সংক্ষিপ্ত
হিজাব নিয়ে ২০১৮ সালেই একটি রায় দিয়েছিল কেরালা হাইকোর্ট। সেখানে সাফ বলে দেওয়া হয়েছিল যে ধর্মীয় পোশাক কখনও স্কুলের ইউনিফর্মে বাধা হতে পারে না।
কর্নাটকের উদুপির সরকারি কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে দিকে দিকে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। মহারাষ্ট্রেও হিজাবের পক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান পর্ব শুরু হয়েছে। অংশগ্রহণকারী মহিলাদের হাতে পট্টি বেঁধে হিজাবের সমর্থনে প্রচারে নামেন। এদিকে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র সংগঠন হিজাব নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখায়। মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখানো হয়। যদিও হিজাব নিয়ে ২০১৮ সালেই একটি রায় দিয়েছিল কেরালা হাইকোর্ট। সেখানে সাফ বলে দেওয়া হয়েছিল যে ধর্মীয় পোশাক কখনও স্কুলের ইউনিফর্মে বাধা হতে পারে না।
কী ছিল সেই নির্দেশে?
স্কুলের নিজস্ব পোশাক রয়েছে। কয়েকজন কিশোরী ২০১৮ সালে কেরালা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিল। আসলে তারা ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের। কিন্তু, তারা স্কুলের পোশাকের উপর হিজাব ও ফুলহাতা শার্ট পরার দাবি জানিয়েছিল। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে আপত্তি জানায়। তাদের দাবি ছিল এই পোশাক স্কুলের পোশাকের সঙ্গে যথাযথ নয়। তাদের স্কুলের সঠিক পোশাক পরার জন্য নির্দেশ জানানো হয়েছিল। তা না হলে তারা ক্লাসে যোগ দিতে পারবে না বলেও জানানো হয় স্কুলের তরফে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তারা।
রায়দানের সময় হাইকোর্টের তরফে বলা হয়, ড্রেস কোডের ক্ষেত্রে একজনের নিজস্ব ধারণা এবং বিশ্বাস অনুসরণ করার স্বাধীনতা রয়েছে। একই সময়ে, কোনও প্রতিষ্ঠানেরও নিজস্ব কিছু অধিকার রয়েছে। সেই সময় তখন আদালতকে প্রতিযোগী মৌলিক অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে এবং সমস্যার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আবেদনকারীদের মৌলিক অধিকার প্রসঙ্গে আদালত জানায়, ধর্মীয় আদেশের উপর ভিত্তি করে পোশাক পছন্দ করা নারীর অধিকার। ভারতীয় সংবিধানের ২৫-এর ১ নম্বর ধারায় এর উল্লেখ রয়েছে। কাজেই, নিজেদের পছন্দমতো পোশাক নির্বাচন করা আবেদনকারীদের মৌলিক অধিকার বলে ধরে নিতে কোনও অসুবিধা হতে পারে না। কিন্তু, সেখানে মাথায় রাখতে হবে যে একটি প্রতিষ্ঠানেরও কিছু নিয়ম রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষেরও মৌলিক অধিকার আছে। ফলে সেটা কোনও অনুষ্ঠান বাড়ি নয় যে যা খুশি পোশাক পরে যাওয়া যায়। আর একটা সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকারের কথা মানার সময় সংখ্যাগরিষ্ঠদের কথাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। তাদেরও কিছু দাবি থাকতে পারে। ফলে সেক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন- হিজাব ইস্যুতে শুনানি নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নয়, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট
এরপর রায়দান করে হাইকোর্ট বলে, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর অধিকারের বিপরীতে আবেদনকারীরা তাদের ব্যক্তিগত অধিকার আরোপ করতে পারে না। ফলে আবেদনকারীরা হিজাব ও ফুল হাতা শার্ট পরে ক্লাস করবে কি করবে না সেটা ঠিক করবে প্রতিষ্ঠান নিজেই। আদালত কখনও কোনও প্রতিষ্ঠানকে এই বিষয়ে বিবেচনা করার নির্দেশ দিতে পারে না। এর ফলে ছাত্রীদের সেই আবেদন খারিজ করা হয়। পাশাপাশি বলা হয়েছিল, আবেদনকারী ছাত্রীরা যদি স্কুল ছাড়তে চায় তাহলে তাদের যেন স্কুলের তরফে স্থানান্তর শংসাপত্র দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- হিজাব পরায় কলেজ ছাত্রীকে কড়া ধমকানি. প্রথম দফা ভোটগ্রহণের আগে নয়া বিতর্কে
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে হিজাব পরিহিত কিছু মুসলিম মেয়েকে কর্নাটকের উদুপির একটি সরকারি কলেজে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে একাধিক কলেজে সেরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত কয়েকদিনে সেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার সকালেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উদুপির মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল কলেজে। গেরুয়া স্কার্ফ ও পাগড়ি পরে কলেজের বাইরে জড়ো হন একদল পড়ুয়া। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। পালটা ‘ন্যায় বিচার’-এর স্লোগান দেন হিজাব পরিহিত ছাত্রীরা। হিজাব পরা ছাত্রীদের দাবি, অধ্যক্ষ ক্লাসে ঢুকতে দেননি। একাধিক কলেজে সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিক্ষোভ, পাল্টা বিক্ষোভ হয়। সেই পরিস্থিতিতে ‘শান্তি এবং সম্প্রীতি’ বজায় রাখতে তিনদিন সমস্ত হাইস্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় কর্নাটক সরকার। তারপর থেকেই ফের হিজাব ইস্যু নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ।