সংক্ষিপ্ত

জম্মু-কাশ্মীর থেকে হিমাচল প্রদেশ, কোথাও মেঘ ফাটা বৃষ্টি, কোথাও হড়পা বান। বলা যেতে পারে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে এসেছে উত্তর ভারতের জায়গায় জায়গায়। 

মেঘ ফাটা বৃষ্টি, ভয়াবহ অতিবৃষ্টি, হড়পা বান - বলা যেতে পারে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে এসেছে উত্তর ভারতের জায়গায় জায়গায়। মঙ্গলবার জম্মু কাশ্মীরের কার্গিলের দুই জায়গায় এবং বুধবার ভোরে দাচানের মেঘ ফাটা বৃষ্টি এবং হড়পা বানের পর বুধবার দুপুরে একই ঘটনা ঘটল অমরনাথের পবিত্র গুহার কাছেও। অন্যদিকে, মঙ্গলবার ও বুধবার হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন অংশেও বন্যার কবলে পড়ে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। 

ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে মেঘ ফাটা বৃষ্টির পর অমরনাথ গুহা অঞ্চলে পাহাড় বেয়ে প্রচুর পরিমাণে জলধারা নামছে। এই ঘটনায় অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, বলে জানিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের ডিজিপি দিলবাগ সিং। তবে মেঘ ফাটা বৃষ্টির পর এখন ওই অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই কারণে গুন্ড ও কঙ্গনে থাকা সুরক্ষা বাহিনীর সদস্য-সহ সকলকে সিন্ধু নদী থেকে দূরে থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। নদীর জলের স্তর আচমকা বেড়ে যেতে পারে এবং স্রোতের বেগ হঠাতই বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ই বছরও কোভিড মহামারির কারণে ৫৬ দিনের অমরনাথ যাত্রা স্থগিত রাখা হয়েছে। নাহলে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত।

এদিন ভোরেই কাশ্মীরের দাচান এলাকার হনজার গ্রামে হড়পা বানে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোজ। প্রশাসনকে উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুটি কলামকে পাঠানো হয়েছে। মেঘ ফাটা বৃষ্টিতে এদিন ভোরে হড়পা বান এসে গোটা গ্রামটিকেই ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী গ্রামবাসীদের জন্য খাবার ও রেশনের ব্যবস্থা করেছে এবং উদ্ধার ও ত্রাণের কাজও চালাচ্ছে। 

আরও পড়ুন - উদ্ধার ৭টি মৃতদেহ, ঘুমের মধ্যেই ভেসে গেলেন ৩০-৪০ জন - হড়পা বানে বিধ্বস্ত কাশ্মীরি গ্রাম

আরও পড়ুন - ৪০ বছরে রেকর্ড বৃষ্টি, রায়গড়ে মৃত বেড়ে ৪৪ - ভয়াবহ বন্যায় বেহাল মহারাষ্ট্র, দেখুন

আরও পড়ুন -তাওয়াই নদীতে হড়পা বান, দুঃসাহসী উদ্ধার অভিযান বায়ুসেনার, দেখুন ভিডিও

অন্যদিকে, অতি বারি বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা হিমাচল প্রদেশেরও। সরকারী কর্তারা জানিয়েছেন ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার কারণে গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনের প্রাণ গিয়েছে লাহুল ও স্পিতি জেলায় এবং দিল্লির এক পর্যটক সহ কুলু জেলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার চাম্বায় দু'জনের মৃত্যু হয়েছিল হড়পা বানের কারণে। লাহুল ও স্পিতি জেলায় মৃতদের মধ্যে তিনজনের দেহ এখনও উদ্ধার করা যায়নি। এই তিনজনই শ্রমিক। তারা হড়পা বানের জেরে হওয়া ভূমিধসের নিচে চাপা পড়েছেন। তাঁদের দেহ উদ্ধারের জন্য জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে ডাকা হয়েছে। সেইসঙ্গে, ভাগা নদীর জলের স্তর বেড়ে যাওয়ায় পরে লাহুল ও স্পিতির দারচা গ্রামের সকলকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

হড়পা বানের জেরে হওয়া ভূমিধসের ফলে হিমাচলের বহু সেতু, হাইওয়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। মানালি-লে হাইওয়ে এবং গ্রাম্ফু-কাজা হাইওয়েতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থআ হিসাবে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ভূমিধসে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কালকা-সিমলা হাইওয়ে এবং চণ্ডীগড়-মানালি হাইওয়েও। রাজধানী সিমলা ও মান্ডি জেলায়, ভূমিধসের নিচে চাপা পড়েছে বহু যানবাহন, এমনটাই জানা গিয়েছে। হিমাচল প্রদেশের অনেক নদী এবং তাদের শাখা নদীগুলিই অবিরাম বৃষ্টিপাতের পর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।

শুধু জম্মু-কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশই নয়, দিল্লির মৌসম ভবন থেকে চণ্ডীগড়, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার জন্য হলুদ এবং কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে যমুনাসহ হরিয়ানায় বিভিন্ন নদী এবং শাখা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। যমুনানগরের হাথনিকুন্ড ব্যারাজের জল  একলাফে ১.৩৭ লক্ষ কিউসেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যমুনানগর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হরিয়ানার নিম্নাঞ্চলগুলিতে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।