Iran Israel Conflict: পশ্চিম এশিয়া রীতিমতো সরগরম। ইরান বনাম ইজরায়েল সংঘাতে পরিস্থিতি বেশ জটিল।  

Iran Israel Conflict: কে দাঁড়াবে কার পাশে? ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকা কি যুদ্ধে নামবে? তা নিয়ে জল্পনা চলছেই। কারণ, খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই সেই জল্পনা তৈরি করেছেন। তাঁর কথায়, তিনি যুদ্ধে নামতেও পারেন, আবার নাও নামতে পারেন। 

সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই এবার আমেরিকাকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিল রাশিয়া। তারা স্পষ্ট অবসিথান নিল, আমেরিকা যুদ্ধে যোগ দিলে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে! আর তারপর আবার নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ট্রাম্প যুদ্ধে নামলে কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি ইরানের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন?

রাশিয়ার সতর্কবার্তা

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আমেরিকাকে রীতিমতো সতর্ক করে দিয়েছে রাশিয়া। সেই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, আমেরিকা যদি ইরানে হামলা চালায়, তাহলে কিন্তু তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে। এমনকি, য়াশিংটনকে সতর্ক করে তিনি জানান, "ঐ ধরনের পদক্ষেপ নিলে করলে পুরো পরিস্থিতিটাই ঘেঁটে যেতে পারে।’’ আর তার ফলে, পরমাণু বিপর্যয় ঘটতে পারে বলেও যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া।

উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউসের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ নিউজ’ বলেছে, চলতি সপ্তাহের শেষ দিকেই ইরানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে আমেরিকা। যদিও হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে সরকারিভাবেই এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি ওদিকে আবার সংবাদমাধ্যম সিএনএন দাবি করেছে, ওয়াশিংটনের একটি অংশ চাইছেন, আমেরিকা এই যুদ্ধে নিজেদের জড়িয়ে ফেলুক। তবে যুদ্ধে না জড়িয়েও কীভাবে স্বার্থরক্ষা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা চলছে হোয়াইট হাউসে।

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে যৌথভাবে হুমকি দিয়ে চলেছে আমেরিকা এবং ইজ়রায়েল। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, খামেনেইকে হত্যা করলেই একমাত্র যুদ্ধের অবসান হতে পারে। সেইসঙ্গে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দাবি করেছেন, তিনি ইরানের ধর্মীয় নেতার গতিবিধি সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল রয়েছেন। 

আমেরিকা চাইলেই তাঁকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু ওয়াশিংটন এখনই তা করবে না। এরপর এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার, পুতিনের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। সেই জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, তিনিও শুনেছেন যে, খামেনেইকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করতে চান না। রুশ প্রেসিডেন্টের কথায়, “ইরানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একাধিক জটিলতা সত্ত্বেও সেই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষেই গোটা সমাজ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।”

ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত নিয়ে ইতিমধ্যেই ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে 

সূত্রের খবর, পুতিন ইরানের উপর ইজ়রায়েলি হামলা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেন ট্রাম্পের কাছে। ইরান আবার রাশিয়ার বন্ধু দেশ বলেই পরিচিত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্রেমলিনের মিত্র হয়েই থেকে গেছে তেহরান। ঠিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাশিয়াকে ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে গেছে তারা। অনেকের মত, এবার বন্ধুর জন্য রাশিয়াও মাঠে নামলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এদিকে বৃহস্পতিবার, সপ্তম দিনেও ইরানের ছো়ড়া মিসাইলে ইজ়রায়েলের দক্ষিণ প্রান্তে বেরশেবা শহরের একটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি কার্যত, জটিল। হাসপাতালে এই হামলায় অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি। এমনকি, হামলা চালানো হয়েছে ইজ়রায়েলি সেনার কমান্ড অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স (আইডিএফ সি৪আই) সদর দফতরেও। তেল আভিভেও ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসে পড়েছে বলে খবর। 

ইজ়রায়েলের হাসপাতালে হামলার আগে ইরানের আরাক পরমাণুকেন্দ্রেও হামলা চালানোর ঘটনা সামনে এসেছে। ইজ়রায়েল ঐ হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ। যদিও ইরানের দাবি, হামলার আগেই পরমাণুকেন্দ্রটি পুরো ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে, সেখান থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়ানোর কোনওরকম আশঙ্কাই নেই।

তিনটি দেশের সঙ্গে ইরানের বৈঠক

ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। তাঁকে উদ্ধৃত করে এই খবর প্রকাশ করেছে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম। আরাকচি এও জানিয়েছেন, এই তিনটি দেশের অনুরোধে জেনেভায় বৈঠকে বসতে চলেছেন তিনি। সেই বৈঠকে থাকবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিবিদও। তবে ইরান এই বৈঠকে রাজি হওয়ার পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে, তাহলে কি আমেরিকা এবং ইজ়রায়েল সহ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির চাপে নত হতে চলেছে ইরান? জার্মান প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, বৈঠকের উদ্দেশ্য হল, ইরানের থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নাগরিকদের স্বার্থ ছাড়া আর কোনও কাজে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে না, ইরানের থেকে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি। 

আইএইএ-কে দুষছে ইরান

রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে সরাসরি দুষেছে ইরান। বৃহস্পতিবার, ইরানের বিদেশ মন্ত্রক অভিযোগ করেছে, ইজ়রায়েলের অন্যায় আক্রমণে প্রশ্রয় দিয়েছে ওই সংস্থা। শুধু তাই নয়, বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ন্ত্রিত সমস্ত সংস্থাকেই দায়ী করেছে ইরান। বৃহস্পতিবার, ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল গ্রসিকে উদ্দেশ্য করে নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘ইজ়রায়েল যে একটা অন্যায় আক্রমণ চালাচ্ছে, তাতে প্রশ্রয় দিচ্ছেন আপনি।’’ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রসি জানান, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে। কিন্তু তার সপক্ষে কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। এবার সেই প্রসঙ্গ টেনেই বাঘেই বলেন, “অনেক দেরি হয়ে গেছে। বিভ্রান্তিকর বর্ণনার পরিণতিও ভয়াবহ হতে পারে। আপনাকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।