ইজরায়েল-ইরান সংঘাতে ইজরায়েলের পক্ষ নিয়ে আমেরিকা যে হামলা চালিয়েছে, তাতে ব্যাঙ্কার বাস্টার বোমার পাশাপাশি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে।
ইজরায়েল-ইরান সংঘাতে ইজরায়েলের পক্ষ নিয়ে আমেরিকা যে হামলা চালিয়েছে, তাতে ব্যাঙ্কার বাস্টার বোমার পাশাপাশি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে। জিবিইউ-৫৭ ব্যাঙ্কার বাস্টার বোমা বি-২ বোমারু বিমান থেকে ফোরডো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে নিক্ষেপ করা হলেও, অন্যান্য ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রে ডুবোজাহাজ থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে নিক্ষেপ করেছে আমেরিকা। যুদ্ধক্ষেত্রে আমেরিকার প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের অন্যতম হল টমাহক।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কী?

আমেরিকার জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপলয়েড পদার্থবিদ্যা গবেষণাগারে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। শীতল যুদ্ধের সময় নকশা করা টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ১৯৮৩ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর অংশ হয়। ৫.৬ মিটার দীর্ঘ টমাহকের ওজন বুস্টার সহ ১,৬০০ কিলোগ্রামের বেশি। রাডার এড়াতে ভূপৃষ্ঠের খুব কাছ দিয়ে ছুটে চলে এই ক্ষেপণাস্ত্র। এর গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮০ কিলোমিটার। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ১২৫০ কিলোমিটার থেকে ২,৫০০ কিলোমিটার। সাবসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে পরিচিত টমাহক সাধারণত আমেরিকান নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বা ডুবোজাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা হয়। জিপিএস, আইএনএস, টেরকমের মতো বিভিন্ন নেভিগেশন ব্যবস্থা ব্যবহার করে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অত্যন্ত বিস্ফোরক শক্তিশালী ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। ৪৫০-১০০০ কিলোগ্রাম ওয়ারহেড বহন করতে পারে টমাহক।

পশ্চিম এশিয়ায় পূর্বেও টমাহক নিক্ষেপ
১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় অপারেশন ডেজার্ট স্টর্মের অংশ হিসেবে আমেরিকান সেনাবাহিনী প্রথমবার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকা ২৮০+ টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বলে জানা গেছে। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময়ও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এরপর লিবিয়া ও সিরিয়াতেও একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। আমেরিকার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের তালিকায় টমাহকের স্থান। মার্কিন নৌবাহিনী ছাড়াও ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে।

জুন ২২ তারিখে ইরানের ফোরডো, নাতানজ, ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করার লক্ষ্যে আমেরিকা জিবিইউ-৫৭ বাংকার বাস্টার বোমা এবং টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছয়টি জিবিইউ-৫৭ বাংকার বাস্টার বোমা ফোরডোর প্রবেশপথে আঘাত হেনেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, ৪০০ মাইল দূর থেকে ডুবোজাহাজ থেকে নাতানজ ও ইসফাহানে ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে আমেরিকা। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শুরুর দশম দিনে আমেরিকা সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়।


