সংক্ষিপ্ত

  • নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ফের মিছিল মমতার
  • এবার বিধান সরণী থেকে বেলেঘাট মিছিল তৃণমূলনেত্রীর
  • বাংলায় এনআরসি হবে না, দাবি মুখ্যমন্ত্রীর
  • ঝাড়খণ্ডের ফল নিয়ে কটাক্ষ বিজেপি-কে

ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে জবাব পেয়েছে বিজেপি। গণতন্ত্রে মানুষ বিজেপি-র দেশভাগের চক্রান্তকে জবাব দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে এনআরসি নিয়ে চতুর্থ প্রতিবাদ মিছিলে এভাবেই কেন্দ্রের শাসক দলকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যা বলছেন, তার উল্টো কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন মিছিলের শেষে মমতা দাবি করেন, ভোটার লিস্ট- এ নাম এবং অন্য়ান্য তথ্য ঠিক থাকলেই চিন্তার কোনও কারণ নেই। 

এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে এ দিন বিধান সরণী থেকে বেলেঘাটার গাঁধী ভবন পর্যন্ত মিছিল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিলের শেষে বেলেঘাটা গাঁধী ভবনে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর বলেন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এখান থেকে গাঁধীজি সারা দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার আন্দোলন করেছিলেন। হিন্দু- মুসলিম ঐক্যের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা এবং ঐক্যের বার্তা দিয়েছিলেন। প্রাণে যতক্ষণ রক্ত থাকবে, আমরা কেউ বাংলা, দেশ ভাগ হতে দেব না। হিন্দু- মুসলিম, শিখ- খ্রিস্টান, তফশিলি ভাই- বোনদের ভাগ হতে দেব না। সবাই এক সঙ্গে থাকব। 

সোমবারই ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতা হারিয়েছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রের পর গেরুয়া শিবিরের কাছে যা বড়সড় ধাক্কা। বিজেপি-কে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কেউ যদি মনে করে দেশে একমাত্র বিজেপি থাকবে, আর কেউ থাকবে না,তাহলে ভুল করছেন। আগামী দিনে আপনারা সরকারে থাকবেন কি না, সেটা মানুষ ঠিক করবে। কেউ কোথাও যাবে না।' ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সবাই আপনাদের চাকর- বাকর, নাকি আপনারা সবার চাকর- বাকর। ভোটার লিস্ট- এ সবাই নাম তুলবেন। দেখে নেবেন কোনও ভুল আছে কি না। নামে বা তথ্যে ভুল থাকলে সংশোধন করে নিন। আর কিছু করার দরকার নেই। 

আরও পড়ুন- ঝাড়খণ্ডেও ঝরে গেল বিজেপি সরকার, কী বলছেন অমিত চাণক্য শাহ

আরও পড়ুন- কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে সরকারি ভাবে সিএএ-এনআরসি নয়, রাহুলের প্রশংসা করে আবদার প্রশান্তের

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এসে উদ্বাস্তু, মতুয়াদের নাগরিকত্ব দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। এ দিন উদ্বাস্তুদের উদ্দেশে পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এতদিন লড়াই করে আপনারা দেশের নাগরিক। আজকে হঠাৎ বলে দিচ্ছে আপনারা দেশের নাগরিক নন। ১৯৭১, ১৯৪৭ সালে কি বিজেপি দল ছিল?' মমতা দাবি করেন, ১৯৮৫ সালে তিনিই উদ্বাস্তুদের জমির দলিল তৈরি করে দিয়েছেন। মতুয়াদের জন্য তাঁর সরকার মতুয়া ডেঙেলপমেন্ট বোর্ড, ঠাকুরচাঁদ কলেজ তৈরি করে দিয়েছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'বড়মা অসুস্থ হলেও এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেখেছে।'

কয়েক দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, আধার কার্ড দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। এ দিন ফের একবার সেই প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি-কে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'কিছুদিন আগে বলল আধার কার্ড না হলে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট হবে না। দেশের নাগরিক হবে না। এখন বলছে আধার কার্ড থাকলেও দেশের নাগরিক হবে না। তাহলে কি বিজেপি-র মাদুলি পরবে? তাহলে ছ' হাজার কোটি টাকা খরচ করে আধার কার্ড কেন করালে? আধার কার্ড বানিয়ে তথ্য হাতিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে সব টাকা তুলে নিয়ে চলে গেল। আজকে হঠাৎ করে বলছে দেশে এনআরসি হবে, নাগরিকত্ব আইন হবে।' মমতা দাবি করেন, উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আলাদা কোনও আইনেরই প্রয়োজন ছিল না। পছন্দ অনুযায়ী নাগরিকত্ব দিতেই এই আইন বিজেপি পাশ করেছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। 

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের স্পষ্ট করে দেন বাংলায় কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নেও বিজেপি-কে পাল্টা আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে ষোলজনকে গুলি করে মারা হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকেও বিমানবন্দরে আটকানো হয়। কিন্তু বাংলায় বিজেপি নেতারা এসে নির্বিঘ্নে মিছিল করে গিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন মুখ্য়মন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, তাহলে কোন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি  খারাপ? প্রসঙ্গত, সোমবার কলকাতায় মিছিল করেন বিজেপি-র কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডা। সেই মিছিলকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, 'কলকাতায় এসে গাড়িতে চড়ে বাবুরা মিছিল করে গেলেন। হাঁটতে গেলে বাবুদের কোমরে ব্যথা হয়। ক্ষমতা থাকলে আসুন, জনতার সঙ্গে হেঁটে দেখুন কার কত ক্ষমতা।' এ দিনের সভা থেকেই তৃণমূলনেত্রী জানিয়ে দেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি বিরোধী মিছিল করবেন তিনি।