মিশরীয় রাজপরিবার, সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে যোদ্ধারা চোখের চারপাশে ঘন কালো রঙের এই প্রলেপ ব্যবহার করতেন—এর পেছনে নিহিত ছিল গভীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বৈজ্ঞানিক ও সামরিক কারণ।
প্রাচীন মিশরের যোদ্ধারা শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং মরুভূমির তীব্র সূর্যরশ্মি ও বালির ঝলকানি থেকে চোখকে বাঁচাতে, পোকামাকড় ও সংক্রমণ (infection) প্রতিরোধ করতে এবং খারাপ আত্মা (evil spirits) তাড়ানোর জন্য চোখে কাজল (kohl) ব্যবহার করতেন। যা গ্যালেনা ও ম্যালাকাইটের মতো খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি হতো এবং তাদের সামরিক ও স্বাস্থ্যগত উভয় ক্ষেত্রেই এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
*বিস্তারিত আলোচনায় জানা যাক*:
* সূর্যের তীব্রতা ও glare প্রতিরোধ: মরুভূমির প্রখর রোদে সরাসরি তাকালে চোখে সমস্যা হতো। কাজলের কালো রেখা চোখের নিচে একটি শেডের মতো কাজ করত, যা সূর্যের আলো শোষণ করে glare কমাতো এবং যোদ্ধাদের দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করত, যেমনটা এখন ফুটবল খেলোয়াড়রা করে থাকেন।
* স্বাস্থ্যগত উপকারিতা (Health Benefits): কাজল তৈরিতে ব্যবহৃত গ্যালেনা (সীসা সালফাইড) এবং ম্যালাকাইট (তামা কার্বনেট) চোখের সংক্রমণ (infection) প্রতিরোধে সাহায্য করত বলে বিশ্বাস করা হতো। এটি চোখের চারপাশে পোকামাকড় বসাও প্রতিরোধ করত।
* আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব (Spiritual Significance): প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে কাজল চোখকে অশুভ শক্তি (evil spirits) থেকে রক্ষা করে। এটি শুধু যোদ্ধাদের জন্যই নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য ব্যবহৃত হত এবং এটি তাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
* সামরিক কৌশল (Military Tactic): চোখে কাজল ব্যবহারের ফলে শত্রুর চোখে সরাসরি তাকানো কঠিন হতো, যা যুদ্ধে একটি কৌশলগত সুবিধা দিত। ঘন কালো রেখা চোখের আকারকে বড় দেখাত এবং শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে পারত।
* সামাজিক মর্যাদা (Social Status): কজলের ব্যবহার কেবল সামরিক বা স্বাস্থ্যগত কারণে সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি সৌন্দর্য ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীকও ছিল। ফারাও থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই এটি ব্যবহার করতেন, যা মিশরীয় সভ্যতার একটি আইকনিক অংশ হয়ে ওঠে।
সুতরাং, প্রাচীন মিশরীয় যোদ্ধাদের জন্য কাজল ছিল একটি বহুমুখী উপাদান—যা তাদের চোখকে সুরক্ষিত রাখত, স্বাস্থ্য ভালো রাখত এবং একই সাথে তাদের সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যবোধের প্রকাশ ঘটাত।


