The Resistance Front: মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam) জঙ্গি হামলার পর দায়স্বীকার করে বিবৃতি জারি করেছিল লস্কর-ই-তইবার (Lashkar-e-Taiba) ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (The Resistance Front)। কিন্তু তারা এখন এই দাবি অস্বীকার করছে।

Pahalgam Terror Attack: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নাটকীয় মোড়। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার (Lashkar-e-Taiba) ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (The Resistance Front) মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দায়স্বীকার করলেও, এবার এই সন্ত্রাসবাদী হামলায় তাদের ভূমিকা অস্বীকার করেছে। মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam) জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এই ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে একটি বিবৃতিতে রক্তপাতের দায় স্বীকার করেছিল TRF। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডিতে তাদের হ্যান্ডলারদের সরাসরি চাপের মুখে শনিবার এই জঙ্গি সংগঠন হামলার দায় অস্বীকার করেছে। এর আগে তারা যে বিবৃতি জারি করেছিল, তা অনুমোদিত ছিল না বলে দাবি করেছে এই জঙ্গি সংগঠন। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে TRF বলেছে, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জন্য তাদের দায়ী করা 'মিথ্যা' এবং 'তাড়াহুড়ো'। এই জঙ্গি সংগঠনের দাবি, ভারতের সাইবার গোয়েন্দারা তাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

পাকিস্তানের কৌশলে চলছে TRF?

কোনও জঙ্গি সংগঠনের এই দাবি নতুন কিছু নয়। এটি একটি পরিচিত ধরনের দিকে ইঙ্গিত করে। এটি প্রথমবার নয় যে পাকিস্তানের ডিপ স্টেট এই ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামায় (Pulwama) সন্ত্রাসবাদী হামলার সময় পাকিস্তান একইভাবে আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। তবে তাদের সেই কৌশল ধরা পড়ে যায়।

পহেলগাঁওয়ে হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পাক সেনা!

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ব্যক্তিগতভাবে লস্কর-ই-তইবার নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে TRF যেন তাদের দায়স্বীকারের কথা ফিরিয়ে নেয়। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি পাকিস্তানের ভূমিকা সম্পর্কে কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা শুরু করার পরই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। TRF ২০২৩ সালে ভারতের বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে সরকারিভাবে ঘোষিত একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী। দীর্ঘদিন ধরে লস্কর-ই-তইবার ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ছায়া সংগঠন হিসেবে কাজ করে আসছে TRF। গোয়েন্দা মূল্যায়ন দেখায় যে TRF নিয়োগ, অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাসী মিশনের জন্য সরবরাহ পরিচালনা করে — যখন LeT আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে বিশ্বাসযোগ্য অস্বীকৃতি বজায় রাখে। তথাকথিত হ্যাকিংয়ের অজুহাত সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি ঢাকা দেওয়ার একটি কৌশল। TRF প্রাথমিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেছিল এতে কোনও সন্দেহ নেই। তাদের আকস্মিক অস্বীকৃতি, একটি কাল্পনিক হ্যাকিং ঘটনার জন্য দোষারোপ করা, কেবল পাকিস্তানের মরিয়া অবস্থাকেই প্রকাশ করে। বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে যে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলাটি মূলত LeT-এর সঙ্গে যুক্ত বিদেশি সন্ত্রাসবাদীদের একটি দল দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। এই সন্ত্রাসবাদীদের স্থানীয় জঙ্গিরা সাহায্য করেছিল বলে জানা গিয়েছে। ২৬/১১ মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড এবং লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদের নির্দেশে কাজ করেছিল জঙ্গিরা।

জঙ্গি হামলার জবাব দিচ্ছে ভারত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে হত্যাকারীদের এবং তাদের সমর্থকদের রেহাই দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাড়া করবষ প্রতিটি সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের সমর্থকদের শনাক্ত, খুঁজে বের করা এবং শাস্তি দেওয়া হবে।’ ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য SAARC ভিসা ছাড় যোজনা (SVES) স্থগিত করা, পাকিস্তানি সামরিক সংযুক্তি ব্যক্তিদের বহিষ্কার করা, ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা এবং দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র পাঞ্জাবের আটারিতে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (ICP) বন্ধ করা। পাকিস্তান ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করা এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করার কথা জানিয়েছে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি অংশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সাধারণ কাশ্মীরিরা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। অনেকে হিংসার অবসান দাবি করে এবং পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে শান্তি বিঘ্নিত করার অভিযোগ করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি আবার বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কীভাবে পাকিস্তান কাশ্মীরে সন্ত্রাস বৃদ্ধি করার জন্য TRF-এর মতো সংগঠনগুলিকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক চাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ইতিহাস যেমন দেখায় — পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও পর্যন্ত এই ধরনের কৌশল আর বিশ্বকে বোকা বানাতে সম্ভব নয়।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।