সংক্ষিপ্ত

অলিভিয়ার প্রার্থনা, ‘বড় মুখ করে সব্যসাচী সবাইকে বলেছে, আমি হাসপাতালে ভর্তি করেছি আমিই নিজে হাতে ওকে বাড়িতে নিয়ে ফিরব। ওর মুখটা তুমি রেখো ঠাকুর!’

কলকাতার বাইপাসের ধারে তখন সদ্য পাঁচতারা হোটেল তৈরি হয়েছে। আর জি বাংলার ফুটবল ম্যাচের আয়োজন। অলিভিয়া সরকার আর ঐন্দ্রিলা শর্মা সেই লিগ ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আনন্দে, উত্তেজনায় ফুটতে ফুটতে দুই অভিনেত্রী হাজির সেই পাঁচতারা হোটেলে। সেখানে ম্যাচের জন্য আলাদা ফটোশ্যুট। হোটেল দেখে এতটাই মুগ্ধ তাঁরা যে শ্যুটের ফাঁকেই ঠিক করে ফেললেন, আলাদা করে এক দিন দু’জনে আসবেন। নিজেদের মর্জিমতো চুটিয়ে ফটোশ্যুট করবেন। সেই বন্ধুত্বের শুরু। তার পরে কাজে বিচ্ছেদ পড়েছে। বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়েছে। তাঁদেরই এক জন বেসরকারি হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কী করে মন ভাল থাকে দ্বিতীয় বান্ধবীর? এশিয়ানেট নিউজ বাংলা যোগাযোগ করতেই মনখারাপের মেঘ অলিভিয়ার কথায়। অকপটে জানালেন, ‘ক’দিন ধরে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হচ্ছে সৌরভ দাস, সব্যসাচী চৌধুরী এবং আমার টলিউডের বন্ধুদের সঙ্গে। কোথা থেকে কী হয়ে গেল? একটা তরতাজা মেয়ের উপর দিয়ে বারবার ঝড় বইছে! ঈশ্বর কি এতটাই নিষ্ঠুর?’

বলতে বলতে গলা বুঁজে এসেছে তাঁর। ফিরে গিয়েছেন অতীতে। যখন কাজের হাত ধরে বন্ধুত্ব এসেছে। একটা সময় প্রায়ই দুই বান্ধবী মিলে রাত জেগে ফোনে আড্ডা দিতেন। হোয়াটসঅ্যাপে টুকরো কথার ঝাঁপি উপুড়। অলিভিয়ার কথায়, দ্বিতীয় বার ক্যান্সারের সময় ঐন্দ্রিলা বেশ ভেঙে পড়েছিল। তখন গোটা টলিউড ওর পাশে। সবাই সাহস, ভরসা দিয়েছে। বলেছে, ঐন্দ্রিলা ফাইটার। তাই ঈশ্বর এত পরীক্ষা নিচ্ছে। সেই পরীক্ষার মাত্রা যে এত ভয়ঙ্কর হবে, কে জানত! টলিপাড়াতেই গুঞ্জন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নাকি কাজে ফিরেছিলেন ঐন্দ্রিলা। প্রচুর কাজ করছিলেন। এতটা পরিশ্রম করাও বোধহয় ঠিক হয়নি। তাই কি এই বিপর্যয়? অভিনেত্রী এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁর পাল্টা যুক্তি, টলিউডে এমন অনেক মানুষ আছেন, সমস্যা দেখলে মুখ খোলেন না। সমস্যা মিটে গেলে সবজান্তার মতো বলেন, ‘আমি জানতাম এটাই হবে। আগে থেকেই মন হচ্ছিল।’ তাঁর মতে, এ বিষয়ে সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন ওর মা-বাবা, দিদি আর সব্যসাচী। কারণ, ওঁরা ওর সব ভালমন্দের সাক্ষী। নিজেদের হাতে নাড়াচাড়া করছেন। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ অলিভিয়া।

 

 

দুই বান্ধবীর আড্ডা মানেই অবধারিত পরচর্চা! ফোনে অলিভিয়া, ঐন্দ্রিলাও কি তাই-ই করতেন? পরচর্চা শব্দে তীব্র আপত্তি অলিভিয়ার। প্রতিবাদ জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘আমি যদিও বা কখনও অন্যদের সঙ্গে পরচর্চা করেও ফেলি, ঐন্দ্রিলা সেই বান্দা নয়। ও সারা ক্ষণ নিজের স্বপ্নে বিবোর থাকত। কী কী করেছে। কী করছে। আর কী কী করা বাকি— তাই নিয়ে রাজ্যের গুলতানি। আর মজা, হুল্লোড় করতে ওর জুড়ি নেই। দল জুটিয়ে উদযাপন করতে হবে। সবার আগে এক পায়ে খাড়া ঐন্দ্রিলা। ওর ডাকে সাড়া দিয়ে সবাই চলেও আসত! সেটে কাজ করতে করতে কম মজা করেছে! আর বলত সব্যসাচীর কথা। সেই মেয়ে এ ভাবে শুয়ে থাকবে, দেখতে কারওর ভাল লাগে?’ এ বছরের পুজোও নাকি তাঁর বন্ধু প্রাণখুলে উপভোগ করেছেন। যা আগের বছরগুলোয় পারেননি। ঐন্দ্রিলা নিজে সে কথা স্বীকারও করেছিলেন।

অলিভিয়া তাই আপাতত কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছেন। সামনেই পরপর তাঁর তিনটি কাজ মুক্তি পাবে। তার প্রস্তুতি চলছে। বাকি সময় অভিনেত্রী বন্ধুর জন্য প্রার্থনা করেই কাটাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘রোজই ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে কারওর না কারওর সঙ্গে কথা হচ্ছে। সৌরভ সোমবার ব্যাঙ্কক রওনা দিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ওর আগামি ছবি ‘বিবাহ অভিযান ২’-এর শ্যুট শুরু। খুব মনখারাপ নিয়ে শ্যুট করতে গিয়েছে। বলছিল, গত সপ্তাহতেও ভাল ছিল। হঠাৎ করে এত শরীরখারাপ হয়ে গেল ঐন্দ্রিলার! ওকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না।’ পাশাপাশি, অলিভিয়া চিন্তিত সব্যসাচীর জন্যও। বক্তব্য, সেই যে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে তার পর থেকে আর ঘেরাটোপের বাইরে পা বাড়ায়নি অভিনেতাও। সারা ক্ষণ এক কোণে চুপ করে বসে। মানুষ হিসেবে সব্যসাচী প্রচণ্ড ভাল। প্রেমিক হিসেবে যেন অতুলনীয়। সেই জায়গা থেকেই অলিভিয়ার প্রার্থনা, ‘বড় মুখ করে সব্যসাচী সবাইকে বলেছে, আমি হাসপাতালে ভর্তি করেছি আমিই নিজে হাতে ওকে বাড়িতে নিয়ে ফিরব। ওর মুখটা তুমি রেখো ঠাকুর!’

আরও পড়ুন

সন্তানতূল্য ২ সারমেয়কে সাগর জলে জীবন মন্ত্রের বীজ দিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা, আজ তিনি নিজেই লড়াই করছেন

সৌমিত্রর অভাব পূরণীয়? ভাবীকাল মনে রাখবে তাঁকে? জানালেন কমলেশ্বর, ঋতব্রত, দীপ্সিতা, শ্রীকান্ত

জীতুর ডিপিতে সব্যসাচীর ছবি! অনিন্দ্যর দাবি, সব্যসাচীর মতো প্রেমিক ঈশ্বর আর বানায় না