প্রতিবছর পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। অথচ এই মারণব্যাধি নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোন হেলদোল নেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেরকম ঘাড় গুঁজে বসে থেকে কাজে মগ্ন তেমনই রয়েছে। তবে গবেষণা বলছে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকাও প্রাণঘাতী হতে পারে।
বর্তমান প্রজন্মের জীবনের একটি অধিকাংশ সময়ই কাটে বসে থেকে- অফিসের ডেস্কে, বাড়িতে সোফায় বা খাটে দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। দৈনন্দিন এই শারীরিক সক্রিয়তার অভাব ধীরে ধীরে ক্ষতী করছে শরীরের। সম্প্রতি, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইরমিংগার মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকেরা প্রকাশ করেছেন এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা, যা দৈনিক মাত্র ৩০ মিনিট হালকা শারীরিক সচলতা হৃদরোগের ঝুঁকি ৬১ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে বলে দাবি করছে।
কী বলছে গবেষণা?
এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন মোট ৭,৯৮৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি। গবেষকেরা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, বসে থাকার সময় এবং শরীরচর্চার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, যারা দিনে ১০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় বসে কাটান এবং প্রায় কোনো হাঁটাহাঁটি করেন না, তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আবার যারা দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হালকা শরীরচর্চা করেন—যেমন ঘরের কাজ, সিঁড়ি বাওয়া, বা হালকা হাঁটা—তাদের মধ্যে এই ঝুঁকি প্রায় ৬১ শতাংশ কম বলেই চোখে পড়েছে।
এই গবেষণার মুখ্য গবেষক কিথ ডায়াজ বলেন, “বেশি পরিশ্রমের ব্যায়াম নয়, শুধু একটু সচল থাকলেই অনেকটা সুরক্ষিত থাকা যায়। যাঁরা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন, তাঁদের প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার উঠে দাঁড়ানো বা হাঁটা উচিত।”
তবে কেন এমন হয়?
বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করছেন, দীর্ঘ সময় বসে থাকলে শরীরে কিছু মারাত্মক পরিবর্তন ঘটে। রক্তচলাচল ধীর হয়ে যায়, বিপাকক্রিয়া কমে যায় এবং শরীরে প্রদাহের প্রবণতা বাড়ে। এই সমস্ত পরিবর্তন হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলস্বরূপ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু দিনে কিছুটা সচল থাকলেই এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
তবে কী করণীয়?
অফিসে বা বাড়িতে দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে কাটানো মোটেও ভালো নয়। শরীর চর্চা মানেই যে ঘাম ঝরিয়ে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন করতে হবে এমনটি নয়। শুধু খানিকটা সচেতন হন। গবেষণা বলছে, ভারী বা দীর্ঘক্ষণ শরীরচর্চার প্রয়োজন নেই। জীবনধারায় কিছু ছোট ছোট পরিবর্তনেই অনেক বড় পার্থক্য তৈরি হতে পারে। যেমন-
* লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন।
* কাছাকাছি কোনো গন্তব্যে গাড়ির বদলে হেঁটে যাওয়া আসা করুন।
* কাজের ফাঁকে বা ফোনে কথা বলার সময় বসে না থেকে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলুন।
* দীর্ঘক্ষণ বসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ হলে প্রতি ঘণ্টায় ৫-১০ মিনিট উঠে হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করুন।


