Indian Bravehearts

ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দার দেশপ্রেমের এক আদর্শ উদাহরণ। মাস্টারদা সূর্য সেনের সশস্ত্র সংগ্রামের মন্ত্রের আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রীতিলতা ব্রিটিশের হাতে ধরা পড়তে চাননি। বরং সগর্বে পটাশিয়াম সায়েনায়াড খেয়ে শহিদ হয়েছিলেন দেশের পরাধীনতা মোচনের আন্দোলনে। 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একটা পুরো পরিবার নিজেদের উৎসর্গ করে দিয়েছিল। ফলে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গে এসে পড়লে কোনওভাবেই সিধু-কানু ভ্রাতৃদ্বয়ের কথা বাদ দেওয়া যায় না। যেভাবে এই দুই ভাই সশস্ত্র আগ্নেয়াস্ত্রে সমৃদ্ধি ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে শুধুমাত্র তীর-ধনুককে সম্বল করে লড়াই করেছিলেন তা আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় স্বাধীনতার এই লড়াইয়ে সিধু-কানুর সঙ্গে তাঁর দুই ভাই এবং বোনও শহিদ হয়েছিলেন। 

১৮৭০ সালের ১৯ অক্টোবর তমলুকের হোগলা গ্রামের মাইতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাতঙ্গিনী হাজরা। ঠাকুরদাস মাইতি ও ভগবতী মাইতির এক মাত্র মেয়ে ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় পড়েছিলেন মাতঙ্গিনীদেবী। 

ক্যাপ্টেন লক্ষী সেহগল। ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম। আজাদ হিন্দ ফৌজে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বাইরে আর যাদের নাম সর্বাগ্রে আসে তিনি হলেন লক্ষী। ছোট থেকে দেশপ্রেমে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। তাই আজাদ হিন্দ ফৌজে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-র আহ্বানকে উপেক্ষা করতে পারেননি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এক বীরাঙ্গণা হিসাবে আজও পূজিত হন লক্ষী সেহগল। 

অরুণা আসফ আলি, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। ভারতকে ব্রিটিশদের অধীন থেকে মুক্ত করতে ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধী ডাক দিয়েছিলেন হয় করো না হয় মরো-র। আর সেই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন অরুণা আসফ আলি। যার জন্য অগাস্ট আন্দোলনের রানি বলেও তাঁকে আজও স্মরণ করা হয়। পঞ্জাবের কালকায় এক বাঙালি পরিবারে জন্ম অরুণার। বিয়ের আগে তাঁর নাম ছিল অরুণা গঙ্গোপাধ্যায়। 

দিল্লিতে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু। ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেন। কিন্তু, তিনি সুকৌশনে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়িয়ে ১৯১৫ সালে জাপান পালিয়ে যান। তিনিই ভারতের বাইরে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন। পরবর্তীকালে নেতাজির হাতে আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর পরিচালনার ভার তুলে দেন।   

বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় একজন সফল উদ্যোগপতি ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বাঙালি যিনি ডক্টর অফ সায়েন্স উপাধি পেয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনও দিন বেতন নেননি তিনি। সফল উদ্যোগপতি হিসেবে আজও তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করে বাঙালি। 

ভাল্লিয়াপ্পান ওলগানাথন চিদম্বরম পিল্লাই যিনি তাঁর সামুদ্রিক বাণিজ্য দিয়ে ব্রিটিশদের কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ভাল্লিয়াপ্পান বা ভিওসি পিল্লাই-এর কাহিনি আজও গভীর তাৎপর্য বহন করে। 

১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল। ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি মুজাফফরপুরে ইউরোপিয়ান ক্লাবের গেটে চুপিচুপি অপেক্ষা করছিলেন। কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রী সেখানে বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যা কাটাচ্ছিলেন। রাত ৮টার দিকে দুটি ঘোড়ার গাড়ি গেট দিয়ে বেরিয়ে আসে এবং বোস ও চাকি তাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে।

বোমা ছুঁড়েই পালিয়ে যান ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল। রাতে ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি হেঁটে, ক্ষুদিরাম পরের দিন ভোরে ওয়াইনি রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান যেখানে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।