সংক্ষিপ্ত
- করোনার জেরে বন্ধ করতে হল আরও এক নার্সিংহোম
- করোনার থাবায় কলকাতায় বন্ধ হয়েছে একাধিক হাসপাতাল
- সেই তালিকায় এই নার্সিংহোমটি নয়া সংযোজন
- বাঘাযতীন এলাকার এই নার্সিংহোম নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে
করোনার থাবায় এবার বন্ধ হল দক্ষিণ কলকাতার শহরতলি বাঘাযতীনের এক নার্সিংহোম। সূত্রে খবর সিনহা নার্সিংহোম নামে এই নার্সিংহোমে এক প্রসূতির করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরই ওই নার্সিংহোমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, ওই প্রসূতি ভর্তি হওয়ার সময় কোনও করোনা উপসর্গ ছিল না। এদিকে, এই ঘটনার জেরে বুধবার বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারকে ফিউমিলিয়েট করা হয়। কারণ, যে চিকিৎসক সিনহা নার্সিংহোমে ওই প্রসূতির সিজার করেছিলেন তিনি বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত। ওই চিকিৎসককেও আপাতত চোদ্দ দিনের কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে।
সিনহা নার্সিংহোমের অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী জানিয়েছেন, ৪ মে সকালে এক তরুণী গৃহবধূ বাড়ির লোকেদের সঙ্গে সেখানে আসেন। সন্তানসম্ভবা ওই গৃহবধূর সিজার-এর জন্য তারিখ দেওয়া হয় ১০ মে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে এখন করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে সরকার। সেই কারণে ওই গৃহবধূর নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য সুরক্ষা প্যাথলোজিক্যাল ল্যাবেও পাঠানো হয়। কিন্তু, সন্ধেবেলায় গৃহবধূর প্রবল প্রসব বেদনা ওঠে। সিনহা নার্সিংহোমে তাঁকে আনার পর চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখতে পান শিশু-র হার্টবিট অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। সেই মুহূর্তে অপারেশন করতে না পারলে গর্ভজাত সন্তানের খারাপ কিছু ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন চিকিৎসক। এরপর ৪ তারিখ রাতেই ওই গৃহবধূর সিজার করা হয়। অপারেশন-এর সময় চিকিৎসক পিপিই পড়েছিলেন বলেই দাবি করেছেন ওই নার্সিংহোম কর্মী। অপারেশন-এর পর প্রসূতি এবং সদ্যোজাত-র শরীর সুস্থ-ই ছিলো। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রিপোর্ট আসতেই আতঙ্ক ছড়ায় নার্সিংহোমে। কারণ, ওই প্রসূতি-র করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। নার্সিংহোমের ওই কর্মীর দাবি, এরপর স্বাস্থ্যভবনের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে প্রসূতি এবং সদ্যোতাজকে বাঙুর-এর কোভিড ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে প্রসূতিদের জন্য রাখা কোভিড ওয়ার্ডে আপাতত ওই প্রসূতি এবং তাঁর সদ্যোজাত সন্তান ভর্তি রয়েছেন।
আরও পড়ুন- কলকাতায় কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে থাকা ৬ বিএসএফ করোনা আক্রান্ত, কোয়রান্টিনে আরও ৫০
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে নতুন কোনও রোগী ভর্তি নেওয়া হয়নি। যে সব রোগী ছিলেন তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নার্সিংহোমের সমস্ত কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এমনকী, যে সব কর্মী ওই প্রসূতির সিজার-এর সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পথে সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের সকলকেই বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। নার্সিংহোম সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কলকাতা পুরসভা থেকে নার্সিংহোম স্যানিটাইজেশনের জন্য দলও পাঠানো হয়। নার্সিংহোমের বাকি কর্মীরাও সেখানেই আইলোশন করছেন বলে খবর।
আরও পড়ুন-শুধু কলকাতাতেই করোনা আক্রান্ত ৭০০, মহানগরকে ঘিরে ঘুম ছুটছে রাজ্য়বাসীর
এদিকে, এই প্রসূতির সিজার যিনি করেছিলেন তিনি বাঘাযতীন হাসপাতালের চিকিৎসক। সেখানকার প্রসূতি বিভাগে কর্মরত। মঙ্গলবার ওই চিকিৎসক বেশকিছু সিজারও করেন বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। মঙ্গলবার রাতে প্রসূতির করোনা রিপোর্টের খবর পান ওই চিকিৎসক। এরপর তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরকে জানান বিষয়টি। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশে ওই চিকিৎসককে বাঘাযতীন হাসপাতালের সুপার ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলেন। এই ঘটনায় অবশ্য আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাঘাযতীন হাসপাতালে। কারণ, ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে এসেছেন প্রসূতি বিভাগে কর্মরত নার্স এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা। ওই গ্রুপ ডি কর্মীরা আবার বাঘাযতীন হাসপাতালের চারতলায় একটি ঘরে একসঙ্গে থাকে। এই ঘটনায় পরে বাঘাযতীন হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারকে ফিউমিলিয়েশন করা হলেও প্রসূতি ওয়ার্ডগুলোতে তা করা হয়নি। এতে বেশকিছু নার্স আতঙ্কে রয়েছেন। বাঘাযতীন হাসপাতালের সুপার গৌরব রায় অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।