সংক্ষিপ্ত
- ২০ তারিখ মধ্যরাত থেকেই শুরু হয়েছে তীব্র ঝড় ও বজ্র-বিদ্যুপাত
- ভোররাতে তা থেমে গেলেও ২১ তারিখ ভোর থেকে ফের শুরু হয়
- আকাশ কালো করে ফের আছড়ে ঝড় ও বজ্র-বিদ্যুৎপাত
- যদিও কোনও ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা পূর্বাভাসে উল্লেখ নেই
এ যেন বাতাস ও বজ্র-বিদ্যুৎপাতের নাচন। ২১ তারিখ ভোরে দিনের আলো ফুটতে না ফুটতেই দিক-চক্রবাল জুড়ে আচমকাই নিকষ কালো অন্ধকার নেমে আসে। আর সেই সঙ্গে প্রবল বাতাস। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার। কড়াত-কড়াত করে বাজের আঁছড়ে পড়ার আওয়াজ বহু কলকাতাবাসীর ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। আতঙ্কে অনেকেই বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন ভোরের আকাশ জুড়ে যেন নেমে এসেছে সন্ধ্যার অন্ধকার। যদিও এই পরিস্থিতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে বাতাস ও বজ্র-বিদ্যুৎ-এর তাণ্ডব শুরু হয়ে তা সকাল ছটা পনেরো-র মধ্যে আক্রমণাত্মক মেজাজ অনেকটাই হারিয়ে ফেলে।
গাঙ্গেয় পশ্চমবঙ্গ জুড়ে যে এমন এক আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে তা আবহাওয়ার পূর্বাভাসেই উল্লেখ ছিল। কারণ, বঙ্গোপাসাগর থেকে জলকণাভর্তি বাতাস অসম এবং উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়ে এক ঘূর্ণাবর্ত তৈরি করেছে। এর প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়াও। সেখানে ২০ তারিখ সকাল থেকেই ভারী মেঘের আনাগোনা বেড়ে যায়। ২০ তারিখ সন্ধের মধ্যে কলকাতা এবং তার সংলগ্ন এলাকার আকাশেও ঢুকে পড়ে ভারী মেঘ। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সমগ্র অংশ এবং উত্তরবঙ্গের কিছুটা অংশ যে ঘন মেঘে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে তা আবহাওয়ার দফতরের উপগ্রহ চিত্রে সামনে আসে। ২০ তারিখ মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে যায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড়, বজ্র-বিদ্যু এবং বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। কোথাও কোথাও হয় শিলাবৃষ্টি।
গত কয়েক দিন ধরেই আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং আরব সাগরের উপরেও বেশ কিছু পশ্চিমী ঝঞ্জা ও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে এর জের দিল্লি, জম্মু ও কাশ্মীর এবং পঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশের আবহাওয়ায় বিস্তর পরিবর্তন এসেছে। সেখানে মাঝে মধ্যে আকাশ কালো করে প্রবল ঝড়, বজ্র-বিদ্যুৎপাত এবং বৃষ্টি হয়েছে। এমনকী হিমাচল প্রদেশে তুষারপাতও হয়েছে। আবহাওয়ার এই প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে হিমালয়ের তরাই অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্ব ভারতও। এরমধ্যে বঙ্গোপসাগর থেকে জলকণা ভর্তি বাতাস অসম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢুকে পড়ায় এখানেও আবহাওয়ার মেজাজ বদলে যায়।
আরও পড়ুন- বৈশাখের শুরুতেই প্রবল ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস, কলকাতার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে
আবহাওয়া দফতরের জারি করা রিপোর্টে পরিষ্কার করে দেখানো হয়েছিল যে ১৭ তারিখ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে কীভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে। পূর্বাভাস মেনেই ২০ তারিখ রাত থেকেই তাই শুরু হয়ে গিয়েছিল ঝোড়ো বাতাসের তাণ্ডব। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এতে তাপমাত্রা নামার সম্ভাবনা নেই। কারণ, পূর্বাভাসে কলকাতা এবং তার সংলগ্ন এলাকায় তাপমাত্রার সর্বনিম্ন মাত্রা থাকবে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের, সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টির জন্য তাপমাত্রার ছ্যাঁকাকে অনুভব না করা গেলেও, তাপমাত্রার পারদ খুব একটা নিচে নামার সম্ভাবনা নেই বলেও জানানো হয়েছে পূর্বাভাসের রিপোর্টে। ঝোড়ো বাতাসের জন্য কলকাতার বেশকিছু স্থানে গাছ উপড়ে পড়ার খবর মিললেও এতে ট্র্যাফিক চলাচল যে বিপর্যস্ত এমন কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন- উষ্ণায়নের জেরে বিলুপ্তির পথে চকোলেট, ৩০ বছর পর মিলবে না এই 'আনমোল স্বাদ'