সংক্ষিপ্ত
শ্রী চিন্না জীয়র স্বামী আশ্রমের ৪০ একর জমিতে রামানুজাচার্যের মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে পদ্মের উপর হাতজোড় করে বসে রয়েছেন তিনি। মূর্তির উচ্চতা ২১৬ ফুট। এই মূর্তিটি উচ্চতার নিরিখে দ্বিতীয় বলে জানিয়েছে জীয়র এডুকেশনাল ট্রাস্ট।
সমাজের সব স্তরের মানুষের সমানাধিকারের পক্ষে ছিলেন রামানুজাচার্য (Ramanujacharya)। এমনকী, ধুঁকতে থাকা ভক্তি আন্দোলনে প্রাণ জুগিয়েছিলেন তিনি। জাতি, ধর্ম, শ্রেণি নির্বিশেষ সমানাধিকার প্রাপ্ত মানুষকে নিয়ে সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই বৈদিক সন্ত তথা দার্শনিক শ্রী রামানুজাচার্যকে ( Saint Sri Ramanujacharya) শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Naredra Modi)। রামানুজাচার্যর ১০০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার তাঁর ২১৬ ফুট উঁচু মূর্তি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই মূর্তির নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্ট্যাচু অব ইকুয়ালিটি’ (Statue of Equality)। তেলেঙ্গানায় হায়দরাবাদের (Hyderabad) নিকটস্থ সামশাবাদে ৪৫ একর জমিতে এই মূর্তি নির্মাণ করা হয়।
শ্রী চিন্না জীয়র স্বামী আশ্রমের ৪০ একর জমিতে রামানুজাচার্যের মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে পদ্মের উপর হাতজোড় করে বসে রয়েছেন তিনি। মূর্তির উচ্চতা ২১৬ ফুট। এই মূর্তিটি উচ্চতার নিরিখে দ্বিতীয় বলে জানিয়েছে জীয়র এডুকেশনাল ট্রাস্ট।
আরও পড়ুন- 'স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি'-র উদ্বোধনে মোদী, দেশবাসীর জন্য দিলেন নতুন ঐক্যের বার্তা
মূর্তি উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "জগৎগুরু শ্রী রামানুজাচার্যের এই বিশাল মূর্তি আমাদের সমতার বার্তা দিচ্ছে। এই মূর্তিটি তাঁর জ্ঞান, বিচ্ছিন্নতা এবং আদর্শের প্রতীক। এই মূর্তি আমাদের সাম্যের বার্তা দিচ্ছে। এই বার্তা নিয়েই আজ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’ মন্ত্রে দেশ তার নতুন ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করছে।" তিনি আরও বলেন, "একদিকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ ঐক্যের শপথের পুনরাবৃত্তি করছে৷ অন্যদিকে রামানুচার্যের ‘স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি’ সমতার বার্তা দিচ্ছে।"
রামানুজাচার্য কে ছিলেন?
দক্ষিণ ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামানুজাচার্য। এরপর একাদশ শতাব্দীতে গোটা দেশে পায়ে হেঁটে ঘুরে সাম্যের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। একজন ধর্মতাত্ত্বিক ও দার্শনিক ছিলেন তিনি। শ্রী রামানুজাচার্য, উপাধ্যায়, লক্ষ্মণ মুনি নামেও পরিচিত ছিলেন। সাধারণভাবে হিন্দুরা তাঁকে হিন্দু দর্শনের বিশিষ্টা দ্বৈত বেদান্তের প্রধান ব্যাখ্যাদানকারী হিসেবে দেখেন।
দেশের ভক্তি আন্দোলন বা ভক্তিবাদ বৈষ্ণব মতাদর্শের অন্যরূপ। যার যুগপুরুষ হিসেবে রামানুজাচার্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন দেশবাসী। আদি শংকরাচার্য এবং তাঁর দশনামী সম্প্রদায় যেমন শৈব সম্প্রদায়কে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখিয়েছে। তেমনভাবেই রামানুজাচার্যের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের বৈষ্ণব আন্দোলন। যার প্রভাব শুধু দক্ষিণ ভারতেই না। উত্তর ভারতেও সমানভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। তাঁর গ্রন্থেই নতুন করে বৈষ্ণব আদর্শকে আপন করে নিয়েছে ভারতবাসী।
রামানুজ বেদান্ত দর্শনের উপর ভিত্তি করে তাঁর নতুন দর্শন বেদান্ত রচনা করেছিলেন। বেদান্ত ছাড়াও রামানুজাচার্য সপ্তম-দশম শতকের মরমী ও ভক্ত আলওয়ার সাধুদের ভক্তি দর্শনের এবং দক্ষিণের পঞ্চরাত্র ঐতিহ্যের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন।
স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি সম্পর্কে
পাঁচটি ধাতু দিয়ে ওই মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সোনা, রুপো, তামা, ব্রোঞ্চ ও জিঙ্ক। বসে থাকা ধাতব মূর্তিগুলির মধ্যে এটি বিশ্বের মধ্যে সবথেকে উচ্চতম মূর্তি। ৫৪ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ‘ভদ্রবেদি’ ভবনের উপর স্ট্যাচু অব ইকোয়ালিটি বসানো হয়েছে।
প্রথমে ৫৪ ফুট উঁচু ত্রিস্তরীয় ‘ভদ্রবেদি’ তৈরি করা হয়েছে। এরপর বেদির উপর গড়ে তোলা হয়েছে বিশালাকার একটি পদ্মফুল। পদ্মফুলে মাঝে বসানো রয়েছে মূর্তিটি। মূর্তি সংলগ্ন ৬৩ হাজার ৪৪৪ স্কোয়্যার ফুট এলাকায় নির্মাণকার্য রয়েছে। নিচের তলায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামানুজাচার্যের জীবনকাল এবং দর্শন। এছাড়াও ১২০ কেজি ওজনের রামানুজচার্যের একটি স্বর্ণ মূর্তি সহকারে মন্দিরও নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন পুজো করা যায়।
একেবারের উপরের তলায় ১৪ হাজার ৭০০ স্কোয়্যার ফুট জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বৈদিক ডিজিটাল গ্রন্থাগার এবং গবেষণা কেন্দ্র। এছাড়াও রয়েছে ভারতীয় প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহালয়, থিয়েটার, রামানুচার্যের জীবন সম্পর্কিত শিক্ষামূলক গ্যালারি। গোটা প্রকল্পে প্রায় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রাপ্ত দানের টাকায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে টানা ১৪ দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে হায়দরাবাদে। ৩ ফেব্রুয়ারি যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মূর্তির উদ্বোধন করেন। আর ১৩ ফেব্রুয়ারি রামানুজাচার্যের ১২০ কেজি সোনার মূর্তি উন্মোচন হবে।