সংক্ষিপ্ত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রিয় শব্দ ‘ফিডব্যাক’, অর্থাৎ, প্রতিক্রিয়া। আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ শহরে ভারতীয় কনসুলেটে জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে মাঝরাতে ফোন করলেন মোদী। কী বললেন বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করকে?

ইউপিএ জমানায় এস. জয়শঙ্কর যখন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে বহাল রয়েছেন চিন দেশে, সেই সময়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেজিং সফরে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ওই সফরেই মোদীর জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। গুজরাত রাজ্যের অর্থনৈতিক বিনিয়োগে প্রভূত উন্নতিসাধনের জন্য সেই বৈঠকগুলি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলস্বরূপ, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সুসম্পর্ক হয়ে গেল এস জয়শঙ্করের, আর মোদীও হয়ে উঠলেন তাঁর প্রিয় মানুষ। মোদী শাসনকালেই বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ আমলা হিসাবে অবসর নেওয়ার পর বিদেশমন্ত্রীর পদে নিয়ে আসা হয় জয়শঙ্করকে। 

২০১৬ সালে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ শহরে ভারতীয় কনসুলেটে ভয়ানক জঙ্গি হামলা হয়, জয়শঙ্কর তখন ছিলেন ভারতের বিদেশসচিব। সারা রাত ধরে চলছিল গুলি-গ্রেনেডের লড়াই। রাত্রি প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁর ফোন বাজল। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ফোন বুঝতে পেরে বেশ অবাক হয়েই কলটি রিসিভ করেন তিনি। ভেবেছিলেন, দফতরের কোনও কর্মী কথা বলার পর লাইনটি সংযুক্ত করে দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু, একি! ফোন ধরতেই সরাসরি তাঁর দিকে প্রশ্ন এল ‘জেগে আছ?’। জয়শঙ্কর বুঝতে পারেন, এ কণ্ঠস্বর স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর। তিনি উত্তর দেন, “হ্যাঁ স্যার”। মোদী জিজ্ঞেস করেন, “আচ্ছা। টিভি দেখছ?” জয়শঙ্কর বলেন, “হ্যাঁ স্যার”। এর পরের প্রশ্নেই বোঝা যায় মোদীর উদ্বেগ, “কী চলছে ওখানে?” জয়শঙ্কর পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করেন এবং জানান যে, যথাযথ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। আশ্বস্ত হয়ে মোদী উত্তর দেন, “সব মিটে গেলে আমাকে ফোন করে জানিও।” রাত বেশি থাকায় জয়শঙ্কর বলেন, “আমি আপনার দফতরে ফোন করে জানিয়ে দেবো।” এর প্রত্যুত্তরে মোদীর সোজা বক্তব্য, “আমাকেই ফোন করে জানিও।” 

২৩ সেপ্টেম্বর আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে ‘মোদী অ্যাট ২০: ড্রিমস মিট ডেলিভারি’ নামে একটি বই নিয়ে আলোচনা সভা ছিল। সেই সভায় বক্তৃতা করতে দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব এবং দায়িত্ববোধের ভূয়সী প্রশংসা করলেন বিদেশমন্ত্রী। নিজেকে ‘মাইক্রোম্যানেজার’ বলা জয়শঙ্কর কাজ এবং সহকর্মীদের ক্ষেত্রে নিজেকে খুবই কঠোর হিসেবে দাবি করলেও, মানুষ হিসেবে নিজেকে ‘ভালো’-র পর্যায়েই রাখলেন তিনি। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর পুঙ্খানুপুঙ্খ পারিপাট্যে তিনি যে মুগ্ধ, এ কথাও সারা বিশ্বের সামনে স্বীকার করলেন বিদেশমন্ত্রী। 

গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মোদী যখন চিন সফরে যান, সেসময়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জয়শঙ্করের কাছে তিনি আবেদন জানান যে, কী কী কথা কীভাবে বলতে হবে, তা শেখাতে। পাশাপাশি তাঁর এতটাই নিখুঁত বিচারজ্ঞান ছিল যে, তিনি জয়শঙ্করকে এও জিজ্ঞেস করেন, “কী কী বলতে হবে, তার সঙ্গে আমাকে এও বলুন যে, কী কী আমি অবশ্যই বলব না।”  জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, মোদীর প্রিয় শব্দ ‘ফিডব্যাক’, অর্থাৎ, প্রতিক্রিয়া। প্রত্যেকটি সম্মেলনের পর তিনি প্রতিক্রিয়া চেয়েছেন যে, তাঁর নিজের কথা সঠিক বা বেঠিক হয়েছে কিনা, বেঠিক হলে গোলমাল ঠিক কোন জায়গায় হয়েছে। মোদীর মতো এত ভালো হোম ওয়র্ক করে বিদেশে আসতে জয়শঙ্কর বিশেষ কাউকে কখনও দেখেননি। বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, “মোদী কেন্দ্রের চিন-নীতি সম্পর্কে সে সময়ে আমার কাছে জানতে চেয়ে বলেছিলেন, আমি দেশের নীতির থেকে এক মিলিমিটারও সরব না।” ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে এত গুরুত্বপুর্ণ নিখুঁত বর্ণনা এর আগে দেশবাসী অন্য কোনও নেতা-মন্ত্রীর কাছে পায়নি বলেই হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় হাওয়ার মতো ছড়িয়ে পড়েছে এস জয়শঙ্করের এই প্রশংসাবাণী।

আরও পড়ুন-
ভারতে যখন দেবীপক্ষ, ইরানে উড়ছে নারীদের চুলের ধ্বজা, ‘বরদাস্ত করব না’, হুঁশিয়ারি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির
হাসপাতালের পথে হঠাৎ বিকল অ্যাম্বুলেন্স, গুরুতর অসুস্থ রোগীর উদ্ধারে নিজেই লেগে পড়লেন কলকাতা পুলিশের সুপ্রভাত
হোটেলের অতিথিদের ‘বিশেষ সার্ভিস’ দিতে বলা হয়েছিল অঙ্কিতাকে, জলে ডুবে গেলেও কেন তাঁর দেহে মিলল আঘাতের চিহ্ন?