সংক্ষিপ্ত
তারার মতো সবুজ পাতাই এখন থাইল্যান্ডকে করতে চলেছে বিশ্বের ‘গাঁজা বিস্ময়কর দেশ’। গত জুন মাস থেকে মার্চ মাস, অর্থাৎ মাত্র ৯ মাসে দেশটি সারা পৃথিবী থেকে যা লাভ করেছে, তাতে এর ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, তা ভেবে সত্যিই বিস্মিত হচ্ছেন বিশ্বের তাবড় ব্যবসায়িরা
২০২২ সালের জুন মাসের আগে পর্যন্ত সামান্য পরিমাণের গাঁজা সহ ধরা পড়লেই শাস্তির বিধান ছিল ৫ বছর। সেই শাস্তি নিবারণ হল জুন মাস থেকে। তার পাশাপাশি উঠে গেল গাঁজার ওপর নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতেই চড়চড় করে চড়তে শুরু করে দিয়েছে দেশের অর্থনীতির কাঁটা। ২০২২-এর জুন মাস থেকে ২০২৩-এর মার্চ মাস, অর্থাৎ মাত্র ৯ মাসে থাইল্যান্ড সারা পৃথিবী থেকে যা লাভ করেছে, তাতে এই দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেই কথা ভেবেই তাজ্জব হচ্ছেন বিশ্বের তাবড় ব্যবসায়ীরা।
তারার মতো সবুজ পাতাই এখন থাইল্যান্ডকে করতে চলেছে বিশ্বের ‘গাঁজা বিস্ময়কর দেশ’। অথচ, ১০ মাস আগে পর্যন্ত এই দেশে গাঁজার চাষ করে ধরা পড়লে শাস্তির বিধান ছিল ১৫ বছরের হাজতবাস। কিন্তু, ২০২২ সালে এলিভেটেড এস্টেটের প্রতিষ্ঠাতা কিটি চোপাকার থাইল্যান্ড প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন দেশে গাঁজার চাষ ও ব্যবসা বৈধ করে দেওয়ার জন্য। এলিভেটেড এস্টেট সংসদেও এই সংক্রান্ত আইন পাশ করানোর জন্য থাইল্যান্ডের সংসদীয় কমিটির অংশ হিসেবে কাজ করেছে। তারপরেই দেশে আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে গাঁজা। দেশের হোটেল রেস্তরাঁয় গাঁজাসমৃদ্ধ খাবারদাবার বা সরবতের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে গাঁজা পাওয়ার ATM-ও।
তবে, গাঁজা সেবন করা দেশের অন্দরে একেবারে লাগামছাড়া নয়, এর জন্য কতগুলি বিধিনিষেধ অবশ্যই মানতে হবে। প্রথমত, গাঁজা বিক্রি ডিসপেনসারিগুলির বৈধ লাইসেন্স থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, দোকানের মালিকপক্ষকে তাঁদের বিক্রি করা প্রতিটি গাঁজা ফুলের উৎস সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। তৃতীয়ত, যিনি বা যাঁরা গাঁজা কিনছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত বিবরণের রেকর্ড রাখতে হবে। চতুর্থত, গাঁজা কোনোভাবেই অনলাইনে বিক্রি করা যাবে না। পঞ্চমত, অপ্রক্রিয়াজাত গাঁজা ফুল ছাড়া অন্য কোনও দ্রব্যে ০.২ শতাংশের বেশি টিএইচসি থাকা যাবে না (গাঁজায় থাকা সাইকোট্রপিক কেমিক্যালকেই টিএইচসি নামে ডাকা হয়)। ষষ্ঠত, ২০ বছর বয়সের নিচের কোনও ব্যক্তির কাছে গাঁজা বিক্রি করা যাবে না।
থাইল্যান্ডের প্রধান শাসকদল ভূমিজাইথি পার্টির প্রধান নেতা আনুতিন চার্নভিরাকুল ২০১৯ সালের নির্বাচনে জেতার জন্য তাঁর দলের ইশতেহারে গাঁজা বৈধকরণ করার কথা ঘোষণা করে দেন। এই ঘোষণার ফলে তিনি জিতে তো গেছিলেন, কিন্তু, গাঁজার এই ব্যবসা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেটা ঠিক করার আগেই গাঁজাকে বৈধ করে দেওয়া হয়। দেশের দলীয় দলাদলির মধ্যে পড়ে পরিকল্পিত রাখা নতুন আইনগুলোও আর পাশ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের পর গাঁজার বৈধকরণ আদৌ টিকে থাকবে কিনা, সেই সম্পর্কে সন্দিহান রয়েছেন গাঁজা ব্যবসায়ী এবং উৎপাদকরা। বর্তমানে এক এক ধরনের গাঁজা ফুল খোলা বাজারে বিক্রি হয় ১০ থেকে ৮০ ডলার অর্থমূল্যে (৮১৭ থেকে ৬৫৩৯ টাকা)।
১৯৭০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি উপজাতিরা ব্যাপকহারে গাঁজা চাষ করতেন, এখানকার ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত সীমান্ত এলাকা বিশ্বের বৃহত্তম আফিমের উৎস বলে পরিচিত। উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডে ভেষজ এবং রান্নার উপাদান হিসেবেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো গাঁজা। তবে, সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে ব্যাপক রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে থাইল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলের মানুষরা গাঁজাকে বিপজ্জনক দ্রব্য হিসেবেই ধরতে শুরু করেছিলেন, এরপর হঠাৎ দেশে চিকিৎসা বা ব্যবসাজাত লাভের কারণে প্রশাসন গাঁজা বৈধ ঘোষণা করে দিতে হুড়মুড় করে গাঁজা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক সমাজের একটা বড় অংশ। কৃষকরা ছাড়া সাধারণ মানুষজনও অনেকেই নিজের বাড়িতে গাঁজার চাষ করা শুরু করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, লাভের অঙ্কে ক্রমাগত শীর্ষের দিকে এগোচ্ছে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক। ফলে, পৃথিবীতে ‘গাঁজা বিস্ময়কর দেশ’ যে সত্যিই বিস্ময় সৃষ্টি করতে পারে, তা সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত অর্থনীতিবিদরা।
আরও পড়ুন-
ছাত্রীদের শৌচাগারে লুকিয়ে লুকিয়ে ভিডিও তুলছেন ছাত্র, ধরা পড়তেই ব্যাপক চাঞ্চল্য প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে
মল্লিকবাজারের ফুলের ব্যবসায় বড়সড় ক্ষতি, রাজ্য সরকারের কাছে বাঁচার আর্তি ফুলবিক্রেতাদের
Earthquake News: পর পর ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ভারত, রবিবার আরও একবার আতঙ্কের ছায়া