সংক্ষিপ্ত
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে নজর সরাতেই কি এই ছবি? ছবি দেখে ক্ষুণ্ণ হতে পারেন বাম দলের সমর্থক, নেতারা। বাহবা জুটতে পারে শাসকদলের থেকে।
কামদুনির ক্ষত এখনও মেলায়নি। পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড টাটকা। মরিচঝাঁপি, অতি সাম্প্রতিক টেট কেলেঙ্কারি—শাসকদলের ‘কলঙ্কিত অধ্যায়’ বলে দাগানো। এত কিছুর মধ্যেই বড় পর্দায় ফিরছে জ্যোতি বসুর আমলের আমলের সবচেয়ে চর্চিত ঘটনা ‘বানতলা ধর্ষণ কাণ্ড’! নয়ের দশকের বাম কেলেঙ্কারির খাতা একুশ শতকে নতুন করে খুলতে চলেছেন ‘নদী রে তুই’, ‘আহুতি’, ‘আইডেন্টিটি’, ‘ডে’-খ্যাত পরিচালক কিংশুক দে। কেন? প্রশ্ন উঠেছে টলিউডে। এমনও শোনা যাচ্ছে, শাসকদলের দুর্নীতি চাপা দিতেই নাকি তাঁর এই ভাবনা এবং পদক্ষেপ! সত্যিই?
চর্চা শুধু এই একটিই নয়। ছবির সৌজন্যে তিনি ফ্রেমবন্দি করতে চলেছেন বর্তমান-প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী, জ্যোতিবাবু-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কী ভাবে? জানতে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা যোগাযোগ করেছিল পরিচালক এবং জ্যোতি বসুর চরিত্রাভিনেতা সঞ্জীব ঘোষের সঙ্গে। পরিচালকের সাফ জবাব, ‘কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে নয়, আমাদের রাজ্যে যে যে অঘটন আজও ফাইল-বন্দি তাদের মধ্যে থেকে বেছে নিয়েছি সবচেয়ে চর্চিত বানতলাকে। যা এখনও বিভিন্ন আলোচনায় উঠে আসে। সেই জন্যই আমার ছবির নাম ‘দ্য রেড ফাইলস’।’ যে ফাইলগুলো সময়ের নীচে চাপা পড়ে যায়। যে ঘটনা সময়ের প্রবাহে হারিয়ে যায়। তাকে ফিরে দেখাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য। আজ বানতলা উঠে আসছে। আগামিতে হয়তো টেট কেলেঙ্কারি তাঁর ছবির বিষয় হবে। এবং ধর্ষণের মতো নিন্দনীয় ঘটনা প্রতি সেকেন্ডে ঘটে চলেছে। যে কারণে, নারী আগেও নিরাপদ ছিল না। একুশ শতকেও সে নিরাপদ নয়। কেন হবে এমনটা? সেই প্রশ্নই তুলবে তাঁর আগামি ছবি। নিবেদনে ব্লু বেরি এন্টারটেনমেন্ট, প্রযোজনায় মিনু পারেখ ও নীলেশ পারেখ।
প্রশ্ন তুলতে গিয়ে শুধু যে বানতলা ধর্ষণ কাণ্ড উঠে আসবে তা নয়। পরিচালকের দাবি, গুজরাত, হরিয়ানা, নাবালিকা ধর্ষণের মতো ঘটনা পর্দায় নতুন করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখা দেশের পরিস্থিতি। দুই সময়ের মুখ্যমন্ত্রীরাও উঠে আসবেন তাঁদের মতো করে। বানতলা ধর্ষণকাণ্ডের সময়ে তৎকালীন শাসকদল এবং বিরোধী দলের বিশিষ্টরা যে ভাবে ছিলেন, সে ভাবেই। কিন্তু দর্শকদের মনে হতেই পারে, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে নজর সরাতেই এই ছবি। ক্ষুণ্ণ হতে পারেন বাম দলের সমর্থক, নেতারা। একই সঙ্গে বাহবা জুটতে পারে শাসকদলের থেকেও। ছবি করার আগে পরিচালক এই দিকগুলো কি এক বারও ভেবেছিলেন? কিংশুকের কথায়, ‘কারওর ভাবনায় আমার হাত নেই। কারওর মুখ আমি বন্ধ করতে পারব না। আমার ভাবনায় শুধুই আমার কৈশোরের কলঙ্কিত অধ্যায়টাই ছিল। যাকে অনেক দিন ধরেই পর্দায় তুলে ধরার ইচ্ছে। আমার রাজনৈতিকমনস্কতা নয়, কোনও জ্বলন্ত ইস্যুকে সামনে রেখে প্রচার পাওয়ার তাগিদেও নয়, অন্যায়টা যে অন্যায়ই— এই কথা বলতেই আমার এই ছবি। তার সঙ্গে কাকতালীয় ভাবে শাসকদল জড়িত থাক বা বিরোধী পক্ষ।’
এই মুহূর্তে কিংশুকের ‘দ্য রেড ফাইলস’ টলিউডে আলোচনার কেন্দ্রে। ছবিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী, মুমতাজ সরকার, কিঞ্জল নন্দ, নবাগতা তানিকশা রায়, জুঁই সরকার, বরুণ চক্রবর্তী, দেবপ্রসাদ হালদার প্রমুখ। ছবিতে সঞ্জীব যেমন তৎকালীন শাসকদলের প্রধান মুখ জুঁইকে দর্শক দেখতে পাবেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদলে। পরিচালনা ছাড়াও ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপেও কিংশুক। ক্যামেরায় শুভদীপ নস্কর। ছবির সৃজনশীল পরিচালনা ও পোশাক পরিকল্পনায় সংযুক্তা দেব রায়। সঙ্গীত পরিচালনায় সৌম্য ঋত। নচিকেতা চক্রবর্তী, সৌম্য ঋত ছবির গান গাইবেন। সাল ১৯৯০। বানতলায় তিন জন মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। কিন্তু প্রমাণের অভাব, আর রাজনৈতিক মদতে সঠিক বিচার হয়নি ধর্ষণ কাণ্ডের মূল অভিযুক্তদের। সেই সময়, সেই অঘটনের আবহ ধরতে গিয়ে শহর এবং শহরতলিজুড়ে শ্যুটিং করেছেন পরিচালক। শ্যুট চলাকালীন কোনও সমস্যা বা অসহযোগিতা? পরিচালকের মতে, ‘শ্যুটিংয়ের সময় কোনও অসুবিধে হয়নি। তবে গবেষণার সময় অনেকেই সহযোগিতা করতে চাননি। সংযুক্তা এবং বিক্রমজিৎ না থাকলে বড্ড অসুবিধেয় পড়তাম।’
পর্দায় ‘জ্যোতি বসু’র প্রতিনিধি সঞ্জীব। চেহারায় হালকা সাদৃশ্য এবং রূপটানের গুণে তিনি অনেরটাই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর কাছাকাছি। সে কথা মেনে নিয়েছেন সঞ্জীবও। জানিয়েছেন, রূপটানের পর আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই চমকে গিয়েছিলেন। কেবল মাত্র উচ্চতাতেই যা মেলেনি। ‘জ্যোতিবাবু’ হয়ে উঠতে আর কী কী করেছেন তিনি? সঞ্জীবের কথায়, ‘তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। জ্যোতি বাবুকে দেখতে গেলে দূরদর্শনের ক্লিপিংস আর বইপত্রই ভরসা। সেই সব দুষ্প্রাপ্য ক্লিপিংস পাওয়া এখন আর সম্ভব নয়। তবু জোগাড়ের চেষ্টা করেছি। আর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা বই পড়েছি। এ ভাবেই নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেছি।’ জ্যোতি বাবুর অনেক ভাল দিকও ছিল। সে সব ছেড়ে নেতিবাচক দিকটাই পর্দায় তুলে ধরছেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা আজও অটুট। কোনও ভাবে সেই অনুভূতি আহত হবে? অভিনেতার দাবি, ছবিতে কোথাও বলা হয়নি, তিনিই জ্যোতি বসু। তিনি বা পরিচালকও এ কথা বলছেন না। সবটাই দর্শকদের উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ছবি দেখে বুঝে নিন, ‘দ্য রেড ফাইলস’ আসলে কার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে!
আরও পড়ুন
‘বুম্বাদা’র প্রচারে বরুণ! ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’র হুকিং স্টেপে ‘ভেড়িয়া’
বড় দিনে ‘একেনবাবু এ বার কলকাতায়’! গোয়েন্দার সঙ্গে আর কে কে থাকবেন?
পেশি বানাতে গিয়ে প্রচুর মুরগি খেয়েছি! সবাই বলত, বরুণ ‘ভেড়িয়া’ হয়ে গিয়েছে: বরুণ ধবন