সংক্ষিপ্ত
- কলকাতা মেট্রোয় ভয়াবহ দুর্ঘটনা
- দরজায় হাত আটকে মৃত্যু হয় যাত্রীর
- মেট্রো রেলের ভূমিকায় উঠছে প্রশ্ন
- যাত্রীদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত এই ঘটনা থেকে
মেট্রোর নতুন রেকের গাফিলতি, নাকি মেট্রোর চালক- গার্ডের ভুলেই শনিবার ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেল মেট্রো রেলে? এর পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও। কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, শনিবারের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কি মেট্রো রেলের যাত্রীরাও এবার একটু সতর্ক হবেন?
আরও পড়ুন- শুরু থেকেই বিভ্রাট, শনিবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কি ভিলেন মেট্রোর নতুন রেক
ব্যস্ত সময় হোক বা দিনের অন্যান্য সময়, অনেক যাত্রীরই প্রবণতা থাকে শেষ মুহূর্তে প্ল্যাটফর্মে এসে যেনতেন উপায়ে মেট্রোয় ওঠা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেখে কোনওক্রমে শরীরের একটি অংশ বা হাতে থাকা ছাতা, ব্যাগের মতো জিনিস এগিয়ে দেন যাত্রীরা। এর ফলে বাধা পেয়ে দরজা বন্ধ না হয়ে ফের খুলে যায়। আর সেই সুযোগেই ট্রেনে উঠে পড়েন সংশ্লিষ্ট যাত্রী। ভিড়ের সময় ট্রেনের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেখেও দরজার সামনে থেকে সরে আসতে চান না অনেকে। গোটা ট্রেনের দরজা খুলে ফের বন্ধ করে ট্রেন ছাড়তে বেশ কিছুটা সময় নষ্ট হয়। এর জেরে ওই ট্রেনটি যেমন স্টেশন ছাড়তে দেরি করে, তেমনই পিছনের ট্রেনগুলিও আটকে যায়।
আরও পড়ুন- কলকাতা মেট্রোর দরজা কেলেঙ্কারি, একের পর এক ঘটনাতেও ফেরেনি হুঁশ
যাত্রীদের স্বাভাবিক ধারণাই থাকে, কোনওভাবে ট্রেনের দরজার মধ্যে হাত বা শরীর ঢুকিয়ে দিতে পারলে সেরকম বিপদের কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রে সামান্য আঘাত লাগার ঘটনা ঘটলেও এইভাবে ট্রেনে ওঠার ফল যে প্রাণঘাতী হতে পারে, তা হয়তো ভাবেননি কেউই। অতীতে অবশ্য যাত্রীর শরীর বা ব্যাগ বেরিয়ে থাকা অবস্থাতেও সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে ছুটেছে মেট্রো। কিন্তু তার পরেও অনেক যাত্রীই সতর্ক হননি।
আরও পড়ুন- দরজায় ঝুলছেন যাত্রী, কলকাতা মেট্রোয় বেনজির দুর্ঘটনায় মৃত্যু বৃদ্ধের
শনিবার সজলবাবু ট্রেনে ওঠার মুহূর্তে ঠিক কী হয়েছিল, তা তদন্তস্বাপেক্ষ। প্রশ্ন উঠছে, সজলবাবু যদি শেষ মুহূর্তেও ট্রেনে উঠতে গিয়েও দরজায় আটকে যান, সেক্ষেত্রে কেন নিয়ম মেনে আরপিএফের কোনও কর্মী স্টেশনের নির্দিষ্ট জায়গায় ছিলেন না? তাহলে হয়তো তিনিই চালককে সতর্ক করতে পারতেন। কেন দরজা বন্ধ না হওয়া সত্ত্বেও চালক ট্রেন চালিয়ে দিলেন, তারও তদন্ত শুরু হয়েছে।
এই দুর্ঘটনার পরেও কলকাতা মেট্রোর এই সব গাফিলতি বদলাবে কি না, তাও সময় বলবে। কিন্তু শনিবারের ঘটনা এটা বুঝিয়ে দিল, এবার যাত্রীদের সতর্ক না হয়ে কোনও উপায় নেই। বয়স ভার এবং আর্থিক ক্ষতির ভার কাটিয়ে কলকাতার মেট্রো পরিষেবায় এর পরেও বড় কোনও বদল আসবে, তা আশা না করাই ভাল। হয়তো কয়েকদিন মেট্রো স্টেশনগুলিতে বেশি নজদারি চলবে, প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢোকা এবং বেরনোর সময়ে আরও সতর্ক হবেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হবে না। ফলে, বিভ্রাটে ভরা মেট্রোর রেক, ড্রাইভার, গার্ড বা আরপিএফ কর্মীদের উপর ভরসা না করে যাত্রীদেরই সতর্ক হওয়া ছাড়া গতি নেই।
ব্যস্ত সময়ে এখন পাঁচ, ছ' মিনিট অন্তর মেট্রো পাওয়া যায়। তার পরেও অনেক যাত্রীই তাড়াহুড়ো করে ট্রেন ধরার চেষ্টা করেন বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ মেট্রো কর্তপক্ষের। মেট্রোর নিজস্ব সমস্যার পাশাপাশি জোর করে দরজা আটকে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠা মেট্রো পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটার অন্যতম বড় কারণ। এর জেরে রেকগুলিরও যে ক্ষতি হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাত্রীদের এই প্রবণতা আটকাতে পরবর্তী ট্রেন কতটা দূরে আছে, মাঝেমধ্যে সেই ঘোষণাও করা হয় মেট্রো স্টেশনগুলিতে। শনিবার দুর্ঘটনার যাবতীয় দায় নিয়েও মেট্রো রেলের জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'যাত্রীদের আবারও অনুরোধ করব, দয়া করে ঝুঁকি নিয়ে এভাবে ট্রেনে উঠবেন না।'