সংক্ষিপ্ত

আজও বিদেশে, কোনও পুরস্কার মঞ্চে আন্তর্জাতিক তারকারা উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখান ‘ব্যান্ডিড ক্যুইন’-এর জন্যই। এই ছবি আমার মাইল ফলক। আমি এই পরিচয় থেকে মুক্তি চাই না।

শহরে সীমা বিশ্বাস। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা-ওমলেট বিক্রি করলেন! সৌজন্যে অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের আগামি ছবি ‘মনপতঙ্গ’। লোকে নাকি চিনতে না পেরে চেয়ে খেয়েওছে! ‘ব্যান্ডিড ক্যুইন’ তখনই বুঝেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর চায়ের দোকান, চপ শিল্পের মূল্য। অকপটে জানিয়েছেন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি মুখোমুখি উপালি মুখোপাধ্যায়কে

প্রশ্ন: প্রথম বাংলা ছবিতে?

সীমা: না, এর আগেও একটি বাংলা ছবি করেছিলাম। ২০০৯-এর ছবি ‘দু’জনে’। পরিচালনায় রাজীব বিশ্বাস। তার পর প্রযোজক অঞ্জন বসু‘মন পতঙ্গ’। মাঝে বিস্তর ফাঁক! (হাসি) পরিচালক রাজদীপ পাল-শর্মিষ্ঠা মাইতি চিত্রনাট্য শোনাতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। খুব যে বড় চরিত্র তা নয়। তবে বাস্তব থেকে উঠে আসা। এক বারও মনে হয়নি গল্প। চিত্রনাট্য যেন চোখের সামনে জীবন্ত।

প্রশ্ন: ‘মন পতঙ্গ’ ছবিতে দর্শকদের সামনে কী ভাবে আসছেন?

সীমা: নিজের চরিত্র নিয়ে এক্ষুণি বেশি কিছু বলব না। পরিচালক-জুটিই বলবে। এটুকু বলতে পারি, আমি শহরের রাস্তায় চা-ওমলেট বিক্রি করি। একটা দোকান আছে। কিন্তু এই পরিচয় সব নয়। এই ব্যবসাকে সামনে রেখে আসলে সীমান্তে চোরাচালান করি। তার জন্যই এক দিন খুন হয়ে যাব।(বলতে বলতেই হেসে ফেললেন)! জানেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে সত্যি সত্যি ওমলেট ভেজেছি! চা বানিয়েছি।

প্রশ্ন: এ তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চা শিল্প’র সঙ্গে সরাসরি সংযোগ!

সীমা: (হো হো হাসি) ভাল বলেছেন। (তারপরেই গম্ভীর গলায়), আমি চিন দেশে গিয়েছি। সেখানেও কিন্তু ক্ষুদ্র শিল্পের ব্যাপক প্রচলন। ওরা কখনও চুপ করে বসে থাকে না। রান্নাবান্নার প্রচুর দোকান ওখানে আছে। তা ছাড়া, মমতা দিদি তো কিছু ভুল বলেননি। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। চুপচাপ বসে থাকলেই বরং হিজিবিজি ভাবনা আসে। তার চেয়ে এই ধরনের দোকান দিলে আয়ও হবে। আবার ব্যস্ততাও থাকবে। আমার চেহারা তো খুব সাদামাঠা। লোকে ধরতে পারেনি। সত্যিকারের দোকানদার ভেবে দাঁড়িয়ে চা-ওমলেট চেয়ে খেয়েছে! আমিও বানিয়ে দিয়েছি।

 

 

প্রশ্ন: কলকতায় বাংলা ছবিতে শ্যুট কেমন লাগল?

সীমা: খুব ভাল। সেটে এক গাদা সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্ররা। তাঁদের সঙ্গে হইহই করে কাজ। দিল্লি, পুণা, মুম্বইতেও পরের পর কাজ চলছে। তার মধ্যেও কলকাতায় আসার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। খালি মনে হত, কবে শহরে আসব। আরও একটা জিনিস ভাল লেগেছে...

প্রশ্ন: কী?

সীমা: প্রযোজক অঞ্জন বসুর ভাবনা। এই যে নতুন অভিনেতা, পরিচালকদের দিয়ে কাজ করানো। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিচ্ছেন, ‘তোরা ছবি বানা। আমি তোদের সঙ্গে আছি।’ আজকের দিনে ক’জন প্রযোজক এই উৎসাহ দেন? বিশেষ করে ‘মনপতঙ্গ’র মতো ছবি। যে ছবি তথাকথিত বাণিজ্যিক ধারার ছবি নয়। এই ধরনের ছবির জন্য প্রযোজক পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। অঞ্জনদা এও আশ্বাস দিয়েছেন, একটা, দুটো, তিনটে চারটে মার খাবে। কুছ পরোয়া নেই। তোরা বানিয়ে যা।

প্রশ্ন: অভিনয় করতে গিয়ে ভাষা সমস্যা হয়েছিল?

সীমা: (হেসে ফেলে) বিরাট সমস্যা! আমি বাঙালি। কিন্তু কলকাতার তো নই। অসমে বড় হয়েছি। ওখানেই সব কিছু। আমার বোনেদেরও অসমেই বিয়ে হয়েছে। ফলে, বাংলায় অবাঙালি টান। পরিচালকেরা অবশ্য সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছিলেন। বলেছিলেন, কোনও অসুবিধে নেই। এ রকম বাংলা অনেক বাঙালিই বলেন। হতেই পারে সেটা।

প্রশ্ন: ডাবিং কে করল?

সীমা: আমিই। এই প্রথম বাংলা ভাষায় ডাবিং করলাম। খুব ভাল লাগল। আমার কাছে ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং ছিল।

প্রশ্ন: বলিউড, টলিউড দু’জায়গায় কাজ হয়ে গেল। খুব পার্থক্য?

সীমা: আগে ওয়ান লাইনার দিই? বলিউড বড্ড ঝাঁ চকচকে। আর যে কোনও আঞ্চলিক ভাষার ছবির আবহ হৃদয়ের উষ্ণতায় জারানো। এ বার একটু বুঝিয়ে বলি। রিজিওনাল বা আঞ্চলিক মানেই সেখানে যেন ঘরোয়া পরিবেশ। ছোট পরিবার হয়ে যাই আমরা। ওইটা খুব আরামের। আর মুম্বই মানেই পেশাদারিত্বে মোড়া। ওখানে কেউ হৃদয়ের কারবারি নয়। ওখানে পরিবারের উষ্ণতা নেই। সেটে পৌঁছবে। তোমার ভ্যানিটি ভ্যান তৈরি। একেক জন শিল্পীর সঙ্গে ৪-৫ জন কর্মী! রোজ সেটে কম করে ৩০০ লোকের ভিড়। ভোর ৪টেয় উঠে সবাই পৌঁছে যান নির্দিষ্ট জায়গায়। তার পর সাজিয়ে গুছিয়ে তাঁরা নিয়ে যান শ্যুটিংয়ের জায়গায়। কাজ হলে আবার যে যার মতো ভ্যানিটি ভ্যানে। আড্ডা নেই, হুল্লোড় নেই। যেন মেশিন সবাই! বাকিরাও প্রফেশনাল। কিন্তু তারা একই সঙ্গে আন্তরিকও। মুম্বই সেটা নয়।

 

 

প্রশ্ন: নাটক, ছোট-বড় পর্দা, সিরিজ মিলিয়ে অসংখ্য কাজ। তার পরেও সীমা বিশ্বাস মানেই ‘ব্যান্ডিড ক্যুইন’। কখনও খারাপ লাগে?

সীমা: একেবারেই না। আমি পর্দায় অভিনয় করব ভাবিইনি কোনও দিন। বরাবর নাটকেই অভ্যস্ত। শেখর কাপুর তেমনই একটি নাটকে আমার অভিনয় দেখে পছন্দ করেন। ‘ব্যান্ডিড ক্যুইন’ দিয়ে ছায়াছবিতে আমার প্রথম যাত্রা। তখনও আমার ভাবনায় এটাই আমার প্রথম আর শেষ ছবি। চরিত্র হয়ে উঠতে প্রচুর পরিশ্রম করেছিলাম। নিজেকে তৈরি করেছিলাম। অনেক দেশি-বিদেশি অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। ফুলন দেবীর সঙ্গে কথা বলার খুবই ইচ্ছে ছিল। সেটা যদিও সম্ভব হয়নি। তাই পড়াশোনা করেছিলাম প্রচুর। শেখর মাঝেমাঝেই দিল্লি আসতেন। তখন ওঁর সঙ্গে প্রচুর কথা হত। কখনও চরিত্র নিয়ে। কখনও আমার অভিনয় নিয়ে। কখনও সাজ নিয়ে। এ ভাবে করতে করতে ছবি শেষ হয়ে পড়ে থাকল। সেন্সরের অনুমতি পাচ্ছিল না। আমি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলাম! তখনই ডাক পাই সঞ্জয় লীলা ভনশালির ‘খামোশি: দ্য মিউজিক্যাল’ ছবিতে। তখন মনে হয়েছিল, বসেই তো আছি। করে ফেলি। কাজ করলাম। ছবি-মুক্তি পেল এবং জনপ্রিয় হল। এর পর শেখরের ছবি মুক্তি পেতেই আর এক প্রস্থ হুল্লোড়। আজও বিদেশে, কোনও পুরস্কার মঞ্চে আন্তর্জাতিক তারকারা উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখান ‘ব্যান্ডিড ক্যুইন’-এর জন্যই। এই ছবি আমার মাইল ফলক। আমি এই পরিচয় থেকে মুক্তি চাই না।

আরও পড়ুন

বুম্বাদা, দেব বছরে একটা করে বাণিজ্যিক ছবি করো, নইলে বাংলা ছবি বাঁচবে না! অনুরোধে টোটা

‘মনখারাপ করবেন না স্যর, পাড়ার কাকাদের দেখে ছোটরা আর সিগারেট লুকোয় না’, কলমে টোটা

৩ বছর আগে সাইবার অপরাধের শিকার! কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন মিথিলা ?