্ত শাস্তি শুধুমাত্র সংশোধনাগারের সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত; বন্দি মুক্ত হওয়ার পর তাকে মর্যাদাসম্পন্ন একটি ন্যায্য দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া ামাদের সমাজের দায়িত্ব।
উল্লেখ্ অ্যাডভোকেট সম্পূর্ণা ঘোষ কলকাতা হাই কোর্টে অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছেন, যাতে বিচারাধীন বন্দিদের যথাযথ আইনি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায় । তিনি বন্দি, তাদের পরিবার ও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন, যাতে সংশোধনাগারের পুনর্বাসন ব্যবস্থা বিচার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। তিনি মনে করেন, “একটি ভুল কোনো মানুষের ভবিষ্যত মুছে দিতে পারে না। কেউ যদি পরিবর্তিত হয়ে সমাজের প্রতি তার ঋণ শোধ করে থাকে, তবে তাকে মর্যাদা বা সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা ন্যায় নয়—এ তো শাস্তিরই রূপ। প্রত্যেক পরিবর্তিত মানুষই ন্যায্য দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখে, কারণ সেও নাগরিক।”

“আমিও নাগরিক”–তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনী হয় ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম হল-এ। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্সি ও দমদম সংশোধনাগারের বন্দিদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল বিশেষ আকর্ষণ, যা তাদের সৃজনশীলতা, পরিবর্তন এবং ভবিষ্যতের আশাকে তুলে ধরে। এই তথ্যচিত্র বিচারব্যবস্থা, সংশোধনাগার দপ্তর, আইনজীবী মহল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বিভিন্ন কর্মদাতা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের কাছে আহ্বান জানায়। এই তথ্যচিত্রটি একটি সামাজিক বিষয়ক ও অধিকারভিত্তিক উদ্যোগ, যেখানে পর্যবেক্ষণমূলক ও অংশগ্রহণমূলক গল্প বলার ধারা ব্যবহার করে সংশোধনাগারের বন্দিদের ব্যক্তিগত যাত্রা এবং মর্যাদার সঙ্গে সমাজে ফেরার অধিকারের সংগ্রামকে তুলে ধরা হয়েছে।


