ভারতের বিমান হামলায় বাহাওয়ালপুরে জৈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। ১০ জন আত্মীয় এবং ৪ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। জৈশ নিজেই এই হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছে, এবার কি জৈশের নেটওয়ার্ক শেষ হতে চলেছে?
India Airstrike Targets Masood Azhar Family: পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে ভারতের বিমান হামলায় জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদকে ব্যাপক ধাক্কা দিয়েছে। এই হামলায় জঙ্গি মাসুদ আজহারের ১০ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে তার বড় বোন, মৌলানা কাশিফের পুরো পরিবার এবং মুফতি আব্দুল রউফের নাতি-নাতনিরা। এছাড়াও জইশের ৪ জন প্রধান জঙ্গি সদস্যও নিহত হয়েছে।
“ইশ! আমিও মরে যেতাম...” - মাসুদ আজহারের বেদনাদায়ক বক্তব্য
জইশ-ই-মোহাম্মদের দেওয়া আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে স্বীকার করা হয়েছে যে হামলায় মাসুদ আজহারের পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আজহার বলেছেন – “ইশ! আমিও সেই হামলায় মরে যেতাম।” এই বক্তব্য জইশের হতাশা প্রকাশ করে এবং ভারতের এই কৌশলগত সাফল্যের প্রমাণ দেয়।
জইশ-ই-মোহাম্মদ নিশ্চিত করেছে, আজই কবর দেওয়া হবে
জইশ-ই-মোহাম্মদের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে নিহতদের মধ্যে মাসুদ আজহারের বড় বোন, মৌলানা কাশিফের পরিবার এবং মুফতি আব্দুল রউফের নাতি-নাতনিরা রয়েছে। মৃতদেহগুলি আজই বাহাওয়ালপুরে কবর দেওয়া হবে।
জইশের নেটওয়ার্ক কি শেষ হচ্ছে?
এই হামলা ইঙ্গিত দেয় যে ভারত এখন কেবল জঙ্গি শিবিরই নয়, জঙ্গি নেতাদের ব্যক্তিগত ঠিকানাও লক্ষ্য করছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযান পাকিস্তানের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা যে সন্ত্রাসের কোন মুখ এখন নিরাপদ নয়। ভারতের এই সাহসী পদক্ষেপ মাসুদ আজহারের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে এবং একটি শক্তিশালী বার্তাও দিয়েছে — এখন প্রত্যুত্তর 'শুধুমাত্র কথায়' নয়, 'সার্জিক্যাল ওয়ার'-এ দেওয়া হবে।
কৌশলগত বার্তা নাকি প্রতিশোধমূলক হামলা?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এটি কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং ভারতের কৌশলগত সতর্কবার্তা যে সীমান্ত পারের সন্ত্রাসবাদ আর সহ্য করা হবে না।
বুধবার ভোরে, ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর (POK) -এ জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে টার্গেট করে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। অপারেশন সিঁদুর নামের এই অভিযানে বিমান, নৌ এবং স্থল বাহিনীর একযোগে হামলা চালায়। ২০১৯ সালে বালাকোট অভিযানের পর এটি ভারতের সবচেয়ে বড় আন্তঃসীমান্ত নির্ভুল হামলা। এই অভিযানটি ছিল ২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রত্যুত্তর, যেখানে একজন ভারতীয় নৌবাহিনীর আধিকারিক এবং একজন নেপালি নাগরিক সহ ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। হামলাকারীরা পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এর সাথে যুক্ত ছিল, একটি জঙ্গি গোষ্ঠী যা পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে লজিস্টিক এবং আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য অভিযুক্ত।
অপারেশন সিঁদুরের সময় নয়টি ভিন্ন স্থানে আক্রমণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে চারটি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে এবং পাঁচটি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে যে কোনও পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিতে টার্গেট করা হয়নি। পরিবর্তে, নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির পরিচালিত কেন্দ্রের গোড়ায় আঘাত হানা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে প্রায় ৯০০ জঙ্গি অবস্থান করছিল। এর মধ্যে বাহাওয়ালপুরের ঘাঁটিতে ২৫০ জন, মুরিদকেতে ১২০ জন, মুজাফফরাবাদ ও কোটলিতে ২০০ জন এবং শিয়ালকোট, গুলপুর, ভীমবের ও চক আমরুর ঘাঁটিগুলোতে হামলার সময় ৩০০ জনের বেশি জঙ্গি ছিল। যদিও এই ঘাঁটিগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর, তবে কতজন জঙ্গি হতাহত হয়েছে, সে বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।


