সংক্ষিপ্ত
দীর্ঘ বছর একটা মানুষের সাথে সংসার করা , তাকে নিয়ে গর্ব করা, সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে নিজের জীবনের সব টুকু সময়ে তাকেই সমর্পণ করা, একই তো বলে সংসার? মধ্যবিত্ত পরিবারের এই রোজ নামচাই তো আমার আপনার অভ্যাস। কিন্তু হটাৎ যদি কেউ জানতে পরে তার এত দিনের যাপন টাই মিথ্যে, তার গোছানো সংসারটা তাসের ঘরের মত একটা ঝড়ো হাওয়া, ভেঙে যেতে পারে একটা সত্যির ঝটকায়, ঠিক তখন সেই মানুষটার জীবন বোধ ঠিক তাকে কি শেখায়? সবটা মিথ্যে বলে, ঘরের দরজা দিয়ে আর্তনাদ করে কাদতে? নাকি এই কঠিন সত্যির পরও আমার একটা আমি আছি, যেটাকে এবার সুন্দর করে গোছাতে হবে, শুধু নিজের জন্য, কোনটা?
ছবির নাম- একান্নবর্তী
পরিচালনা- মৈনাক ভৌমিক
অভিনেতা- অপরাজিতা অঢ
চিত্রনাট্য ও ডায়লগ-
প্রোডাকশন কোম্পানিস- এস ভি এফ
গল্প: স্বামীর কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার অপমানটা হজম তো করেছেন, কিন্তু নিজের কাছে "হেরে গেছি" বলতে আজও বড়ো বাঁধে মালিনির। তাই সে হাতড়ে বেড়ান তার খামতি। তার চেহারার , তার গুণাগুণের খামতি। জোর করে নিজের উপর চাপতে থাকে একের পর এক খুতের বোঝা। কিন্তু নিজেকে বোঝালেও তার ২ মেয়ে তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় , তাদের মা সত্যি নিখুঁত। একটা খুতে ভরা মানুষের স্বীকার মাত্র। অন্যদিকে মালিনির ২ মেয়ে পিঙ্কি, শীলা তাদের জীবনবোধ , চলন ধারণ সবটাই আলাদা। একজন নিজের বাড়তি ওজনের ভারে এতটাই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে যে নিজের আবেগ অনুভূতি প্রকাসেও লজ্জা বোধ করে, বলা চলে জীবনের বেশি টা সময় সে নিজেকে দয়া করেই কাটায়। সে বিশ্বাস করে তার বাড়তি ওজন তাকে কারও ভালবাসার যোগ্যই রাখে নি। আর যদি কেউ তাকে পছন্দ ও করে তবে তাকে, ব্যঙ্গ বা করুণা বলেই মনে করে থাকে সে। অন্যজন, স্মার্ট (Smart), ইন্ডিপেন্ডেন্ট (Independent), চাকরিরতা। নিজেকে , বাড়ির না না সমস্যা , বনকে সামলানো সবটাই নিজে করে শীলা। তবে বাইরে থেকে পারফেক্ট লাগলেও ভিতরটা মোটেও তেমন না। একটা মিথ্যে সম্পর্ককেই মনের মধ্যে না না সন্দেহ নিয়েই বয়ে চলে । কিন্তু নিজেকে ঠকাতে ঠকাতে একসময় ক্লান্ত সে। একসময় ঠকে যাওয়া টাকেও স্বীকার করে শীলা। তবে কি ভাবছেন, শুধুই হারানো, ঠকে যাওয়ার গল্প একান্নবর্তী (Ekannobarti)? মোটেও না। এই সব না পাওয়ার মধ্যেই তো থাকে জীবনের আসল উত্তরণ। আর ঠিক তেমনটাই হয় মালিনী, শীলা, পিঙ্কি দের সাথে। জীবনে বসন্ত শুধু এক ভাবেই, একটা নির্দিষ্ট সময়ই আসে না। নানা সময় নানা ভাবে ঋতুরাজের আগমন হতে পারে।
অভিনয়: মালিনী এর চরিত্রে অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya) প্রতিবারের মতই সাবলীল। শালিনী এর চরিত্রে সৌরসিনি মৈত্র (Sourasini Maitra) , সচ্ছল, এবং ভীষণ রকম স্মার্ট উপস্থিতিতে দর্শকদের নজর করবে। এই ছবির অন্যতম আকর্ষণ অন্যান্য সেন, পিঙ্কি এর চরিত্রাভিনেতা , বড় পর্দায় তার প্রথম অভিষেক, কিন্তু তার অভিনয় দক্ষতা তাকে সবার থেকে আলাদা করেছে একথা বলতেই হয়। গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় গৌরব চক্রবর্তীর (Gourab Chakraborti) অভিনয় ও দর্শকদের নজর করবে । এই ছবিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় দেখা গেছে কৌশিক সেন কে। সব শেষে ছবির মুকুটে পালিক যোগ করেছেন অলকনন্দা রয়ের উপস্থিতি। শীলা পিঙ্কির দিদুন, আর মালিনির মা এর ভুমিকায় দেখা গেছে তাকে। ছবির গল্প সকলের কাছেই নেক্সট টু ডোর । স্বভাবতই নিজেদের সাথে রিলেট করতে কোনও অসুবিধা হবে না দর্শকদের। আর তাই আবেগটা কাজ করবে বেশী । কিন্তু কাহিনী অনুযায়ী এক্সপ্রেশনে কারও কোনোও খামতি নেই । আর তার বিভিন্ন সংঘা হতে পারে, শুধু নারী পুরুষের প্রেম নয়, নিজের সাথে নিজের প্রেমও জীবনে বসন্ত আনতে পারে। ঠিক তেমনটাই হয় আমাদের জীবনেও, আমরা তা উপলব্ধি করি না। কিন্তু মালিনী, পিঙ্কি শীলা সেটা করবে। কীভাবে সেটা নিয়েই এগবে ছবির গল্প।
চিত্রনাট্য সংলাপ: মূলত আটপৌরে বাঙালির সম্পর্ককের (Bengali Relation) টানা পোড়েন , পিছুটানের মত আবগেকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলাই ছিল ছবির উপজীব্য। আর তাতে খুব তীক্ষ্ণ সংলাপের দরকার পড়তো না। কিন্তু যেটার দরকার ছিল তা হল মানুষের মনের আবেগএর সাথে একাত্ম হওয়া। তার জন্য বেশ কিছু অবেগ সূচক সংলাপ, যা সঠিক জায়গায় সঠিক মাত্রায় ছিল। আরও একটা দিক দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে তা হল খালি গলায় বেশ কিচু জায়গায় রবীন্দ্র সংগীতের (Rabindra Sangeet) ব্যবহার। সব মিলিয়ে সংলাপ গান, বেশ জোরালো।
পরিচালনা: এর আগেও ঘরে অ্যান্ড বাইরে, চিনি এর মত পরিবারিক ও মিডিল পাথ ছবির গল্পই উপহার দিয়েছেন পরিচালক মৈনাক ভৌমিক (Mainak Bhaumik)। মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগকে খুব ভালো ভাবেই পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে যে পরিচালক সিদ্ধহস্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ছবিতে কখনও কখনও কোনও সিকোয়েন্স একটু বেশি সাজানো মনে হয়ছে। যেমন হঠাৎ করে রাতের বেলা কেউ কারও পাশে এসে কথা বলতে বসলে তাকে ফ্লাক্সে রাখা চা অফার করা স্বাভাবিক, তবে পাশাপাশি নিজের কাপের পাশে আরও একটা কাপ প্রস্তুত রাখাটা ভীষণ সাজানো । এই রকম ছোট ছোট দিকে নজর দেওয়া যেত ।
সমালোচনা : সব মিলিয়ে ছাপোষা বাঙালির আবেগ তারিত হওয়ার সমস্ত উপজীব্য ই আছে এই ছবিতে। সত্যের মুখোমুখি হয়ে অবার ও ঘুরে দাড়ানো, নিজেকে ভালবাসার গল্প বলেছে এই ছবি। জীবনের নানা ব্যস্ততা জটিলতার মাঝে এমন ছবি যে দর্শকদের স্ট্রেস রিলিজ (Stress Release) করবেই সে কথা বিলক্ষণ বলা যায়।
আরও পড়ুন- Kareena-Aamir : করিনা-আমিরের গদগদ রোম্য়ান্স, পোস্টার শেয়ার করে দিলেন সুখবর