সংক্ষিপ্ত
রাগের মাথায় কোনও কথা বলে ফেললে পরে পা ধরে ক্ষমা চাইত। সে সব দিন আর বোধহয় নেই। তাই মনখারাপ করবেন না স্যর। প্রভাত রায়ের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের প্রেক্ষিতে এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় কলম ধরলেন টোটা রায়চৌধুরী।
'আমি তখন কলেজে। প্রথম বর্ষের ছাত্র। প্রভাত রায় আমায় পছন্দ করলেন ‘লাঠি’ ছবিতে। প্রথম দিন থেকেই প্রভাত রায় আমার ‘স্যর’। আজও পর্যন্ত। যাই হোক, ডাকলেন পরিচালক। ভাল করে জরিপ করলেন জয়শ্রী রায়! তিনি ‘স্যর’-এর যোগ্য সহধর্মিনী। পরে শুনেছিলাম, জয়শ্রীদিই নাকি আমার হয়ে সুপারিশ করেছিলেন। বলেছিলেন, টোটাকে নেওয়া যেতে পারে। বেশ লেগেছে। মনে হয় পারবে। ওঁর সুপারিশে আমি রুপোলি পর্দার নায়ক! নইলে আমার তো সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার কথা। যাঁর হাত ধরে আমি আজ যতটুকু তাঁকে ভুলি কী করে? তা হলে তো নিজের শিকড় ভুলতে হয়!
কপালগুণে শুধুই একটি ছবিতে আটকে থাকলাম না। স্যর আমাকে বেশ কয়েকটি ছবিতে সুযোগ দিলেন। এতে আমার কী লাভ হল? অভিনয়ের অ-আ-ক-খ-ও জানতাম না। সব হাতে ধরে শিখলাম। আর রুপোলি পর্দার নেশা আমার মধ্যে গেঁড়ে বসল। মহানায়ক হতে পারব না। কিন্তু নায়ক তো হতেই পারি! তখন টলিউড পরিবারকেন্দ্রিক ছিল। বড়রা আমাদের হাতে ধরে শেখাতেন। দরকারে ধমকধামক দিতেন। বেশি স্নেহ করলে কোনও শট ভুল দিলে আবার সেটা নিজ দায়িত্বে শোধরাতেন। কিন্তু পরিচালককে বলতেন না, আমি ভুল করেছি। তিনি নিজের ঘাড়ে দায় তুলে নিতেন। ‘লাঠি’ ছবির সময়েই হয়েছে। তখন অভিনয়ের কিচ্ছু জানি না। যথারীতি একটি দৃশ্য ভুল করেছি। শট নেওয়ার পরে স্যর একটু দূরে দাঁড়িয়ে। বরিষ্ঠ সহ-অভিনেতা আমার কানে কানে বললেন, ‘বাবা, ওই শটটা ঠিক হয়নি রে। ওটা এই ভাবে করতে হত। আর এক বার শটটা দিবি?’
আমি এক পায়ে খাঁড়া। এ বার তিনি মন্থর গতিতে গেলেন স্যরের কাছে। অনুরোধ জানিয়ে বললেন, ‘ওই শটে আমি ঠিক করিনি। আর এক বার দিতে চাই। প্রভাত, তুমি কি একটু নিয়ে নেবে?’ তাঁর কথা কেউ ফেলতে পারে! সঙ্গে সঙ্গে আবার শট নেওয়া হল। কিন্তু কেউ জানতে পারল না, সবটাই আমার ভুল। আর আউটডোরে গেলে তো কথাই নেই। পুরো বনভোজনের মেজাজ। হুল্লোড় করতে করতে শ্যুটিং। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার মাধ্যমেই জানলাম, কিছু দিন আগে নাকি স্যরের মতোই অভিযোগ জানিয়েছেন আর এক প্রবীণ অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। তিনিও নাকি খারাপ ব্যবহার পেয়েছেন এখনকার কোনও অভিনেতার থেকে। যা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। শুনে খারাপ লেগেছে। বিপ্লবদা বরাবর স্পষ্টবাদী। কিন্তু স্যর প্রচণ্ড নির্বিবাদী। পারতপক্ষে কিচ্ছু বলেন না। তিনি এ ভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন মানে, কতটা আঘাত পেয়েছেন!
এই জায়গা থেকেই প্রশ্ন আসে, তা হলে কি এটাই প্রজন্মের ব্যবধান? আমি নীতিপুলিশ নই। ভাল না মন্দ—সেই দিকেই যাব না। এটা বলতে পারি, একেই বোধহয় সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন বলে। আমরা ছোট বেলায় কী দেখেছি? শুধু বাড়ি নয়, পাড়ার বড়দেরও ছোটরা সমীহ করত। মুখ ফস্কে গালাগালি বেরোলে জিভ কাটত। সিগারেট টানতে টানতে আচমকা পাড়ার কাকার মুখোমুখি! হাত পিছনে লুকিয়ে ধোঁয়া গিলে বিষম খেয়ে একসার! রাগের মাথায় কোনও কথা বলে ফেললে পরে পা ধরে ক্ষমা চাইত। সে সব দিন আর বোধহয় নেই। তাই মনখারাপ করবেন না স্যর। পাড়ার কাকাদের দেখে এখন ছোটরা সিগারেট লুকোয় না।'---- টোটা রায়চৌধুরী
আরও পড়ুন-
‘হয়তো সম্মান পাওয়ার যোগ্য নই, তাই কেউ পাত্তা দেয় না’! বিপ্লবের পর অভিমানী প্রভাত রায়
বাংলা ছবি কেন দক্ষিণী দাপটে ম্লান? প্রসেনজিতের দাওয়াই, ১০ কোটি বাঙালি হলে এলেই ‘হাউজফুল’
দেশের প্রথম চলচ্চিত্র সুপারস্টারকে নিয়ে হয়নি কোনও বায়ো-পিক, একটুকরো মঞ্চেই কাননকে আনলেন লাকি