সংক্ষিপ্ত
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের (Bidhan Nagar Police Commissionerate) রাজারহাট থানা (Rajarhat Police Station) এলাকায় অনলাইনে অ্যাপলের স্মার্ট ওয়াচ (Apple Smart Watch) বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারিত হলেন এক মহিলা। সেই জালিয়াততে ধরতে গিয়ে খোঁজ মিলল বেনামি সিমকার্ড ব্যবসায়ীরও।
অনলাইনে জিনিসপত্র কেনা-বেচা (Online Shopping) এবং অর্থের লেনদেন (Online Transaction) , বর্তমানে রোজকার জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে। নোট বাতিলের সময়, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও ডিজিটাল লেনদেনের (Digital Transaction) উপরই জোর দেওয়া হয়েছিল। আর, কোভিড-১৯ মহামারি (COVID-19 Pandemic) আসার পর তো, যাঁরা অনলাইন কেনাবেচায় সড়গড় ছিলেন না, তাদেরকেও বাধ্য হয়েই ঝুঁকতে হয়েছে অনলাইন বাজারে। আর এই অনলাইন কেনা-বেচার বিস্ফোরণের মধ্যেই, ফাঁদ পেতে বসে আছে কিছু অসৎ মস্তিষ্ক। গ্রাহকদের সামান্য অসতর্কতারও সুযোগ নিতে ছাড়ছে না তারা। আর এই অনলাইন জালিয়াতির তদন্ত করতে গিয়েই, একসঙ্গে জোড়া অপরাধীর সন্ধান পেল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের (Bidhan Nagar Police Commissionerate) পুলিশ।
রাজারহাট থানার (Rajarhat Police Station) এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা, তাঁর নিজের ব্যবহার করা অ্যাপল সংস্থার একটি স্মার্ট ওয়াচ (Apple Smart Watch) বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন অনলাইনে। তাঁর সেই বিজ্ঞাপণে সাড়াও দিয়েছিলেন এক 'ইচ্ছুক ক্রেতা'। দুই তরফে দরদাম করে, দাম ঠিক হয়েছিল ২৩,০০০ টাকা। ক্রেতা বেশে থাকা প্রতারক জানিয়েছিলেন তিনি স্কেডিউলড এনইএফটির (Scheduled NEFT) মাধ্যমে ওই টাকা দেবেন। সেই মতো ঘড়ি হাত বদলও হয়। কিন্তু, এরপরই ওই মহিলা দেখেছিলেন, তাঁর প্রাপ্য টাকা আসেনি। তাঁর তো মাথায় হাত - ঘড়িও গেল, টাকাও পেলেন না। এরপরই তিনি রাজারহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
আরও পড়ুন - টোটোচালকের দেওয়া পার্সেল খুলতেই বিস্ফোরণ, আহত ৩, ভয়াবহ ঘটনা উত্তর দিনাজপুরে
আরও পড়ুন - মালদহে নাকা চেকিংয়ে গ্রেফতার ১১ কেজি মাদক-সহ পাচারকারী, পলাতক অপর সঙ্গীর খোঁজে পুলিশ
এই মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় রাজারহাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর পঙ্কজ ঘোষকে। কাজটা সহজ ছিল না। তবে, বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে, শেষ পর্যন্ত খোঁজ মেলে ওই জালিয়াতের। পুলিশ জানিয়েছে, তার নাম, গৌতম সাহানী। বাড়ি বাগুইআটিতে (Baguiati)। পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে, এর আগে একইভাবে লোক ঠকিয়ে, সে অন্তত ২ টি অ্যাপলের স্মার্ট ওয়াচ এবং এক জোড়া অ্যাপলের ইয়ারপড (Apple Ear Pod) হাতিয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে মেলে কেউটের সন্ধানও। পুলিশ জানতে পারে, গৌতম সাহানী জালিয়াতির জন্য বেনামি প্রিঅ্যাক্টিভেটেড সিম কার্ড ব্যবহার করত। পুলিশি তদন্তে খোঁজ মেলে, ওই বেনামি সিম কার্ডের বিক্রেতা, কাশীপুরের (Kashipur) বাসিন্দা ধনরাজ সাউয়ের। তার কাছ থেকে পুলিশ ৪৫০টি বেনামি সিমকার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে।
কীভাবে এই জালিয়াতি করত গৌতম সাহানী? পুলিশ জানিয়েছে তার জালিয়াতির প্রক্রিয়াটি ছিল একেবারেই সহজ সরল। ফাঁদ পাতা ছিল তার অর্থ প্রদানের পদ্ধতির মধ্য়েই সাধারণ, এনইএফটি অর্থাৎ ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে, যখন সঙ্গে সঙ্গে অর্থ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, তখন স্কেডিউলড এনইএফটিতে অন্তত ২৪ ঘন্টা সময় লাগে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতে। গৌতম সাহানী, জিনিস হাতে আসার পরই ব্যাঙ্কে ফোন করে শিডিউলড এনইএফটি-টা ক্যানসেল করে দিত। ফলে বিক্রেতা আর টাকা পায় না। পুলিশ আপাতত তার কাছ থেকে ১৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং ডেবিট কার্ড পেয়েছে। সব কটিই সিল করে দেওয়া হয়েছে।