সংক্ষিপ্ত
- এবার কি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন নির্ভয়ার মা?
- দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে হচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী?
- মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে?
- রাজধানীতে আশাদেবীকে নিয়ে জোর গুঞ্জন।
ভোটে দাঁড়াচ্ছেন নির্ভয়ার মা? দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে হচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী? তাও আবার নয়াদিল্লি আসনে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে? নির্ভয়া গণধর্ষণ-হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির ফাঁসি আদেশ স্থগিত হওয়ার পরদিনই নির্ভয়ার মা আশা দেবী, 'আমি এতদিন রাজনীতির কথা বলিনি', বলে যা বলেন, তা বলা যায় আপ ও বিজেপি কে সরাসরি আক্রমণ। তাঁর মেয়ের ঘটনা নিয়ে তারা 'রাজনৈতিক ফায়দা' লোটার চেষ্টা করছে এমন কথাও বলেন তিনি। তারপরই রটে যায় তাঁর কংগ্রেস প্রার্থী হওয়ার কথা। তবে এই জল্পনা উড়িয়েই দিয়েছেন আশাদেবী।
বৃহস্পতিবার, ফাঁসির আদেশ স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর আদালত কক্ষেই ভেঙে পড়েছিলেন আশা দেবী। আঙুল তোলেন বিচার ব্যবস্থা এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দিকে। শুক্রবার, একেবারে সরাসরি বিজেপি-আপ'কে নিশানা করে কড়া আক্রমণ শানালেন নির্ভয়ার মা। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, 'এখনও অবধি আমি কখনও রাজনীতির বিষয়ে কোনও কথা বলিনি, আমি কেবল হাতজোড় করে ন্যায়বিচারের কথা বলেছি। তবে এখন আমি বলতে চাই ২০১২ সালে যারা তেরঙ্গা ও কালো পতাকা নিয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন, তারাই আজ রাজনৈতিক লাভের জন্য আমার মেয়ের মৃত্যু নিয়ে খেলা করছেন'।
আরও পড়ুন - 'তারিখ পে তারিখ', তিন দশক পর নির্ভয়ার মায়ের মুখেও সেই অসহায় ক্ষোভ
এখানেই থামেননি আশা দেবী। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বলে চলেন, 'কেউ কেউ ন্যায়বিচারের এই বিলম্বের জন্য রাজ্য সরকারকে দোষ দিচ্ছেন আবার কেউ কেউ আমাদের হাতে পুলিশ বিভাগকে দিয়ে দিন, আমরা দোষীদের দু'দিনের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেব'। এরপর রীতিমতো নাম করেই তিনি দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার নিন্দা করে বলেন, 'মনীষ সিসোদিয়া বলছেন, তাঁরা দিল্লি পুলিশের অধিকার পেলে দোষীদের দু'দিনের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবেন। মনে হচ্ছে দিল্লি পুলিশবাহিনীর অধিকার আদায়ের জন্যই এই ধরণের বিবৃতি দিচ্ছেন'।
আরও পড়ুন - 'শাস্তি দেওয়া হচ্ছে ', কান্নায় ভেঙে পড়ে গুরুতর অভিযোগ আনলেন নির্ভয়ার মা
শুধু আম আদমি পার্টিই নয়, এদিন তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপি-ও। তাও আবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আশা দেবী মোদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ''বহুত হুয়া নারী পে অত্যাচার, অবকি বার মোদী সরকার' এই স্লোগান তুলে আপনি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন, এবার দয়া করে এই ধর্ষকদের ২২ জানুয়ারিতে ফাঁসি দিন। আপনাদের রাজনৈতিক লাভের জন্য আমাদের এবং আমার মেয়েকে ব্যবহার করা বন্ধ করুন। ন্যায়বিচারের এই লড়াইয়ে আমি এই দুই দলের মধ্যেই আটকে আছি'।
আরও পড়ুন - 'এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে', নির্ভয়াকে প্রথম দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন ডাক্তারও
এরপরই রাজধানীর রাজনৈতিক রটে যায়, নির্ভয়ার মা আশাদেবী দিল্লি বিধানসবা নির্বাচনে কংগ্রেস দলের প্রার্থী হতে চলেছেন। শুধু তাই নয়, একেবারে মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে নয়া দিল্লি আসন থেকেই দাঁড় করানো হবে তাঁকে। তবে এই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ' রাজনীতিতে আমার কোনও আগ্রহ নেই। আমার সঙ্গে কংগ্রেসের কারোর কথা হয়নি। আমি শুধু আমার মেয়ের ন্যায়বিচার চাই। আর চাই আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হোক।'
আরও পড়ুন - 'আমায় জড়িয়ে ধরো', তিহার জেলে বাবার সামনে কান্না ভেঙে পড়ল নির্ভয়ার ধর্ষক
সামনেই আসছে দিল্লির বিধানসভা ভোট। তার আগে নির্ভয়া কাণ্ডের আসামিদের ফাঁসির ঘটনাকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইছে সব দলই। এর আগে ফাঁসির দিন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি নেতা ততা প্রাক্তন ক্রিকেটার এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে টুইট করেছিলেন। বৃহস্পতিবার, নির্ভয়া মামলার সাজাপ্রাপ্তদের ফাঁসি স্থগিত হওয়ার পর ফের একবার এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি এবং আপ। বিজেপি দিল্লির আপ সরকারের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়ার 'জটিলতা' এবং 'সহানুভূতি'র অভাবের অভিযোগ তোলে। আর আপ তার বিদেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে তারা 'মিথ্যা' বলে লোককে 'উস্কানি' দিচ্ছে।
আরও পড়ুন - ফাঁসির ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা নির্ভয়ার ধর্ষকের, শেষ মুহূর্তে বাঁচাল পুলিশ
আসরে নামেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভাড়েকর-ও। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল প্রত্যাখ্যান করার সঙ্গে সঙ্গেই যদি আপ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির নোটিশ জারি করতো তাহলে এতদিনে তাদের ফাঁসি হয়ে যেত।
আরও পড়ুন - 'ঝুলিতে আমার ছেলের প্রাণ দিন', নির্ভয়ার মায়ের কাছে আঁচল পাতলেন ধর্ষকের মা
এরই তীব্র প্রতিক্রিয়ায় দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা মনীশ সিসোদিয়া দিল্লির আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে তাদের সরকারের কাছে দুই দিনের জন্য হস্তান্তর করার জন্য কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। দুদিনেই তাহলে তারা ২০১২ সালের এই গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দোষীদের ফাঁসি দিয়ে দেবে বলেও দাবি করেন।