সংক্ষিপ্ত

  • ইয়েস ব্যাঙ্কের ভরাডুবির নায়ক রানা কাপুর
  •  মুম্বই হামলায় মৃত্যু  তৎকালীন প্রধান অশোক কাপুরের
  • তারপরই শুরু কর্তৃত্ব দখলের লড়াই  
  • সরিয়ে দেওয়া হয় অশোক কাপুরের পরিবারের সদস্যদের
     

ইয়েস ব্যাঙ্ক। বর্তমানে এই দেশে সবথেকে আলোচিত ব্যাঙ্ক। রোজই থাকে খবরের শিরোনামে। এই ইয়েস ব্যাঙ্কের পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তিন সফল ব্যাঙ্কার অশোক কাপুর, রানা কাপুর আর হরকিরাত সিং যখন একসঙ্গে পথে পথ চলা শুরু করলেন। প্রথমে অবস্য নন ব্যাঙ্কিক আর্থিক কোম্পানি হিসেই আত্মপ্রকাশ করে। পরে ২০০৩ সালে ব্যাঙ্ক হিসেবে নথিভুক্ত হয়। ২০২০ সালে চরম সংকটে ইয়েস ব্যাঙ্ক। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন কর্ণধারকেও। রেহাই পায়নি তাঁর মেয়েও।  কিন্তু ইয়েস ব্যাঙ্কের ভরাডুবির সঙ্গেও যোগ রয়েছে মুম্বই হামলার। ২৬/১১ মুম্বই হামলায় নিহত হয়েছিলেন এই ব্যাঙ্কেরই এক সহ প্রতিষ্ঠাতা। 

আরও পড়ুনঃ সাতদিনের মধ্য়ে খুলে ফেলতে হবে হোর্ডিং, হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ যোগী সরকারকে

এবিএন আম্রোর প্রাক্তন কর্তা ছিলেন অশোক কাপুর। ডয়েস ব্যাঙ্কের ভারতের অধিকর্তা ছিলেন হারকিরাত সিং। আর তৃতীয় লগ্নিকারি ছিলেন রানা কাপুর। কর্পোরেশন ব্যাঙ্কের ফিনান্স বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। একটি সাক্ষাৎকারে হারকিরাত সিং জানিয়েছিলেন রানা কাপুরের বিষয়ে প্রথম থেকেই তাঁর আপত্তি ছিল। কিন্তু অশোর কাপুরের চূড়ান্ত সমর্থন থাকায় তাঁর আপত্তি ঢোপে টেকেনি। তিন লগ্নিকারিই ২৫ শতাংশ লগ্নি করেছিল। বাকি ৭৫ শতাংশ টাকা যুগিয়েছিল নেদারল্যান্ডেসের রাবো ব্যাঙ্ক। ২০০৩ সালে ব্যাঙ্কের তকমা পাওয়ার পরই বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। ঐ বছরই সরে আসেন হারকিতার সিং। 

আরও পড়ুনঃ খোলার সময়ই ধাক্কা খেল সেনসেক্স, পড়ল ১,৭০০, নিম্নগামী অপরিশোধিত তেলও

২০০৪ সালে লাইসেন্স পায় ইয়েস ব্যাঙ্ক। ২০০৫ সালে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হয় ইয়েস ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের আর্থিক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রথম দিকে দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছিল মূলধন। বাড়ছিল গ্রাহক সংখ্যা। কিন্তু ২০০৮ সালে মুম্বই হামলায় রীতিমত ধাক্কা ধায় ইয়েস ব্যাঙ্ক। তৎকালীন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান অশোক কাপুর ছিলেন ট্রাইডেন্ট হোটেলে।  হামলা চালায় পাক জঙ্গিরা। মৃত্যু হয় অশোক কাপুরের। তারপর থেকেই ব্যাঙ্কের পুরো কর্তৃত্ব নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করেন তৃতীয় লগ্নিকারি রানা কাপুর। ব্যাঙ্কের ব্যাবসার অভিমুখ বদল করেন রানা কাপুর। 

তবে অশোক ও রানা শুধু ব্যবসার পার্টানার ছিলেন না। তাঁরা একে অপরের আত্মীয়ও।  অশোকের স্ত্রী মধু কাপুরের বোন বিন্দু ,রানা কাপুরের স্ত্রী। তাসত্ত্বেও অশোকের মৃত্যুর পর রানা গোটা ব্যবসার দখল নিতে মরিয়া প্রয়াস চালান তিনি। চিড় ধরতে শুরু করে দুই পরিবারের মধ্যেও। কিন্তু দুই পরিবারের সুসম্পর্ক বজায় রাখার মরিয়া প্রয়াস চালিয়েও সফল হননি বিন্দু। ২০০৯ সাল থেকেই ইয়েস ব্যাঙ্কের আধিপত্য দখলের লড়াই শুরু হয়। ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া হয় অশোক কাপুরের স্ত্রী ও মেয়েকেও। ২০০৯ সালে যে লড়াই শুরু হয়েছিল তা শেষ হয়েছিল ২০১৫ সালে। কিন্তু ২০১২ সালে রানা কাপুর ইয়েস ব্যাঙ্কের যে ইতিহাস প্রকাশ করেছিলেন তাতেও নাম ছিল না অশোক কাপুরের। 

২০১৫ সাল থেকেই পুরো ব্যাঙ্কের দখল চলে যায় রানা কাপুরের হাতে। অভিযোগ এই সময় থেকেই  ঋণ দেওয়ার হার বাড়িয়ে দিয়েছিল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক সংস্থাকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। ২০১৮ সাল থেকেই ক্ষতির মুখ দেখে ইয়েস ব্যাঙ্ক। সেই সময় থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ইয়েস ব্যাঙ্কের ওপর নজর রাখতে শুরু করে। ১ জানুয়ারি, ২০১৯- ইয়ের ব্যাঙ্কের প্রধান রানা কাপুরকে  সরে যাওয়ার নির্দেশও দেয়। রানা কাপুরেও সরে যান। কিন্তু তারপরেও ডরাডুবির হাত থেকে রক্ষা করা যায়নি ইয়েস ব্যাঙ্ককে।