সংক্ষিপ্ত
করোনাভাইরাস আতঙ্কের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভয় পাচ্ছেন আইসোলেশন ওয়ার্ড নিয়েও
অনেকের ধারণা আইসোলেশন ওয়ার্ড অনেকটা জেলখানার মতো
সত্যিই বিচ্ছিন্নতা ওয়ার্ডে জীবন বন্দিদের মতো
জেনে নেওয়া যাক সদ্য আইসোলেশন থেকে মুক্তি পাওয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকেই
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক গ্রাস করছে গোটা ভারত-কে। একের পর এক রাজ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক বের হচ্ছে। সোমবার যেমন ওড়িশায় প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। আর যতো করোনার হুমকি বাড়ছে, ততই রাজ্য়ে রাজ্যে তৈরি হচ্ছে আইসোলেশন ওয়ার্ড বা বিচ্ছিন্নতা ওয়ার্ড। এই ভয়ানক সংক্রামক ব্যধী যাতে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের আলাদাভাবে রাখা হচ্ছে। কিন্তু, কেমন সেই বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার অভিজ্ঞতা? অসুস্থ হলে কি জেলবন্দিদের মতো দশা হবে?
আরও পড়ুন - ভিডিওতেই দেখতে হল বাবার শেষকৃত্য, এখন মনে-প্রাণে চাইছেন যেন করোনা ধরা পড়ে
করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ভয় যেমন রয়েছে, তেমনই একাংশের ভারতীয়রা ভয় পাচ্ছেন আইসোলেশন ওয়ার্ড নিয়েও। অনেকেরই ধারণা আইসোলেশন ওয়ার্ড মানে জেলবন্দিদের কক্ষের মতো ২ ফুট বাই ২ ফুটের ছোট্ট কুঠুরি। সেখানে সূর্যালোক-ও প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু সত্যিই কি তাই? শোনা কথায় কান না দিয়ে সরাসরি জেনে নেওয়া যাক সদ্য আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাটিয়ে আসা এক ব্যক্তির থেকেই। দিল্লিতে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রথম ব্যক্তি, যিনি রবিবারই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
আরও পড়ুন - বন্ধ সব সেক্স ক্লাব, 'করোনা-আতঙ্কে' লম্বা লাইন গাঁজা-চরসের দোকানের বাইরে
৪৫ বছরের ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন আইসোলেশন ওয়ার্ড নিয়েও কোনও ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ভয় পাওয়ার দরকার নেই করোনাভাইরাস নিয়েও। কারণ, আইসোলেশন ওয়ার্ড-ও জেলখানা নয়, আর কোভিড-১৯'ও বলতে গেলে সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরের মতোই। শুধু সারতে একটু বেশিদিন সময় লাগে।
আরও পড়ুন - সোমবার থেকেই শুরু হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গোপনে তৈরি করোনাভাইরাস-এর টিকা
রবিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ইউরোপ সফর থেকে ফিরেছিলেন। পরদিনই তাঁর জ্বর আসে। স্থানীয় ডাক্তার দেখে জানিয়েছিলেন গলায় সংক্রমণ হয়েছে। তার ওষুধে তিনদিনে সেই জ্বর-গলাব্যথা সেরেও গিয়েছিল। কিন্তু, ২৯ তারিখ তাঁর ফের জ্বর আসে। তারপরই তিনি রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে করোনাভাইরাস-এর পরীক্ষা করান, আর ১ মার্চ সেই পরীক্ষার ফল ইতিবাচক এসেছিল।
অবিলম্বে তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছিল। পরদিন তাঁকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে সরকার গঠিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। ডাক্তাররা না আসা অবধি তিনি বেশ উদ্বেগে ছিলেন। কিন্তু, ডাক্তাররা এসে তাঁকে জানান, তাঁর শরীর স্বাস্থ্য় খুবই ভালো। তাই তাঁর চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। সাধারণ ঠান্ডা লেগে জ্বরের মতোই কয়েকদিন সময় দিলেই এই রোগ সেরে যাবে।
আরও পড়ুন - ভাইরাসের ভয়ের মধ্যেই বিকোচ্ছে কেজি প্রতি ২০০০ টাকায়, খাবেন নাকি 'করোনা' মাছ
তারপর থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর ১৪ দিনের বিচ্ছিন্ন জীবন। তবে সফদরজং হাসপাতালের ব্যবস্থার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, তাঁকে একটি এক কামড়ার ঘরে রাখা হয়েছিল। সেই ঘরে লাগোয়া শৌচাগারও ছিল। এমনকী কোনও বেসরকারি হাসপাতালের থেকেও ভালো ব্যবস্থা ছিল সেই সরকারি ব্যবস্থায়। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে তিনি জানিয়েছেন বিশ্বের ্নেক দেশের থেকেই ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো। তাই, ভারতবাসীর চিন্তার কারণ নেই। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে সুস্থ হবেনই।
আরও পড়ুন - বেঙ্গালুরু-তে স্বামী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, আগ্রায় দোল খেলতে চলে গেলেন স্ত্রী
দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত যে সাতজন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তাঁদেরই একজন এই ব্যবসায়ী। দিল্লির সাত রোগীর মধ্যে এক ৬৮ বছরের প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে। তবে রবিবার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন বলে, এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে আরও একজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার রাত পর্যন্ত ভারতে মোট কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১০ জন। সোমবার সন্ধ্য়ায় আরও চারজন রোগী বেড়ে তা ১১৪-তে পৌঁছেছে।