শুক্ত থেকে মাংস, সন্দেশ বা মিষ্টি দই, একজরে দেখে নিন বাঙালির রসনাতৃপ্তির ১০ টি পদ
‘বাংলায় আমার শর্ষে ইলিশ চিংড়ি কচি লাউ’, ইলিশ হোক বা পাবদা বাঙালির পাতে মাছ থাকবে না তা আবার হয় নাকি। শুধু কি মাছ? ভোজন রসিক বাঙালির হেঁসেল জুড়ে থাকে স্বাদের মেলা। শুক্ত দিয়ে শুরু করে, ডাল, মাছা ভাজা, মাংস, আর শেষ পাতে মুখ মিষ্টি। বা গরম গরম লুচির সঙ্গে বাঙালির স্পেশাল আলুর তরকারির জুড়ি মেলা ভার। সঙ্গে যদি থাকে একটু ছোলার ডাল আর খাঁটি ছানার সন্দেশ বা রসগোল্লা একেবারে জমে ওঠে রাতের খাওয়ার। মাছ ভাত বা লুচি মাংস যাই হোক মিষ্টি ছাড়া বাঙালির খাওয়া সম্পূর্ণ হয় না। কলকাতা তথা বাংলার খাওয়ারের কথা বলতে গেলে একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে বাংলার মিষ্টি। কলকাতার নকূরের সন্দেশ হোক বা নবীন চন্দ্র দাশের রসোগোল্লা কলকাতার অলিগলিতে মিলবে মিষ্টত্ব। এ তো গেল কলকাতার কিন্তু তার বাইরেও গোটা বাংলার জুড়েই মিলবে অতুলনীয় স্বাদের নানা মিষ্টি। বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা থেকে নবদ্বিপের দই হোক বা ক্ষীরপাইয়ের বাবর্শা। বাঙালির স্বভাবের মতো বাংলার হেঁসেলেও মিষ্টির অভাব নেই। তবে বাংলায় এসে কী কী বাঙালি খাবেন ভাবছেন? একনজরে দেখে নিন বাংলার হেঁসেলে আপনার জন্য থাকছে কী কী...
- FB
- TW
- Linkdin
ভাত পাতে শুক্ত ছাড়া বাঙালির খাওয়া শুরু হয় না। ওপার বাংলার নানা সুস্বাসু রান্নার মধ্যে শুক্ত অন্যতম। সজনে ডাঁঠা, কাঁচকলা, আলু, বেগুল, পটল, থোরের ইত্যাদি নানা সবজি দিয়ে তৈরি হয় শুক্ত। সঙ্গে ঘি গরম মশলা পাঁচ ফোরনের গন্ধের মিশেল যে কারোর জিভে জল আনে। গরম ভাতে শুক্ত না হলে শুরুই হয় না বাঙালির খাওয়ার।
মাছে ভাতে বাঙালির পাতে মিলবে হরেকরকম মাছ। তার যেমন হরেক রকম স্বাদ তেমনই তার রান্নাতেও নতুনত্ব। মাছের ঝোল, মাছ ভাজা, মাছের পাতুরি, কালিয়া, ফিস ফ্রাই, দই মাছ, শর্ষে মাছ, মাছ ভাপা আরও কর কী। খাদ্যরসিক বাঙালির হেঁসেল মানেই রকমারি মাছের রকমারি পদ সেখানে মিলবেই। রুই হোক বা কতলা, ইলিশ হোক বা পাবদা, মাছ ভাতের জুড়ি মেলা ভার।
কব্জি ডুবিয়ে পাঁঠার মাংস না খেলে কি আর খাওয়া সম্পূর্ণ হয়? কষা মাংস আর গরম ভাত তো বাঙালির খাওয়ার টেবিলে থাকতেই হবে। বা যদি হয় কচি পাঁঠার ঝোল। কলকাতায় এলেই তাই বাঙালিকে খেতেই হয় শ্যামবাজারের গোল বাড়ির কষা মাংস। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এই মাংসের সঙ্গে পরোটা শহরবাসীর অতি প্রিয় খাওয়ারের মধ্যে একটা।
অনুষ্ঠান হোক বা ঘরোয়া খাওয়া দাওয়া, গরম গরম ফুলকো লুচি ছাড়া তা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। সঙ্গে আলুর তরকারি বা আলুর দম অথবা লম্বা করে কাটা বেগুন ভাজা। জলখাবার হোক বা ডিনার এ স্বাদের ভাগ হবে না। কচুরি অথবা কড়াই শুটির কচুরিরর জুড়ি মেলা ভার। জলখাবারের জন্য একেবারে লুচি আলুভাজার চেয়ে প্রিয় বাঙালির আর কিছু নেই।
লুচি হোক বা রুটি বাঙলির প্রিয় আলুর তরকারি থাকতেই হবে। ছোটো ছোটো করে কাটা আলুর সঙ্গে পাঁচ ফোড়ন মিশে অসাধারণ স্বাদের আলুর তরকারি যে কোনও বাঙালি বাড়ির কমন খাওয়ার। এই সঙ্গে লুচি, রুটি, পরোটা যে কারোর জিভে জল আনবে।
লুচি মানেই পাতের পাশে থাকতেই হবে ছোলার ডাল। ছাঁকা তেলে ভাজা গম লুচির পাশে নারকেল দেওয়া ছোলার ডাল হল যাকে পার্ফেক্ট কম্বিনেশন। ঘি গরম মশলার গন্ধের সঙ্গে নারকেল আর কাজু কিশমিশের স্বাদ মিলে ডালের স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে। রাতের খাবারে বাড়ির মা- কাকিমার হাতের বানানো লুচি ছোলার ডাল হলে আর কী চাই।
বাঙালির রকমারি মিষ্টির কথা বলতে গেলে আর শেষ হয় না। রসোগোল্লা, পান্তুয়া, সন্দেশ, চমচম, মনোহরা আরও না জানি কত কী। তেমনি একটি মিষ্টি হল ক্ষীর চমচম। সাধারণ চমচমকে ক্ষীর বা মালাইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে এই মিষ্টি তৈরি হয়। নরম চমচমের সঙ্গে ক্ষীরের অসাধারণ মিশেল হল এই মিষ্টি। সাধারণত কলকাতার যে কোনও দোকানে গেলেই মিলবে এই মিষ্টি।
মিষ্টির কথা উঠলে কলকাতার ছানার সন্দেশের কথা বলতেই হয়। মনোহরা বা কালাকাঁদ কিংবা জলভরা, এই সন্দেশ না খেলে বাঙালির খাওয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কলকাতার নকূরের জলভরা সন্দেশের খ্যাতি বাংলা জোড়া। এছাড়াও উত্তর কলকাতার নানা অলিগলিতে মিলবে রকমারি আকারের ছানার সন্দেশ। ছানা দিয়ে তৈরি একেবারে শুকনো অথচ নরম এই সন্দেশ খেতে কলকাতার বাইরে থেকেও বহু মানুষ আসে।
যতকরমের মিষ্টিই থাকুক না কেন বাঙালির মিষ্টি মানে রসোগোল্লা। নরম ছানার বলকে রসের মধ্যে ফুটিয়ে এই মিষ্টি তৈরি করা হয়। কলকাতা তথা বাংলার রসোগোল্লার ক্ষাতি বিশ্বজোড়া। কে সি দাস হোক বা নবীন চন্দ্র দাস কলকাতার মিষ্টির দোকানে রসোগোল্লার উপস্থিতি থাকবেই। শুধু বাংলায় নয়, কলকাতা তথা বাংলার নানা দোকান থেকে বিদেশেও রসোগোল্লা রপ্তানি হয়।
শেষ পাতে মিষ্টি দই না হলে আবার বাঙালির চলে না। চিনি পাতা দই বা লাল দই কলকাতার এক বিশেষত্ব। কলকাতা ছাড়াও নবদ্বিপের মিষ্টি দই-এর খ্যাতি সারা বাংলা জোড়া। অনুষ্ঠান বাড়ি হোক বা ঘরোয়া খাওয়া দাওয়া শেষপাতে দই থাকতেই হবে।